রাঙামাটিতে ব্যবহারের অনুপযোগী কোটি টাকার নৌ-অ্যাম্বুলেন্স

প্রকাশ | ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
রাঙামাটির লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স সংলগ্ন ঘাটে পরে আছে পরিত্যক্ত নৌ-অ্যাম্বুলেন্স -যাযাদি
দেশের একমাত্র সর্ববৃহৎ কৃত্রিম হ্রদ হলো কাপ্তাই হ্রদ। যা ভরা মৌসুমে পানি দিয়ে বেষ্টিত থাকে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির অধিকাংশ উপজেলাগুলো। তার মধ্যে দুর্গম লংগদু উপজেলা অন্যতম। তাই দুর্গম জনপদের মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে সরকার দিয়েছিল নৌ অ্যাম্বুলেন্স। কিন্তু কোটি টাকা মূল্যের আধুনিক এই নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি কাজে আসছে না। চার বছরের বেশি সময় ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকতে থাকতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এ অ্যাম্বুলেন্সটি নিজেই মুমূর্ষু হয়ে পড়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভেতরে ময়লা-আবর্জনা জমে রোগী পরিবহণের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স সংলগ্ন একটি ঘাটে পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্সটি। বন্ধ থাকায় দুর্গম লংগদুর মানুষের চিকিৎসাসেবা পেতে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। কবে নাগাদ চালু হবে তা-ও কর্তৃপক্ষ বলতে পারছে না। সরেজমিন লংগদু উপজেলার নদীসংলগ্ন ঘাটে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ অঞ্চলের ২ শতাধিক ছোট-বড় এলাকায় প্রায় ৪ থেকে ৫ লক্ষাধিক মানুষের বাস। এসব দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য রাঙামাটি সদর জেনারেল হাসপাতালে যাওয়ার নির্ভরযোগ্য কোনো নৌযান না থাকায় তাদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হতো। দুর্ভোগ লাঘবে সড়কপথ বিচ্ছিন্ন এ উপজেলায় ২০১৯ সালে প্রথম একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। জানা যায়, কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতায় নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি প্রদান করে জনস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এ নৌ-অ্যাম্বুলেন্স পেয়ে পার্বত্যবাসীর মধ্যে আনন্দের কমতি ছিল না। অ্যাম্বুলেন্সটি পাওয়ার মাসখানেকের মাথায় অযত্ন আর অবহেলায় এবং কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় খালের পাড়ে পড়ে আছে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার নৌ-অ্যাম্বুলেন্স। আর কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও অবহেলার কারণে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি পানির নিচে ডুবে নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। অবশ্য স্থানীয়দের কথার সত্যতা পাওয়া গেল রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকেজো হয়ে নদীর পাড়ে পড়ে আছে। এতে দুর্গম এলাকার বাসিন্দাদের চরম ভোগান্তিসহ অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে মূল ভূখন্ডে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। দ্রম্নত অচল নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করে সচল করার দাবি জানিয়েছেন দুর্গম এ অঞ্চলের মানুষ। উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, 'দুর্গম অঞ্চলের অসহায় মানুষের কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী যে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স উপহার দিয়েছেন, তা অনেক মানুষ জানেই না। এ বিষয়ে কখনও কোনো প্রচারও শুনিনি। এখন শুনলাম ব্যবহার হচ্ছে না, পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।' অপর বাসিন্দা বিলস্নাল হোসেন বলেন, 'হাসপাতালের পিছনে একটি ঘাটে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়। আর উপজেলার অসুস্থ শিশু, বৃদ্ধ ও গর্ভবতী মায়ের চিকিৎসায় উপজেলা সদর থেকে জেলা বা শহরমুখী হতে হয় লঞ্চ, বোট অথবা অতিরিক্ত টাকা গোনে স্পিডবোটে।' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাইনী ইউনিয়নের এক বাসিন্দা জানান, তার মেয়ে দুই মাস আগে সন্তান প্রসব করেছে। নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি ঠিক না থাকায় নয় হাজার টাকায় স্পিডবোট ভাড়া করে রাঙামাটি সদরে নিতে হয়েছে। এ বিষয়ে লংগদু উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে উপরস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে, যতদ্রম্নত সম্ভব এটা সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করা হবে। রাঙামাটি সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, 'বিকল হওয়া নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামতের জন্য আকু বিল্ডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রম্নত অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করা হবে।'