বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও সিলেটের বিশ্বনাথের দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরী গ্রামের দক্ষিণের হাওড় গোয়াহরী বিলে ২০০ বছরের ঐতিহ্য বার্ষিক 'পলো বাওয়া' উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। এখন প্রায় হারিয়ে যেতে বসা গ্রামীণ এই ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া ঠিকই ধরে রেখেছেন সিলেটের বিশ্বনাথের গোয়াহরী গ্রামবাসী। বাংলা বছরের পহেলা মাঘ মাসের এক তারিখে এই পলো বাওয়া উৎসব উদযাপন করেন তারা। গোয়াহরী গ্রামের মানুষ তাদের পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য হিসেবে ২০০ বছরের অধিককাল থেকে প্রতি বছর ওই পলো বাওয়া উৎসব পালন করে আসছেন। সোমবার দুপুরে পলো বাওয়া উৎসব উদযাপন করেন এলাকাবাসী। প্রতি বছর গোয়াহরী বিলে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা পড়লেও এবার বেশি মাছ ধরা সম্ভব হয়নি। তবে বোয়াল, কাতলা, রুই, কার্প, সোলসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ অনেকেই ধরতে পারলেও কেউ কেউ খালি হাতে ফিরেছেন। কিন্তু উৎসবের কমতি ছিল না কারো মধ্যে।
উৎসবের দিন পলো আর বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরার জাল নিয়ে ভোর থেকে বিলের পাড়ে গিয়ে লোকজন সমবেত হতে থাকেন। ওই এলাকার মানুষের পাশাপাশি পলো বাওয়া উৎসব উদযাপনে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সেখানে গিয়ে ভিড় জমান এবং পলো বাওয়া দেখে উপভোগ করেন। পলো বাওয়ার উৎসবে অংশ নিতে ওই এলাকার অনেক প্রবাসীরাও সপরিবারে দেশে চলে আসেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এসেছেন প্রবাসীরা। স্পেন প্রবাসী মনোয়ার হোসেন আব্দুল বাসিত, যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল হাই, শুকুর আলীসহ আরও অনেকে হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও প্রতিবছর এই উৎসব দেখতে আসেন। তাদের কাছে ওই মাছ ধরা আলাদা একটি আনন্দ উপহার।
পলো বাওয়া দেখতে আসা যুক্তরাজ্য প্রবাসী তৈমুছ আলী (৮৫) বলেন, 'আমাদের বাপ-দাদারা এই পলো বাওয়া উৎসব পালন করেছেন। গ্রামীণ এই পলো বাওয়া যাতে হারিয়ে না যায় এজন্য নতুন প্রজন্মকে জানাতেই আমরাও আমাদের ছেলে-নাতিদের এই উৎসব উপভোগ করতে দেশে নিয়ে আসি।'
দৌলতুপর গায়াহরী গ্রামের গোলাম হোসেন মেম্বার বলেন, উপজেলার সবচেয়ে বড় এবং ২০০ বছর আগের প্রাচীন এই পলো বাওয়া উৎসব তাদের গোয়াহরী গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামবাসী মিলে গোয়াহরী বিলে এই পলো বাওয়ার উৎসব আয়োজন করেন তারা। তবে এবারে বিলে পানি কম এবং পানির যাতায়াত না থাকায় মাছ কম হয়েছে।