ময়মনসিংহের নান্দাইলে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে শ্রেণিকক্ষ পুড়ে যাওয়ায় উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনো পাঠদান শুরু হয়নি। খুদে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে গিয়ে পোড়া ভবন দেখে ভয় পাচ্ছে। ভবনের দেয়াল ও ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। এ অবস্থায় অভিভাবকরাও সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে সাহস পাচ্ছেন না। হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্বাচনের দুইদিন আগে অর্থাৎ গত শুক্রবার রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা বিদ্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরদিন শনিবার ঘন কুয়াশার মধ্যে বিদ্যালয় ভবন থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে ঘটনা জানাজানি হয়। নির্বাচনের দিন বিদ্যালয়টি ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, ভোট বানচাল করার জন্য একটি চক্র ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত বিদ্যালয়টি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। তবে ভবনটি পাকা থাকায় সেটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়নি। নির্বাচনের দিন আগুনে পুড়ে যাওয়া কক্ষগুলোতে বুথ স্থাপন করে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম চালানো হয়।
গত মঙ্গলবার বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দোতলা ভবনটির নিচতলার তিনটি শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চ, শিক্ষকদের টেবিল ও বস্ন্যাকবোর্ড আগুনে পুড়ে গেছে। এমনকি আগুনের উত্তাপে শ্রেণিকক্ষের বৈদু্যতিক পাখাগুলোর কাঠামো গলে নিচে পড়ে গেছে। পাখার লোহার কাঠামোগুলো ঝুলে রয়েছে। এ ছাড়া লোহার জানালা এবং ওপরের লোহার গ্রিল আগুনের উত্তাপে বাঁকা হয়ে গেছে। এ ছাড়া কক্ষের চারপাশের দেয়াল ও ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। কক্ষের কোনো কোনো স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছা. মাইশা আক্তার, চতুর্থ শ্রেণির জান্নাতুল মাওয়া, তৃতীয় শ্রেণির আল আমিন জানায়, ১ জানুয়ারি তারা সহপাঠীদের সঙ্গে বিদ্যালয়ে এসে নতুন বই নিয়ে গেছে। পরে তারা শোনে, বিদ্যালয়ে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এখন ক্লাস বন্ধ, গতকাল সহপাঠীদের সঙ্গে তারা বিদ্যালয়ে এসেছে পরিস্থিতি দেখতে। কত সুন্দর ঝকঝকে শ্রেণিকক্ষ ছিল তাদের, এখন সব পুড়ে কালো হয়ে গেছে। এসব দেখে তাদের মন খারাপ হয়ে গেছে।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আবু হুরায়রা বলে, 'ইস্কুলডার এই অবস্থা দেইখ্যা আমার বালা লাগতাছে না। কোনো দিন ইস্কুলডা ঠিক অইব জানি না। পোড়া ইস্কুলে আমরা কীবায় লেহাপড়া করবাম।'
প্রধান শিক্ষক বেগম নূরুন্নাহার বলেন, আগুনে দোতলা ভবনটির ১০টি কক্ষের মেঝে ও দেয়াল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছাদে ফাটল দেখা দিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৫০ লাখ টাকার মতো হবে। তিনি ক্ষয়ক্ষতির এই তালিকা ইউএনও'র কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। তার বিদ্যালয়ে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী রয়েছে।
ইউএনও অরুণ কৃষ্ণ পাল বলেন, তিনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রম্নত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।