কেরানীগঞ্জে হঠাৎ ডাকাত আতঙ্ক!

প্রকাশ | ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
শীতের এ মৌসুমে হঠাৎ করে রাজধানীর কেরানীগঞ্জে বেড়েছে চুরি-ডাকাতির ঘটনা। 'গ্রামবাসী হুঁশিয়ার, জাগো' রাত ১০টার পর কেরানীগঞ্জের কালিন্দী, বাস্তা, রোহিতপুর, শাক্তা, কলাতিয়া ও হযরতপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গেলে কিছুক্ষণ পরই শোনা যাবে এমন চিৎকার। ডাকাত আতঙ্কে গ্রামবাসী উদ্যোগী হয়ে প্রায় এক মাস ধরে সেখানে পাহারা বসিয়েছেন অলিগলি ও বাড়িঘরের আশপাশের সড়কে। গত এক মাসে উপজেলায় চুরি-ডাকাতি নিয়মিত ঘটনা হয়ে পড়েছে। টাকা-পয়সা, অলংকার ও বিভিন্ন জিনিসপত্র লুটপাটের সঙ্গে ভুক্তভোগীদের মারধর করে রক্তাক্ত-জখম করার ঘটনাও ঘটছে ডাকাত দলের হাতে। স্থানীয়রা বলছেন, বিচ্ছিন্ন দুই-একটি ঘটনা ছাড়া কেরানীগঞ্জ উপজেলায় চুরি-ডাকাতি খুব একটা ছিল না। গত কিছুদিনের ঘটনায়, বিশেষ করে শীত পড়াতে হঠাৎ ডাকাত দলের তৎপরতায় এখন তাদের দিন কাটছে আতঙ্কে। প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় ঘটছে ডাকাতির ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি চললেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। তবে পুলিশ বলছে, ডাকাত দলের হানা দেওয়ার খবর গুজব। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের টহল দল রয়েছে। অবশ্য ২ জানুয়ারি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার দায়ে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রসহ বেশ ১০ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও মডেল থানা পুলিশ। গত ১৯ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার গভীররাতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের গোয়ালখালি এবং বাস্তা এলাকায় মো. আউয়াল, মোহাম্মদ জসিম ও মোহাম্মদ রিয়াজ মাস্টারের বাড়িতে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা ওইসব বাড়ির দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটে নেয়। গোয়ালখালী গ্রামের ভুক্তভোগী মো. আউয়াল জানান, গভীর রাতে ২০ থেকে ২৫ জনের একদল সশস্ত্র ডাকাত জোরপূর্বক তার বাড়িতে প্রবেশ করে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। এ সময় তারা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ঘরে থাকা তিন ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ২৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে ডাকাতরা তার যুবতী মেয়েকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করলে তিনি জীবন বাজি রেখে ডাকাতদের হাত থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। পরে ডাকাতরা একই গ্রামের জসীমউদ্দীনের বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে একই রাতে বোয়ালখালী গ্রামের পাশের বাস্তার টিলাবাড়ি গ্রামে রিয়াজ মাস্টারের বাড়িতে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঢুকে পড়ে একদল ডাকাত। এ সময় ডাকাতরা রিয়াজ মাস্টারের ছোট ভাইয়ের ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকে সবাইকে ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে ভয় দেখায়। পরে ঘরের আলমারি কুড়াল ও চাপাতি দিয়ে ভেঙে টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে। এ সময় তাদের আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে ডাকাতরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দ্রম্নত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। ডাকাতির বিষয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুব আলম জানান, 'এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা তদন্ত করে ঘটনাটির দ্রম্নত আইনগত ব্যবস্থা নেব। এদিকে ডাকাত আতঙ্কে কেরানীগঞ্জের শাক্তা, রোহিতপুর ও হযরতপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় রাত হলেই মসজিদে সতর্কতামূলক মাইকিং করা হয়। গত ৬ জানুয়ারি, কেরানীগঞ্জের ডাকপাড়া ও কালিন্দী রাত পৌনে ১২টায় একযোগে মসজিদে মসজিদে মাইকিং করা হয়। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে জনমনে। অনেকেই রাস্তায় নামেন। তবে মাইকিংয়ের বিষয়টি পরিকল্পিত হতে পারে। কাউকে আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি মোস্তফা কামাল বলেন, 'একদল ডাকাত প্রবেশ করেছে এমন খবর পুরোটাই গুজব। মসজিদগুলোয় মাইকিং কেন হচ্ছে বা কারা করাচ্ছে বিষয়টা আমাদের জানা নেই। তবে, পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় রাতে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।' ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান জানান, দিনে ডাকাত দলের সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন পেশায় জড়িত থাকে। কেউ গার্মেন্টসে খন্ডকালীন কাজ করে। আবার কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসা করে, কেউ অটোরিকশা চালায়। এরাই রাতে হয়ে ওঠে ভয়ংকর। বিপদের কথা হলো, ডাকাতির সময় এখন শুধু যাত্রীদের টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয় না তারা। ছুরিকাঘাত এমনকি গুলি করতেও দ্বিধা করছে না। ঘটনার শিকার হয়েও থানা-পুলিশে জড়াতে চায় না অনেক ভুক্তভোগী। তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় চুরি-ডাকাতি হচ্ছে। এজন্য আমরা জেলার প্রতিটি থানার জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম পুলিশদের সজাগ থাকতে বলেছি। তবে জেলার কোথাও কোনো ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি, এটি সম্পূর্ণ গুজব। পুলিশ সজাগ অবস্থানে রয়েছে।'