বেশি লাভের আশায় দেশের বিভিন্ন স্থানে এবার তেল জাতীয় ফসল সরিষার ব্যাপক চাষ করেছেন কৃষকরা। সরিষার ফলনও বেশ ভালো। কৃষি বিভাগের নানাবিধ পরামর্শ, সার বীজ প্রদান এবং চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে ডেস্ক রিপোর্ট-
ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাটের ফকিরহাটে অনেক জমিতে এবার তেল জাতীয় ফসল সরিষার চাষ করায় বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানান, এ বছর উপজেলায় ১৬৩ হেক্টর জমিতে এক হাজার কৃষক এই সরিষার চাষ করছেন। এবার লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি উৎপাদন হবে এমনটাই আশা করছেন কর্মকর্তারা। উপজেলা কৃষি বিভাগ তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনের জন্য স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে নানা প্রকার কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসাবে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের সরিষা চাষের ওপর প্রশিক্ষণ পরামর্শ সার বীজসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করছেন। সে অনুযায়ী বিভিন্ন বিলসহ পতিত জমিতে সরিষার চাষ করা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন ঘেরের পাড়, নদীর তীরেও সরিষা চাষ করতে দেখা গেছে।
বিভিন্ন বস্নকের কৃষক ইমরান শেখ, মিঠুন দাস, তাপস দাস, সিরাজুল ইসলাম, আব্দুর সাত্তার শেখ, রেজাউল ইসলাম, মো. শামীম রেজাসহ অনেক কৃষক জানান, একই জমিতে বারবার একই ফসল চাষ করলে জমির উর্বতা শক্তি হারিয়ে ফেলে। তাই কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সরিষার চাষ শুরু করেন তারা।
কৃষক নিমচাদ পাল জানান, বিনা চাষে সরিষা লাগিয়েছেন তিনি। আমন ধান থাকা অবস্থায় সরিষা ছড়িয়ে দেন জমিতে। এই জমিতে বোরো ধানও লাগাবেন তিনি। এভাবে তিনি এক বছরে একই জমি থেকে একটি বাড়তি ফসল ঘরে তুলবেন।
মৌভোগের কৃষক আজহার আলী শেখ জানান, তিনি এবার ভৈরব নদীর পাড়ে তিন বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। জমিতে সরিষার ফলন খুব ভালো হয়েছে।
বিভিন্ন বস্নকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হবে। এতে নিজেদের তেল খৈলসহ নানা চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব হবে।
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এখনো আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিরা ভালো ফলনের আশা করছেন। ভালো ফলন ও ন্যায্য দাম পাওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে সরিষা চাষে চাষিদের উৎসাহিত করছে ফকিরহাট কৃষি বিভাগ। সহজ চাষ পদ্ধতির কারণে চাষিরা তাদের জমিতে সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আমন ধান কাটার পর তারা জমিতে সরিষা চাষ করেন। সরিষা কাটার পর একই জমিতে তাদের প্রধান ফসল বোরো ধান চাষ করবেন। যাদের জমিতে শুধু আমন আর বোরো দুটি ফসল হয় তারা সহজেই এই পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারবেন। তিন মাসের মধ্যে এই ফসল ঘরে তোলা যায়। তাই সবাইকে ধানের পাশাপাশি সরিষা চাষে পরামর্শ দিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
ফকিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপন দাশ বলেন, কৃষিতে আমাদের অভাবনীয় সাফল্য রয়েছে। তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হলে এক ইঞ্চি জমিও ফেলে রাখলে হবে না। তাই কৃষিকে আরও বেগবান করতে হলে সবার প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। এ বছর উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি আশাবাদী।
দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার দুর্গাপুরে এবার অন্যান্যবারের তুলনায় সরিষার আবাদ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা। উপজেলায় এবার জমির পর জমিতে সরিষার আবাদ দেখা গেছে।
গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৩২০ হেক্টরে সরিষার আবাদ হয়েছিল। এ বছর প্রায় ৫শ' হেক্টরে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় একশ' হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা উৎপাদিত হবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের বারমারি, ভবানীপুর, কুলস্নাগড়া ইউনিয়নের বিজয়পুর, বামনপাড়া, কাকড়াকান্দা, গাওকান্দিয়া ইউনিয়নের জাগিরপাড়া, নাওদাড়া চন্ডিগড় ইউনিয়নের নোয়াগাঁও, ফুলপুর, কেরনখলা, ফেঁচিয়া গ্রামের কৃষকরা সরিষা আবাদ করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে দুর্গাপুর উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নেই দুই হাজার ৫শ' কৃষককে বিনামূল্যে প্রণোদনার সরিষা বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। কৃষি প্রণোদনা দেওয়ার কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর সরিষার ফলনও বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কৃষক হযরত বেপারি বলেন, 'কৃষিবান্ধব সরকারকে ধন্যবাদ জানাই আমাদের প্রণোদনা দেওয়ার জন্য। আমরা বিনামূল্যে সার, বীজ পাওয়ায় সরিষা আবাদে আগ্রহ হয়েছি। শুধু তাই নয়, সামনের মৌসুম থেকে আমাদের এলাকার কৃষকরা মধু চাষেও আগ্রহ প্রকাশ করবেন।'
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানান, এ বছর আবহাওয়া সরিষা আবাদের অনুকূলে ছিল। তাই বিভিন্ন এলাকার কৃষক সরিষার আবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সরিষার বাম্পার ফলন হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার নিপা বিশ্বাস জানান, এ বছর উপজেলায় প্রায় ৫শ' হেক্টরে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব সময়ই কৃষকদের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।