টাঙ্গাইলে লুট হচ্ছে ফসলি জমির টপসয়েল
প্রকাশ | ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে রাতের আঁধারে ফসলি জমির উপরের মাটি অর্থাৎ টপ সয়েল অবৈধভাবে কেটে নেওয়া হচ্ছে। মাটি আনা-নেওয়ার জন্য উপজেলার বানাইল ইউনিয়নের নরদানা গ্রামের খালে আড়াআড়ি বাঁধ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের চোখ আড়াল করতে অপরাধীরা সন্ধ্যা থেকে জমির টপ সয়েল লুট করা শুরু করে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ইউনিয়ন পরিষদের এক সাবেক সদস্যের নেতৃত্বে নরদানা গ্রামের ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। মাটি কাটার প্রতিবাদ করলে তার সহযোগীরা এলাকার লোকজনকে মারধর ও বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়ে থাকেন। এ জন্য স্থানীয়রা কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
কৃষি বিষেশজ্ঞরা জানান, ফসলি জমির উপরিভাগের ১০ থেকে ১২ ইঞ্চির মধ্যে মাটির জৈব উপাদান থাকে। সেই মাটিকাটা হলে জমির জৈব উপাদান চলে যায়। এতে জমির স্থায়ী ক্ষতি হয়। ফসলের উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। ফসলি জমির মাটিকাটা তাই বেআইনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, নরদানা গ্রামের খালের পানি প্রবাহ পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে লৌহজং নদীর সংযোগস্থলে যাচ্ছে। খালের শেষ মাথার দিকে প্রায় ১৫ ফুট উঁচু করে মাটির বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বাঁধ দেওয়ার ফলে খালের পূর্ব পাশ থেকে পশ্চিম পাশে পানি জমাট বেঁধে উচ্চতা বেড়েছে। বাঁধের পাশে এক্সাভেটর (খনন যন্ত্র) রাখা হয়েছে। খনন যন্ত্র দিয়ে ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে ট্রাক্টরে ভরে বাঁধের উপর দিয়ে আনা-নেওয়া করা হয়। খালের পাশে থাকা বিভিন্ন ফসলি জমির টপ সয়েলসহ গভীর গর্ত করে মাটিকাটা হচ্ছে।
মাটি আনা-নেওয়ার কাজে নিয়োজিত ট্রাক্টর চালক মো. জিন্নত মিয়া জানান, তারা দিনে মাটি আনা-নেওয়া করেন। এ জন্য ট্রাক্টরের মালিক তাকে দিনে ৬০০ টাকা হারে মজুরি দেন। আর রাতে ট্রাকযোগে মাটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
এলাকাবাসী জানায়, প্রায় ৪০ ফুট প্রশস্তের ওই খাল ২০০ বছরের বেশি পুরনো। প্রায় ৪০ বছর আগে খালটি খনন করা হয়েছিল। খালটির কারণে পাশের পাটুলি, বানাইল, বাংগল্যা, কালা ভাতগ্রাম ও টেগুরী এলাকার জমিতে পানি সরবরাহ করে ফসল উৎপাদন করা হয়। বাঁধের কারণে এ বছর সরিষা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
নরদানা গ্রামের মোহাম্মদ জিন্নাহ ব্যবসায়ীদের কাছে জমির মাটি বিক্রি করেছেন। পাশাপাশি তিনি মাটির ব্যবসাও করেন। তিনি জানান, তার জমিতে সরিষার আবাদ করেছিলেন। ভালো উৎপাদন না হওয়ার আশঙ্কায় তিনিসহ কয়েকজন জমির মাটি বিক্রি করে দিয়েছেন। সেগুলো জমিগুলোই গর্ত করে কাটা হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ী তুষার বিশ্বাস জানান, ধল্যার সাদেক মেম্বার, নরদানার ভাসানীসহ ১৭ জন পার্টনার রয়েছেন। ২৫০ টাকা গাড়ি দরে মাটি কিনে তিনি নিজের বাসায় ফেলেন। রাতে ট্রাকে মাটি আনা-নেওয়া করলে কেউ কিছু বলে না বিধায় তারা রাতে মাটি আনা-নেওয়া করেন।
এলাকার প্রতিবাদীদের ভয় দেখানোর বিষয়ে তুষার বিশ্বাস জানান, কেউ মাটি কাটার প্রতিবাদ করে না। প্রতিবাদের কথা বলে কেউ কেউ চাঁদা চায়- তাদেরকেই কিছুটা ধমক দিতে হয়।
অভিযোগের বিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য সাদেক হোসেন জানান, তিনি মাটির ব্যবসায় জড়িত নন। তবে মাটি কাটার যন্ত্র ও ট্রাকে তিনি তেল সরবরাহ করেন। এতে তার কিছুটা লাভ হয়।
মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান জানান, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন অনুযায়ী ফসলি জমি বা উদ্ভিদ বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে- সেখান থেকে বালু বা মাটি তোলা যাবে না। খালে কোনোভাবেই বাঁধ দেওয়া যাবে না। অবৈধ মাটি কাটার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।