ভারতের ভিসা প্রাপ্তিতে জটিলতা, শীতের প্রকোপ এবং চেকপোস্টে নানা হয়রানির কারণে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার কমেছে। আগে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতেন। এখন সেখানে প্রতিদিন মাত্র ২ থেকে ৩ হাজার যাত্রী যাতায়াত করছেন। পাসপোর্টধারী যাত্রী চলাচল কমে যাওয়ার কারণে ভ্রমণ কর বাবদ রাজস্ব আদায়ও কমে গেছে।
বেনাপোল দেশের আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ও বৃহত্তম স্থলবন্দর। চিকিৎসা, ব্যবসা- বাণিজ্য ও ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যায়। কিন্তু গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন থেকে ভারতীয় ভিসা পেতে দুই মাস থেকে আড়াই মাস সময় লাগায় দুই দেশের মধ্যে যাত্রী যাতায়াত কমে গেছে।
বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা সুবিধা দেওয়ার জন্য ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি ভারত-বাংলাদেশের স্বাক্ষরিত সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে বাংলাদেশিদের পাঁচ বছর মেয়াদি ভিসা পাওয়ার কথা। আর ৬৫ বছরের কম বয়সি টু্যরিস্ট ভিসা দেওয়া হতো এক বছর মেয়াদি। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের তিন থেকে পাঁচ বছরের ভিসা দেওয়া হতো। আগে ভিসার আবেদন করলে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ভিসা পাওয়া গেলেও এখন তা দুই থেকে তিন মাসেও সম্ভব হচ্ছে না। আর ভিসা দিলেও তার মেয়াদ তিন থেকে ছয় মাস। এছাড়া কখনো কখনো ভিসা আবেদনকারীর পাসপোর্টে সিঙ্গেল এন্ট্রি বা ডাবল এন্ট্রি ভিসাও দেওয়া হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার যাত্রীদের ভ্রমণ কর ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করায় যাত্রীদের বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে।
তবে বর্তমানে ব্যবসায়িক ভিসা পেতে সময় কম লাগলেও আগে ব্যবসায়ীদের এক বছর, তিন বছর ও পাঁচ বছর মেয়াদে ভিসা প্রদান করতো ভারতীয় হাইকমিশন। এখন সেখানে ব্যবসায়ীদের ছয় মাসের ভিসা দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য ব্যবসায়ীদের বারবার ভিসা ইসু্য করতে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। যারা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করেন তাদের প্রতি সপ্তাহে ভারতে যেতে হয়। কিন্তু বর্তমানে ভিসা সমস্যার কারণে ব্যবসায়ীরাও ব্যবসায়িক কাজে ভারতে যেতে পারছেন না। সময় মতো ভিসা না পাওয়ার কারণে বেশি সমস্যায় পড়ছেন চিকিৎসা করতে যাওয়া যাত্রীরা। সাধারণত একবার ভিসা নিয়ে ভারতে চিকিৎসা নেওয়ার পরে তাকে আবার দুই মাস বা তিন মাস পরে যেতে বলেন ডাক্তাররা। কিন্তু চিকিৎসার উদ্দেশে যাওয়া যাত্রীরা সময় মতো ভিসা না পাওয়ায় যথাসময়ে ডাক্তারের কাছে যেতে পারছেন না। পাশাপাশি ভালো ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। ভারতের ভিসা পেতে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই এসব সমস্যা হচ্ছে।
ভিসা প্রত্যাশী সাগর হোসেন বলেন, 'পরিবার-পরিজন নিয়ে ডাক্তার দেখাতে ভারতে যাওয়া প্রয়োজন। ভারতে চিকিৎসা করতে যাব বলে গত ২১ নভেম্বর ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করেছিলাম। পাসেপোর্ট জমা দেওয়ার তারিখ পেয়েছি ১২ জানুয়ারি। ভিসা দিবে নাকি আরও দুই মাস পরে। কবে ভিসা পাবো আর কবেই বা ডাক্তার দেখাব বুঝতে পারছি না।'
ভারতীয় ভিসা নিয়ে ভারতে যাওয়া এক যাত্রী জানান, ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করার দেড় মাস পরে তারা পাসপোর্ট জমা দেয় ভিসা অফিসে। আর ভিসা পান তার এক মাস পরে।'
এ ছাড়া ভারতীয় চেকপোস্টে নানা রকম হয়রানির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। ভারতে যাওয়ার সময় বেনাপোলে ইমিগ্রেশন কাজ সহজে সম্পন্ন করা গেলেও ভারতে প্রবেশের সময় তিন থেকে চার ঘণ্টা 'নো-ম্যান্স ল্যান্ড' এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। ভারত থেকে ফিরে আসার সময়ও একই অবস্থার সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।
ভারত ফেরত পাসপোর্ট যাত্রী অপু গাজী জানান, ভারতের নানা ভোগান্তি শেষে দেশে ফেরার সময় শুরু হয় বেনাপোল চেকপোস্টে কয়েক দফা চেকিং, প্রথমে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের পরেই বিজিবি যাত্রীদের ব্যাগ স্ক্যানিং করে। এরপর রয়েছে কাস্টমসের চেকিং। কাস্টমসে একজন ব্যাগেজ রুলে যতটুকু মালামাল পাবে সেটা দিয়ে বাকি মালামাল সিজার করে দেন। কাস্টমস থেকে বের হয়ে আসার পর শুল্ক গোয়েন্দারা ব্যাগ চেক করে। গোয়েন্দা চেকিং শেষ করে বাইরে আসলে আবার শুরু হয় বিজিবির চেকিং। এখানে শেষ নয়। চার কিলোমিটার দূরে আমড়াখালী বিজিবি চেকপোস্টে আবারও শুরু হয় ব্যাগ তলস্নাশি। এভাবে যাত্রীদের বার বার ব্যাগেজ খোলা ও লাগানোর কারণে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারত বাংলাদেশ যাতায়াতকারী যাত্রীদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।