বান্দরবানের প্রথমবারের মতো নির্মাণ করা হয়েছে পরিবেশবান্ধব ইউনিবস্নকের সড়ক। জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নের ছাইঙ্গ্যা দানেশপাড়া এলাকায় এ সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। এদিকে ইটের বদলে ইউনিবস্নক প্রযুক্তি দিয়ে গ্রামীণ জনপদে এমন সড়ক যেমন সবার নজর কাড়ছে, তেমনি নতুন প্রযুক্তির সড়ক পেয়ে খুশি এখানকার বাসিন্দারা।
এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দৃষ্টিনন্দন সড়কটি নির্মাণ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বান্দরবান জেলায় এ প্রথম ইউনিবস্নক প্রযুক্তির সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্রামীণ সড়কে জিওবি মেরামত প্রকল্পের আওতায় রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নের সাইঙ্গ্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সাইঙ্গ্যা দানেশপাড়া হয়ে গুদারঘাট পর্যন্ত এক কিলোমিটার ইউনিবস্নকের সড়ক তৈরির দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। দরপত্রে কাজটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় বান্দরবানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বার আউলিয়া এন্টারপ্রাইজ। সড়কটি নির্মাণের ব্যয় ধরা হয় এক কোটি ২২ লাখ টাকা।
সরেজমিন দেখা যায়, বান্দরবান-তারাছা প্রধান সড়ক থেকে ছাইঙ্গ্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যাওয়ার রাস্তা। সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকেই নির্মাণ করা হয়েছে নতুন প্রযুক্তির এ সড়ক। এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১১ ফুট প্রস্থের এ ইউনিবস্নক সড়কটিকে টেকসই করতে সংযোজন করা হয়েছে ইউ ড্রেন, এল ড্রেন ও আরসিসি প্রিকাস্ট ফাইল। এর ফলে সড়কের স্থায়িত্ব বাড়বে আরও বহুগুণ। ইটের বিকল্প জেলায় প্রথম নতুন প্রযুক্তির এমন সড়ক পেয়ে খুশি স্থানীয়রা। এলাকার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মহিউদ্দিন জানায়, আগে এ রাস্তা দিয়ে স্কুলে যেতে তাদের অনেক কষ্ট হতো, সঙ্গে ঝুঁকিও ছিল। এখন তারা প্রতিদিন হেঁটে এ রাস্তা দিয়ে স্কুলে যায়। তাদের খুব ভালো লাগে।
স্থানীয় কৃষক তৌহিদুল ইসলাম জানান, এতদিন ক্ষেতে উৎপাদিত ফসল পরিবহণে অনেক সমস্যা হতো। রাস্তাঘাট ভালো না থাকায় এখানে কোনো গাড়ি আসতে পারত না। ফলে ফসল বাজারজাত করা কষ্টকর ছিল। এখন ক্ষেতে-খামারে উৎপাদিত ফসল নিয়ে হাটে যেতে আর কোনো চিন্তা নেই তাদের।
এদিকে নিজের ওয়ার্ডে ইউনিবস্নক প্রযুক্তির দৃষ্টিনন্দন সড়ক নির্মাণে খুশি ইউপি সদস্য মো. মোরশেদ। তিনি জানান, রাস্তাটি হওয়ায় এলাকাবাসী খুবই আনন্দিত। এখানকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো একটি সড়ক নির্মাণের। তাদের দাবি পূরণ হয়েছে। ইটের বিকল্প ইউনিবস্নক সড়কটি দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় নজর কাড়ছে সবার। এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বার আউলিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মান্নান রুবেল জানান, 'এ কাজটি আমার জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের ছিল। কারণ বান্দরবানে এর আগে এ প্রযুক্তির কোনো সড়ক না হওয়ায় কোনো ঠিকাদারের অভিজ্ঞতা ছিল না। তবে সাহসের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে এলাকাবাসীসহ সবার সহযোগিতা যেমন পেয়েছি, তেমনি নির্দিষ্ট সময়ে কাজটি শেষ করতে পেরেছি। সড়কটি দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় এলাকাসীকে উচ্ছ্বসিত দেখে আমার নিজেরও ভালো লাগছে।'
জানা যায়, এ ইউনিবস্নক নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে সিমেন্ট, বালু আর উন্নতমানের পাথর। এক একটি ইউনিবস্নকের উচ্চতা ৪ ইঞ্চি হওয়ায় চাপ এবং ধারণক্ষমতা ইটের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। এ ছাড়া সড়কের দুই পাশে ও মাঝখানে লাল রঙের বস্নক ব্যবহার করায় ছোট-বড় যানবাহনগুলো পরিমাপ অনুযায়ী চলতে পারবে, বেড়েছে সৌন্দর্যও। এদিকে পরিবেশবান্ধব ও নান্দনিক হওয়ায় বদলে গেছে এই সড়ক সংলগ্ন এলাকার পরিবেশ।
বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল ইসলাম মজুমদার বলেন, 'বান্দরবানে এ প্রযুক্তির সড়ক নির্মাণে আমরা পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছি। গ্রামীণ জনপদে 'বি' ক্যাটাগরির পরিবেশবান্ধব এই সড়ক নির্মাণে খরচ একটু বেশি হলেও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অনেক কম এবং সড়কের স্থায়িত্বও অনেক বেশি। ফলে এ সড়ক যানবাহনের অধিক ভার নিতে পারবে। সড়কটি বৃষ্টি কিংবা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হলেও সহজে নষ্ট হবে না।'