দিনাজপুরে গত দশদিনের ব্যবধানে সব ধরনের ধানের দাম বস্তা প্রতি ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। জেলায় ধানের বাজারে দুই মণে একবস্তা হিসেব করা হয়। ধানের দাম বাড়ায় প্রান্তিক কৃষকরা খুশি হয়েছেন। একই সময়ে ধানের সঙ্গে পালস্না দিয়ে বেড়েছে চালের দামও।
দিনাজপুর শহরের বাহাদুর বাজারে চাল ব্যবসায়ীরা জানান, চালের দাম বস্তা প্রতি মান ও প্রকারভেদে (৫০ কেজিতে বস্তা) বেড়েছে ১৫০ থেকে ৪৫০টাকা পর্যন্ত। বাজারে কয়েকজন ব্যবসায়ী ও কৃষক জানান, শুক্রবার এই বাজারে ব্রি-৫১ জাতের ধান প্রতিবস্তা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪৫০ টাকা দরে। দশদিন আগেও এই ধানের বাজার গেছে ২ হাজার ২৫০ টাকা। এভাবে বিআর-১১ ধান প্রতিবস্তা ২২৫০ টাকার বিপরীতে ২৪৫০, ব্রি-৪৯ ধান ২১৫০টাকার বিপরীতে ২৪৪৫, গুটি স্বর্ণ ২২০০ টাকার বিপরীতে ২৪২০, সুমন স্বর্ণ ২২৫০ টাকার বিপরীতে ২৫০০ এবং জিরা (সুগন্ধী) ধান বিক্রি হয়েছে প্রতিবস্তা ৪ হাজার ৮০০টাকার বিপরীতে ৫ হাজার ৩০০টাকা দরে।
সদর উপজেলার কৃষাণ বাজার থেকে আসা কৃষক মাজেদুর রহমান শুক্রবার হাটে সাত বস্তা (১৪মণ) জিরা জাতের ধান ৫ হাজার ৩০০টাকা হারে মোট ৩৭ হাজার ১০০টাকায় বিক্রি করেন। হিসেব অনুযায়ী প্রতিমনের দাম পেয়েছেন ২ হাজার ৬৫০টাকা। উৎপাদনের খরচের হিসাব করে মাজেদুর জানান, এক বিঘা জমি চাষ বাবদ খরচ হয়েছে ২ হাজার ৮০০টাকা, রোপণ খরচ ২ হাজার, সার ও কীটনাশক ৬ হাজার ৪০০, কাটামাড়াই ৪ হাজার, ভ্যানভাড়া ৩৫০, হাট খাজনা ১৪০টাকা এবং বর্গা বাবদ জমির মালিককে দেওয়া ২০হাজার টাকাসহ তার মোট খরচ পড়েছে ৩৫ হাজার ৬৯০টাকা। এক বিঘায় ধান পেয়েছেন সাড়ে দশ বস্তা(২১মণ)। প্রাপ্ত ধান বিক্রি করেছেন ৫৫ হাজার ৬৫০টাকায়। অর্থাৎ বিঘা প্রতি লাভ পেয়েছেন ১৯ হাজার ৯৬০টাকা।
কৃষক বিশ্বনাথ রায় বলেন, 'ধানের বাজার ভালো পাইছি। কিন্তু লাভের টাকাতো খুঁজি পাওয়া যায় না। একবছর আগে যে জমি বর্গা নিছিলাম ১০-১২হাজার টাকায়। সেই জমি এখন বর্গা নিতে হচ্ছে ২২-২৫ হাজার টাকায়। খোঁজ নিয়ে দেখেন কৃষকের ঘরে ধান নাই। বেঁচে দিয়েছে। কারণ ধান বিক্রির টাকায় আলু ও ভুট্টা লাগানোর খরচ যোগাড় করতে হয়।'
ব্যবসায়ীরা জানান, গত সাতদিন আগেও গুটি স্বর্র্ণ চাল প্রতি বস্তা(৫০কেজি) ২ হাজার ১০০টাকা দাম ছিল। সেইচাল এখন ২ হাজার ৪০০টাকা বস্তা। এভাবে সুমন স্বর্ণ ২১৫০ থেকে ২৫০০, ব্রি-২৮ চাল ২৬০০ থেকে ২৯০০, ব্রি-২৯ চাল ২৩০০ থেকে ২৬০০ এবং মিনিকেট (চিকন চাল) বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা ২৯৫০ থেকে ৩৪০০টাকা দরে। বাজারে মিনিকেট(চিকন চাল) চালের চাহিদা বেশি।
বাজারে চাল কিনতে আসা আকরাম হোসেন বলেন, কয়েকদিন আগেও মিনিকেট চাল কিনেছেন ৫৯টাকা কেজি। সেই চাল এখন কিনলেন ৬৮টাকা কেজিতে। এভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে চলবের কিভাবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ অটো, মেজর ও হাস্কিং মিল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, 'ধানের দাম বাড়লে চালের দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। ব্যবসায়ী নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করে আজকাল অনেকেই স্টক বিজনেসের নামে এসব ভোগ্য পন্য মজুদ করছেন। বর্তমানে মিলমালিকদের চাইতে স্টক ব্যবসায়ীদের গুদাম ঘরে বেশি ধান আছে। পরে মিলমালিকরাই এসব ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে আরও বেশি দামে কিনছেন। চালের বাজার বেশি হবার এটাই মুল কারণ।