শিক্ষার আলো ছড়াতে দেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিম জনপদে গড়ে ওঠা প্রাচীন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সুন্দরবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ১৯৪৫ সালে আধুনিক মানসম্মত শিক্ষার দৃঢ় প্রত্যয়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠেছে সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন এই মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠার শুরুতেই গুরুত্ব দেওয়া হয় নিয়ম শৃঙ্খলা ও পড়াশোনার দিকে। আর এতে সাফল্যও এসেছে।
প্রত্যেকটি পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানটি কখনও বিভাগীয়, কখনও জেলায় এবং কখনও উপজেলায় ধারাবাহিকভাবে সেরা সাফল্য অর্জন করে আসছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে আর কখনো পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি প্রাচীন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে। এ বিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী বর্তমানে দেশ-বিদেশে যেমন সুনাম অর্জন করেছেন, তেমনি এলাকার মানুষের আস্থা ও সম্মান বাড়িয়েছে। এলাকায় শিক্ষাবান্ধব ও সময়োপযোগী স্কুল হিসেবে মানুষের এবং ছাত্রছাত্রীদের দৃষ্টি এ স্কুলের দিকে। এ স্কুল থেকে পড়াশোনা করে বহু ছাত্রছাত্রী ডাক্তার, শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ারসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন দপ্তরে পদস্ত হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি উপজেলায় জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলায় জিপিএ-৫সহ শতভাগ পাস হওয়ার গৌরব এখনও দখলে রেখেছে বিদ্যালয়টি।
লেখাপড়ার পাশাপাশি নিয়মিত সংস্কৃতির চর্চার কারণে উপকূলীয় এ উপজেলায় অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় স্কুলটি ব্যাপক পরিচিত লাভ করেছে। বর্তমানে স্কুলটিতে ৩৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছে ১৫ জন অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকা।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আনিকা, তাহসিন, তৌফিক মাওয়া তারা জানায়, স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম সময় উপযোগী। খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, বার্ষিক শিক্ষা সফর, উপজেলাভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষিকারা আন্তরিকভাবে পাঠদান করেন।
অভিভাবক ছাব্বির আহমেদ জানান, 'মেধাভিত্তিক ফাউন্ডেশন তৈরির মাধ্যমে স্কুলের ধারাবাহিক সাফল্যের জন্য শিক্ষকমন্ডলীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন মেধানির্ভর শিক্ষক-শিক্ষিকা দিয়ে স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে।'
সুন্দরবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম শামছুর রহমান টিকে। প্রতিষ্ঠানটির পেছনের গল্প ১৯৪৫ সালে। মাত্র ১৫০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে স্কুলটির যাত্রা শুরু হয়। শিক্ষার মান নিয়ে কখনো আপস করা হয়নি। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ডিগ্রিধারী মেধাবীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও লাইব্রেরি।
প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, অভিজ্ঞ ও নিবেদিত শিক্ষক দ্বারা পাঠদান, পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা, ক্লাস মনিটরিং সেল গঠনের মাধ্যমে নিবিড় পরিচর্যা, বছরে ৩টি ক্লাস টেস্ট, দুটি মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বার্ষিক পরীক্ষার নম্বরের ওপর চূড়ান্ত ফলাফল, দক্ষ ও নির্ভরযোগ্য পরিচালকমন্ডলী, আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব, সুপরিসর বিজ্ঞানাগার, বিনোদনমূলক শিক্ষা কার্যক্রম, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম, স্পোকেন ইংলিশ বিষয়ে পাঠদানের সুবিধা। প্রজেক্টরে স্স্নাইড-শো দিয়ে পাঠকে আনন্দদায়ক করার ব্যবস্থাসহ একটি অত্যাধুনিক অডিটরিয়াম এবং সমৃদ্ধ পাঠাগারসহ শিক্ষার যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা বিদ্যালয়টিতে বিদ্যমান রয়েছে।
স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি এসএম রবিউল ইসলাম জানান, আমরা সবসময় স্কুলে সেরা শিক্ষা দেওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে মানসম্মত করার পেছনে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রচেষ্টা অন্যতম।