মাদারীপুর-৩ সংসদীয় আসনে নৌকায় ভোট দেওয়ায় টানা দু'দিনে ২৫ থেকে ৩০টি গ্রামে তান্ডব চালানোর অভিযোগ উঠেছে সদ্য বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এতে শতাধিক ঘর-বাড়ি ভাংচুর-লুটপাটেরও অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেদে সম্প্রদায়ের মানুষ। হামলায় আহতও হয়েছে অন্তত ২০ জন। এমনকি বসতঘরে অগ্নি-সংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আহাজারি চলছে ঘরে ঘরে। নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে শতাধিক ঘর-বাড়ি তছনছ, লুটপাট করা হয়েছে মূল্যবান জিনিসপত্র। আগুনও দেওয়া হয়েছে বসতঘরে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, মাদারীপুরের কালকিনির চর ঠেঙ্গামারা গ্রামে কয়েকশ' অস্ত্রধারী হামলা চালায় বেদে সম্প্রদায়ের মানুষের উপর। বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা কয়েক দফায় হামলা চালিয়ে ১৫টি বসতঘর ভাংচুর, লুটপাট ও আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে নিঃশ্ব হতদরিদ্ররা। গত রবি থেকে মঙ্গলবার টানা তিনদিন ধরে এই অবস্থা চলে কয়ারিয়া, ফাসিয়াতলা, নয়াকান্দি, ঘটকচর, শশিকর, কেন্দুয়াসহ অন্তত ৩৫টি গ্রামে। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে নৌকার অনেক এজেন্ট ও কর্মী-সমর্থকরা। পুরো এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। আতঙ্ক থাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। এমন তান্ডবকে ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি বাহিনীর ঘটনার সঙ্গে তুলনা করে দোষীদের বিচার দাবি করেছেন নৌকার পরাজিত প্রার্থী। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সদ্য বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
পরাজিত নৌকার প্রার্থী ডক্টর আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ বলেন, 'বিজয়ী তাহমিনা বেগমের লোকজন এই হামলা চালিয়েছে। এটি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ঘটনাকেও হার মানায়। এ ঘটনায় দোষীদের বিচার হওয়া উচিত।'
সদ্য বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম বলেন, 'কয়েকটি স্থানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। যারা ঘটিয়েছে তারা সন্ত্রাসী। এই সন্ত্রাসীদের বিচার চাই। ঘটনার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কেউ জড়িত নয়।'
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম জানান, কয়েকটি স্থানে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মাদারীপুর-৩ আসনে ঈগল প্রতীকে ৯৬ হাজার ৩৩৩ পেয়ে বিজয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম। তিনি কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। অন্যদিকে নৌকা প্রতীকে ডক্টর আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ পান ৬১ হাজার ৯৭১ ভোট। পরাজিত এই প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক।