দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করে সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলন লাগাতারভাবে চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ।
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। 'সরকার ও শাসনব্যবস্থা বদলে ঐক্যবদ্ধ হোন, তামাশার নির্বাচন, জনগণের প্রত্যাখ্যান এবং চলমান আন্দোলন বিষয়ে' এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ২৮ অক্টোবর সরকারের সেই বর্বর আক্রমণের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে হরতাল-অবরোধসহ সব কর্মসূচি পালন করেছেন। আগামীতেও লাগাতারভাবে এই কর্মসূচি চলবে। তারা একটি অভিন্ন দাবি নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে আছেন। তবে যুগপৎ থেকে একই মঞ্চে আসতে পারছি না। এটা নিয়ে মাঝে মাঝে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হয়। সামনে এটাকে আরও সম্প্রসারিত করা হবে। তবে এর ধরন কেমন হবে, সেটা সবার সঙ্গে কথা-বার্তার মধ্য দিয়ে ঠিক করবেন তারা।
তিনি বলেন, এই নির্বাচনকে দেশের জনগণ ছাড়াও গণতান্ত্রিক বিশ্ব প্রত্যাখ্যান করেছে। সবাই বলেছে যে, এটা নির্বাচন হয়নি। এটা একটা জাল নির্বাচন হয়েছে, ভুয়া নির্বাচন হয়েছে। বিশ্ব বিবেক, বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তি বাংলাদেশের ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগণের সঙ্গে আছে। তাদের এই সমর্থন তাদের চলমান আন্দোলনে শক্তি জোগাবে।
নির্বাচন নিয়ে ভারত-চীন-রাশিয়ার অবস্থানকে দুর্ভাগ্যজনক উলেস্নখ করে বাংলাদেশের বিপস্নবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক বলেন, নির্বাচনের নামে যে তামাশা মঞ্চস্থ হয়েছে, জনগণের ভোটের অধিকার যেভাবে আরেকবার হরণ করা হয়েছে, এসব বিবেচনা করে ভারত সরকার তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ভারতের এই প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। এর আগেও ২০১৪ সালে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকায় এসে জাতীয় পার্টিকে তখন বাধ্য করেছিল নির্বাচনে যাওয়ার জন্য। ২০১৮ সালে একই রকম দিনের ভোট রাতে করার পর সবার আগে ভারত ওই তামাশার নির্বাচনকে সমর্থন দিয়েছিল। তাদের মতো চীন ও রাশিয়ায়ও একইভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। এক ঝুড়িতে সব ডিম রাখতে গিয়ে বাস্তবে তারা আসলে সব দেশ ও জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। 'একদলীয় বাকশাল' প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে এই নির্বাচন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে যে প্রহসন অনুষ্ঠিত হয়েছে, এতে ক্ষমতা বদলের কোনো সুযোগ ছিল না। সরকারি দল তাদের নিজেদের মধ্যে থেকেই ডামি প্রার্থী দাঁড় করিয়ে একটা কৃত্রিম প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখানোর আয়োজন করেছে। এর বাইরে সরকারি দলের বর্তমান ও সাবেক জোটসঙ্গীদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির মধ্য দিয়ে তারা প্রতিযোগিতার নূ্যনতম জায়গাকেও রুদ্ধ করেছে। অংশগ্রহণ ছাড়া ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন এই নির্বাচন গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার এক আয়োজন হিসেবেই ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
নির্বাচন কমিশনকে ধিক্কার জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিজের গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে যেভাবে প্রার্থী দিয়েছে, এর জন্য নির্বাচন কমিশন নিজের আরপিও অনুযায়ী প্রশ্ন পর্যন্ত করেনি।
সংবাদ সম্মেলনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।