দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে নির্বাচনের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত পড়শীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ পুড়ে গেছে। এতে বিদ্যালয়ের সেমিপাকা ভবনটির ভেতর ও বাইরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুনের তীব্রতায় বিদ্যালয়ের টিনের চাল ও দেয়াল পুড়ে যাওয়ায় খসে পড়ছে পলেস্তারা। বেঞ্চ, টেবিল-চেয়ার, কাগজপত্র পোড়াভষ্ম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এখনো। পুড়ে যাওয়া চারটি কক্ষের সর্বত্র পোড়া উৎকট গন্ধ ও ভুতুড়ে পরিবেশ।
এদিকে, শিক্ষকরা অভিভাবকদের বুঝিয়েও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে পারছেন না। ফলে কমেছে উপস্থিতি। খুদে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে গিয়ে পোড়া ভবন দেখে ভয় পাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সকালে পড়শীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ ডিসেম্বর ভোর রাতে উপজেলার পড়শীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে বিদ্যালয়ের ৪টি কক্ষ ও বেঞ্চ, টেবিল-চেয়ার আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নির্বাচনের দুই দিন আগে অর্থাৎ গত শুক্রবার গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা বিদ্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরদিন শনিবার ভোরে ঘন কুয়াশার মধ্যে বিদ্যালয় ভবন থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে ঘটনা জানাজানি হয়। কিছুটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নির্বাচনের দিন বিদ্যালয়টি ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সকালে পড়শীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন ভবনের একটি কক্ষে পঞ্চম শ্রেণি, চতুর্থ শ্রেণি ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসে পাঠদান করানো হচ্ছে। অন্য একটি কক্ষে প্রাক প্রাথমিক, প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে।
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আদরিন জানায়, 'স্কুলঘর ও আমাদের বসার বেঞ্চ আগুনে পোড়া, এখন স্কুলে আইতে ভয় লাগে। দুই দিন ভয়ে স্কুলে আসি নাই, ম্যাডামরা বাড়িতে গিয়ে আমাদের আনছে।'
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেঘলা জানায়, 'ক্লাস করমু কোথায় বেঞ্চ নাই, রুমের মধ্যে গেলে ভয় লাগে ও পোড়া গন্ধ।
সহকারী শিক্ষক লুৎফা বেগম বলেন, 'আমাদের বিদ্যালয়ে ১০৮ জন শিক্ষার্থী। গত ৫ জানুয়ারি আগুন দেওয়ার পর শিক্ষার্থী উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বুঝিয়ে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর অনুরোধ করেও তেমন সাড়া পাচ্ছি না।'
পড়শীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান (ভারপ্রাপ্ত) জানান, গত ৫ জানুয়ারি রাতে দুর্বৃত্তরা বিদ্যালয়টিতে পেট্রল জাতীয় পদার্থ দিয়ে আগুন দিলে টিনের চাল, বেঞ্চ, চেয়ার- টেবিলসহ সবকিছু পুড়ে যায়। আগুনের তীব্রতায় ৪টি কক্ষ পুড়ে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। এখন পুরো ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাছাড়া শিশুদের মধ্যে এখন ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। তাই তারা বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। ঘটনার পর থেকে অনেক চেষ্টা করেও ১০৮ জনের মধ্যে ৪০-৪৫ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে আনা যাচ্ছে না। আগুনের ঘটনা শিশুদের মধ্যে চরম ভীতির সৃষ্টি করেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল মালেক (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, জেলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ জন্য আমরা বরাদ্দ চেয়েছি, আশা করছি, দ্রম্নত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্ষয়ক্ষতির এই তালিকা ইউএনওর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। ইউএনও মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৫ জানুয়ারি রাতে পড়শীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যালয়ের সংস্কার ও বেঞ্চ সরবরাহ করে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে।