সিরাজগঞ্জের তাড়াশে মানসিক অসুস্থতাজনিত কারণে তিন যুগ ধরে লোহার শিকলে বন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন মানসিক প্রতিবন্ধী ময়দান আলী (৫৩)। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা ও আবাসনের অভাবে রোদবৃষ্টিতে ভিজে অসহায় জীবনযাপন করছেন এই প্রতিবন্ধী ময়দান আলী। ময়দান আলীর বাড়ি তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের গোন্তা গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত ইজ্জত আলী।
জানা যায়, ময়দান আলীর মা-বাবা কেউই বেঁচে নেই। তার বড় বোন রেজাতন খাতুন ৩৩ বছর যাবত ভাইকে লালনপালন করে আসছেন।
রেজাতন খাতুন বলেন, কোমড়ে লোহার শিকল বাঁধা অবস্থায় বসে থাকতে থাকতে তার ভাই এখন আর দাঁড়াতে পারেন না। দিন-রাত শুধু শুয়ে বসে কাটিয়ে যায় তার সময়। কথাও বলতে পারেন না। ক্ষুধা লাগলে শুধু ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে থাকে মুখের দিকে। তার বসবাসের জন্য নেই কোনো ঘর। গরুর গোয়ালের পাশে একটি গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে। নয়তো হারিয়ে যেতে পারে, পানিতে পড়ে ডুবে মরতে পারে। সেই শঙ্কা থেকেই বাধ্য হয়ে তাকে লোহার শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে বলে তার বোন জানান।
তিনি আরও বলেন, ময়দান আলীর থাকার কোনো জায়গা নেই। বেশিরভাগ সময় নিজের মলমূত্রের মধ্যেই গড়াগড়ি করে কাটে তার দিন। তার মানসিক প্রতিবন্ধিতার সঙ্গে অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যাও রয়েছে। একজন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার নূ্যনতম অধিকারও পাচ্ছেন না সে।
প্রতিবন্ধিতার সঙ্গে দরিদ্রতা যেন তাকে জীবন্ত লাশ বানিয়ে রেখেছে। সরেজমিনে গিয়ে সেটাই প্রতীয়মান হয়। গোয়াল ঘরে খড়ের পালার পাশে শিকলে বাঁধা অবস্থায় শুয়ে আছেন প্রতিবন্ধী ময়দান আলী। তিনখানা পুরাতন টিনের একটি খুপড়ি ঘরের চারপাশে নেই কোনো বেড়া। হাড় কাঁপানো প্রচন্ড শীতের কষ্ট, প্রখর রোদের তাপ কিংবা ঝড়-বৃষ্টি নীরবে সয়ে যেতে হয় তাকে। স্থানীয় পরিবর্তন নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিবন্ধী পুনর্বাসনকর্মী (সিএইচডিআরপি) রোকসানা খাতুন বলেন, মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধীদের শুরুতেই সঠিক চিকিৎসা করানো গেলে দ্রম্নত আরোগ্য লাভ সম্ভব। তাদের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি পারিবারিক সচেতনতাও জরুরি।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এ. কে এম মনিরুজ্জামান বলেন, শুধু প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ডের সামান্য টাকায় ময়দান আলীর মতো প্রতিবন্ধীদের ভরণপোষণ সম্ভব নয়। এজন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রতিবন্ধী ময়দান আলীর বিষয়টি নিজে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।