কমছে কাপ্তাই হ্রদের মাছ হতাশায় জেলে-ব্যবসায়ী!
প্রকাশ | ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
একসময় কাপ্তাই হ্রদে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া গেলেও বর্তমানে বিভিন্ন কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জাতের মাছ। ষাটের দশকে বাঁধ দেওয়ার ফলে রাঙামাটির বিস্তৃত এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয় ৩৬৫ বর্গমাইলের কাপ্তাই হ্রদ। প্রথমদিকে জলবিদু্যৎকেন্দ্র স্থাপন করে বিদু্যৎ উৎপাদন ছিল মূল উদ্দেশ্য। তবে পরবর্তী সময় এই হ্রদ হয়ে উঠে অনেক মানুষের জীবন জীবিকার উৎস। শুরু থেকে কাপ্তাই হ্রদে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদন শুরু হয়। এক সময় হ্রদে বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছের দেখা পাওয়া গেলেও বর্তমানে সেই জৌলুস আর নেই। সময়ের বিবর্তনে সেই ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এই মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র।
সম্প্রতি মৎস্য বিপণন কেন্দ্রে গিয়ে কথা হয় মৎস্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। অধিকাংশ মৎস্য ব্যবসায়ী এবং কর্মচারীরা বলছেন, বর্তমানে তাদের দুর্দিন চলছে। এমনিতে শীতের মৌসুমে হ্রদে মাছের পরিমাণ কমে আসে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মাছের পরিমাণ অনেক কম। এতে হতাশ হয়ে দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছেন তারা। একসময় এই ব্যবসায় অনেকে নিয়োজিত থাকলেও বর্তমানে তারা অন্য পেশায় জড়িয়ে গেছেন।
বর্তমানে হ্রদে যে পরিমাণ মাছ পাওয়া যাচ্ছে, এর মধ্যে ছোট মাছের সংখ্যাই বেশি। বিশেষ করে কাচকি, চাপিলা, মলা-ঢেলা জাতের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। বড় কোনো মাছ তেমন ধরা পড়ছে না।
এ বিষয়ে মৎস্য ব্যবসায়ী জামাল সওদাগর জানান, কাপ্তাই হ্রদে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় মাছ ধরা পড়ছে অনেক কম। এতে আয়-রোজগার কমে গেছে, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দিতে কষ্ট হচ্ছে।
জানতে চাইলে একাধিক মৎস্য ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা মাছ কমার কারণ হিসেবে হ্রদের নাব্য সংকটকে দুষছেন। হ্রদের বিভিন্ন স্থানের গভীরতা কমে গেছে। যেখানে মাছের প্রজনন বৃদ্ধি পাওয়ার জায়গা, সেখানেই পলি ভরাট ও নাব্য সংকটে মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি ভরা মৌসুমেও মাছের প্রজনন কেন্দ্রে পানির পরিমাণ থাকে কম। পাশাপাশি বিভিন্ন বর্জ্য আবর্জনার বিষাক্ত পদার্থে লেকের পানি দূষিত হচ্ছে। এসবের ফলে মাছের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) এক তথ্যে জানা যায়, ১৯৯১ সালে কাপ্তাই হ্রদে দুই প্রজাতির চিংড়ি, দুই প্রজাতির কচ্ছপ ছাড়াও ৭১ প্রজাতির মাছের আবাসস্থল ছিল। এর মধ্যে ৬৬ প্রজাতি ছিল দেশি এবং পাঁচ প্রজাতি ছিল বিদেশি মাছ। এরপর ২০০৬ সালের সর্বশেষ মাছের সুমারি হয়। সেই তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে হ্রদে ৬২ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৫২ প্রজাতি দেশি এবং বিদেশি মাছের সংখ্যা ১০। বাকিগুলো ধীরে ধীরে হ্রদ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) লংগদু শাখার কর্মকর্তা আকবর হোসেন জানান, গত ১ মাস আগেও হ্রদে ভালো মাছ পাওয়া গেছে। তবে বর্তমানে অনেকটা কমেছে। আশা করা যায়, শীত মৌসুম চলে গেলে হ্রদে আবারও মাছের পরিমাণ বাড়বে।