পৌষসংক্রান্তিতে মাছ ও সীতাতলার মেলা
প্রকাশ | ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
পৌষ সংক্রান্তিতে বিভিন্ন স্থানে 'পৌষ মেলা', 'মাছের মেলা' ও 'সীতাতলার মেলা' অনুষ্ঠিত হয়েছে। কুড়িগ্রামের রাজারহাটে লাঠিয়ালে পাঠে মহাদেব পূজা ও পৌষ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর-
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও অনুষ্ঠিত হয়েছে পইলের মাছের মেলা। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল বাজারের পাশে অবস্থিত মাঠে এ মেলাটির আয়োজন করা হয়। প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে এ মেলার আয়োজন করে থাকেন আয়োজকরা। এ মেলাটি ঘিরে পইলসহ আশপাশের গ্রামগুলোর সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। যা প্রায় দুই শতাধিক বছর ধরে চলে আসছে। এ মেলায় শুধু পইলবাসী নয়, দেশীয় প্রজাতির বড় বড় মাছ দেখতে সিলেট, মৌলভীবাজর, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ অন্যান্য জেলা থেকেও প্রচুর লোকজন এসে ভিড় জমান। সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া মেলা চলবে আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত।
পৌষ সংক্রান্তির এ মেলায় বোয়াল, বাঘাইর, বড় আকৃতির আইড়, চিতল, গজার, রুই, কাতলসহ নানা প্রজাতির আকর্ষণীয় মাছ নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। এবার মেলায় ৭৫ কেজি ওজনের সবচেয়ে বড় বাঘাইর মাছটি নিয়ে এসেছেন আব্দুল খালেক নামে এক মাছ বিক্রেতা। যে মাছটি সুরমা নদী থেকে ধরে আনা হয়েছে। যার দাম হাকাচ্ছেন তিনি দেড় লাখ টাকা।
পইল বাজার কমিটির সভাপতি ও পইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঈনুল হক আরিফ জানান, 'পইল মাছের মেলা আমাদের জন্য ঐতিহ্য। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বাগ্মী নেতা বিপিন চন্দ্র পালের জন্মভূমি পইল গ্রামে প্রতি বছর এ মেলা হয়ে থাকে।'
ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রাম ফটিকছড়ির বারমাসিয়া গ্রামে তৌহিদুল আনোয়ার হাই স্কুলের উদ্যোগে ৪ দিনব্যাপী পৌষ মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। সোমবার সকালে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীতের তালে তালে পতাকা উত্তোলন, বেলুন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা উড়ানোর মধ্য দিয়ে মেলার উদ্বোধন করা হয়।
আহমেদ শামসুল আনোয়ার ফাউন্ডেশনের সভাপতি এ.এস.এম কামাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আনোয়ার পাশা (যুগ্ম-সচিব)। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কাউসার বেগমের স্বাগত বক্তব্যের পর বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি ফটিকছড়ি ইউএনও মোজাম্মেল হক চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান সালামত উলস্নাহ চৌধুরী শাহীন, ভূজপুর থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান, মেলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও বিদ্যালয় সভাপতি সুজাউদ্দীন জাফর প্রমুখ।
আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর আত্রাইয়ে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী 'সীতাতলার মেলা'। উপজেলার সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে নিভৃত এক পলস্নী গ্রাম জামগ্রাম। গ্রামটি পলস্নীতে হলেও এ মেলার কারণে গ্রামের খ্যাতি রয়েছে উত্তরবঙ্গ জুড়ে। প্রতিবছর বাংলা পৌষ মাসের শেষ তারিখে এখানে মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
কথিত আছে, শত শত বছর পূর্বে রামচন্দ্র তার স্ত্রী সীতা রাণীকে এখানে বনবাস দিয়েছিলেন। আর সীতা বনবাসের এক পর্যায় জামগ্রামের বিশাল বনে একটি প্রকান্ড বটগাছের নিচে আশ্রয় নেন এবং বাকি সময় এ গাছটির নিচেই নাকি তিনি কাটিয়ে দেন। এর পাশে ছিল এক বিরাট ইন্দারা। সীতা এই ইন্দারার পানিতেই নাকি স্নান করতেন।
কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই বটগাছ ও ইন্দারাটি আর নেই। এ কারণে তদানীন্তন সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা সীতার নামে ওই বটগাছটির নিচে পূজা শুরু করেন। পরবর্তীতে এটি আর শুধু পূজার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। আস্তে আস্তে বৃহৎ মেলা অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায়। আর সীতার নামেই মেলার নামকরণ করা হয়েছে 'সীতাতলার মেলা'। শুরুর দিকে এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের মেলা থাকলেও বর্তমানে আর তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন এ মেলা হিন্দু-মুসলিম সবার এক মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।
এদিকে এ মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামগুলোতেও উৎসবের আমেজ পড়ে গিয়েছে। সরকারিভাবে মেলা একদিন হওয়ার কথা থাকলেও চলে বেশ কয়েকদিন ধরে।
আত্রাই থানার ওসি জহুরুল ইসলাম বলেন, মেলায় আগত লোকজনের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক সেখানে পুলিশ মোতায়েন থাকবে।