কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর নাওডাঙ্গা ব্রিজ এবং ধামরাইয়ের বংশী নদীর ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকো বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। নতুন ব্রিজ নির্মাণ বা পুরনো ব্রিজ ও সাঁকো সংস্কারে উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। তাই এলাকাবাসী জনস্বার্থে ওই দুই স্থানে ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ব্রিজ তো নয়, যেন মরণফাঁদ। ব্রিজে নেই দুই পাশের রেলিং ও পাটাতনের অনেক বড় জায়গা জুড়ে ভেঙে গেছে। দেখলেই ভয়ে আঁতকে ওঠে বুক। বন্ধ রয়েছে ভারি যান চলাচলও। শুধু পাটাতন নয় বিশাল গর্ত রয়েছে ব্রিজের মেঝেতেও। আশঙ্কা রয়েছে যে কোনো মুহূর্তে ধ্বসে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটানার। এতে করে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ১০ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। তবুও পুরাতন এই ব্রিজটি ভেঙে নতুন ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের আলেপের তেপতি থেকে সন্তোষপুর, নাওডাঙ্গাপাড়া, কুটি নাওডাঙ্গা স্কুলেরহাট, তালেবেরহাট হয়ে বয়তুলস্নার মোড়ের মাঝামাঝি নাওডাঙ্গা ও নিমকুশ্যা বিলের ওপর নির্মিত এই ব্রিজ। ব্রিজের ওপর দিয়ে যাতায়াত করেন নেওয়াশী, রায়গঞ্জ, সন্তোষপুর, রামখানা ইউনিয়নের ব্যাপারীহাট, নিলুরখামার, গোপালপুর, ধনী গাগলা, শিয়ালকান্দা, আমতলা, উত্তমখানা, গাগলা, তালেবেরহাট, কুটি নাওডাঙ্গা এলাকাসহ ৪ ইউনিয়নের প্রায় ১০ গ্রামের ২০ হাজার মানুষ। এছাড়াও সন্তোষপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, সন্তোষপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুটি নাওডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মন্ডলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সৃষ্টি মডেল পাবলিক স্কুল ও সূর্যমুখী শিশু নিকেতনসহ কয়েকটি স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। রাতের অন্ধকারে পথ চলতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। ব্রিজের করুণ অবস্থা হওয়ায় ভয়ে স্কুলেও যেতে চায় না কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। যেন এসব এলাকার মানুষের ভাগ্যের বিপরীতে এই ব্রিজ। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি কাজ, হাটবাজার করাসহ বাচ্চাদের স্কুলে যাতায়াত বড় কষ্টের। তাদের দাবি অবিলম্বে ব্রিজটি ভেঙে দিয়ে নতুন ব্রিজ নির্মাণ করে ব্রিজ থেকে আলেপের তেপতি সড়কের তালতলা পর্যন্ত কাঁচা রাস্তাটির পাকাকরণের জোড় দাবি জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় আনোয়ার হোসেন, ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মিজু, হারুন-উর রশিদ, হাসেম আলি জানান, এ ব্রিজ দিয়ে ভারি কোনো যানবাহন পার করা যায় না। কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য হাটবাজারে নিয়ে যাওয়াও কষ্টসাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে ব্রিজ থেকে সন্তোষপুর নাওডাঙ্গাপাড়া হয়ে তালতলা পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তা কাঁচা থাকায় বৃষ্টিতে হাঁটুকাদা জমে চলাচল করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। তবুও সুদৃষ্টি নেই কর্তৃপক্ষের।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ ইকবাল রাজিব (অ.দা.) জানান, 'বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে সরেজমিন তদন্ত করে দেখতে হবে কী অবস্থা। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, ঢাকার ধামরাইয়ের ছোট কালামপুর-দেপাশাই কারাবিল এলাকার মধ্যবর্তী বংশী নদীর ওপর ঠিকাদারের নির্মিত বাঁশের সাঁকোটি মাঝখানে ধসে যাওয়ায় এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। যে কোনো সময় সাঁকোটি ভেঙে পড়ে কারো মুতৃ্যর কারণ হতে পারে। তাই এলাকাবাসীর দাবি দ্রম্নত বাঁশের সাঁকোটি মেরামত করে জনসাধারণকে ঝুঁকিমুক্ত করা।
জানা গেছে, ধামরাইয়ের সুতিপাড়া ইউনিয়নের ছোট কালামপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে সোমভাগ ইউনিয়নের দেপাশাই কারাবিল এলাকার মধ্যবর্তী বংশী নদীর ওপর প্রায় ১৫-১৬ বছর আগে ৭৪ মিটার দৈর্ঘ্যের আট ফুট প্রস্থ নিচু করে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর থেকেই সেতুটির নিচ দিয়ে নৌকা বা বালুবাহী কার্গো চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপরও কার্গো চলার চেষ্টা করলে মাঝে মধ্যেই ধাক্কা লেগে সেতুটি ক্ষতির মুখে পড়ে। এরপর গত বছর ওই পুরনো সরু সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রম্নয়ারি ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৬৬ হাজার ৩৫৮ টাকা ব্যয়ে ৭২ মিটার দৈর্ঘ্য একটি সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মেসার্স কামারজানী-আনোয়ারা (জেভি) নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ২০২৩ সালের ২৪ জুন সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সোমবার পর্যন্ত কাজই শুরু হয়নি। তবে গত ৯ মাস আগে পুরনো সরু সেতুটি ভেঙে পাশেই একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে দিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ওই বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন দেপাশাই, কারাবিল, ভালুম, শৈলান, পথহারা, আলোকদিয়া, চাপিল, নওগাও, কালামপুর, গোয়ালদী, কাশিপুরসহ ১২-১৩টি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে থাকে। বর্তমানে সাঁকোটি মাঝখানে ধসে পড়েছে। এতে চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সাঁকোটি। আর কেউ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করলেও যে কোনো সময় সাঁকোটি ধসে পড়ে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটতে পারে বলে স্থানীয়রা জানান।
সেতুটির দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান বলেন, কাজটি শুরু করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে অনেক বার বলা হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করছে না। তবে দ্রম্নতই কাজ শুরু হবে।
এ ব্যাপারে অনেক চেষ্টা করেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।