জামানত টিকিয়ে রাখতে প্রাপ্ত ভোটের ৮ ভাগের এক ভাগ ভোট পেতে হয় প্রার্থীদের। এ পরিমাণ ভোট না পাওয়ায় জামানত হারালেন রংপুরের ৬ আসনে ২৩ প্রার্থী, গাইবান্ধা-১ আসনে ৮, হবিগঞ্জ জেলায় দুই ডজন, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে বিএনএম মহাসচিবসহ ৫ এবং আজমিরীগঞ্জ বানিয়াচংয়ে সাত সংসদ সদস্য প্রার্থী। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
রংপুর প্রতিনিধি জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ৬ আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র ২৩ জন প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। জামানত টিকিয়ে রাখতে প্রাপ্ত ভোটের ৮ ভাগের এক ভাগ ভোট না পাওয়ায় তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয় বলে জানিয়েছেন রংপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল্যাহ্ আল মোতাহাসম।
রংপুর জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুর-১ আসনে মোট প্রার্থী ছিলেন ৯ জন। এদের ৭ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। তারা হলেন- ৩৫০ ভোট পেয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির বখতিয়ার হোসেন (হাতুড়ি), ৪০৯ ভোট পেয়ে তৃণমূল বিএনপির বদরুদ্দোজা চৌধুরী (সোনালী আঁশ), ১৫১ ভোট পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশারফ হোসেন (মোড়া), ২ হাজার ৭৫৪ ভোট পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহিনুর আলম (ঈগল), ১৫৭ ভোট পেয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি হাবিবুর রহমান (আম), ২৩০ ভোট পেয়ে বাংলাদেশ কংগ্রেসের শ্যামলী রায় (ডাব) ও ১০ হাজার ৮৯২ ভোট পেয়ে জাতীয় পার্টির হোসেন মকবুল শাহরিয়ার (লাঙ্গল)।
রংপুর-৩ আসনে মোট প্রার্থী ৬ জন। এদের মধ্যে ৪ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তারা হলেন- ৫৫৭ ভোট পেয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আব্দুর রহমান রেজ (একতাড়া), ২০৩ ভোট পেয়ে বাংলাদেশ কংগ্রেসের এশরামুল হক (ডাব), ২ হাজার ৩১৮ ভোট পেয়ে জাসদের সহিদুল ইসলাম (মশাল) ও ২৬৭ ভোট পেয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শফিউল আলম (আম)।
রংপুর-৫ আসনে মোট প্রার্থী ছিলেন ৮ জন। এদের মধ্যে ৬ জনের জামানত বাতিল হয়। তারা হলেন- ১১৫ ভোট পেয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া (একতারা), ১০ হাজার ৩৩৪ ভোট পেয়ে জাতীয় পার্টির আনিছুর রহমান (লাঙ্গল), ১ হাজার ৩২৬ ভোট পেয়ে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট বিএনএফ আব্দুল বাতেন (টেলিভিশন), ১০৭ ভোট পেয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আব্দুল হালিম মন্ডল (গামছা), ২৬৫ ভোট পেয়ে ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের এনামুল হক (চেয়ার) ও ৩২৭ ভোট পেয়ে বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. মাহবুবুর রহমান (ডাব)।
রংপুর-৬ আসনে মোট প্রার্থী ৭ জন। এর মধ্যে ৫ জনের জামানত বাতিল হয়েছে। এরা হলেন, ৪৭৯ ভোট পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাকিয়া জাহান চৌধুরী (কাঁচি), ১৮৪ ভোট পেয়ে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির জাকারিয়া হোসেন (হাতঘড়ি), ৯ হাজার ১৬ ভোট পেয়ে জাতীয় পার্টির নুর আলম মিয়া (লাঙ্গল), ১৬৯ ভোট পেয়ে বাংলাদেশ কংগ্রেসের মাহবুল আলম (ডাব) ও ৩২১ ভোট পেয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির হুমায়ুন ইজাজ (আম)।
গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে বেসরকারি ফলাফলে জাসদের প্রার্থীসহ ৮ জন প্রার্থী তাদের জামানত হারিয়েছেন। এ আসনের ঘোষিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশনের বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো প্রার্থীকে জামানত রক্ষা করতে হলে মোট প্রদত্ত ভোটের (কাস্টিং ভোট) ৮ ভাগের এক ভাগ থেকে অন্তত একটি ভোট বেশি পেতে হবে। এ আসনে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯২টি ভোট কাস্টিং হয়েছে। জামানত রক্ষার জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল ১৪ হাজার ৫১১ ভোটের। সে হিসাবে ৮ জন প্রার্থী তাদের জামানত হারিয়েছেন। যেসব প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন তারা হচ্ছেন- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের গোলাম আহসান হাবীব মাসুদ মশাল, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির আইরিন আক্তার, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের খন্দকার রবিউল ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মর্জিনা খান আম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মো. আবু বক্কর সিদ্দিক গামছা, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. ফকরুল হাসান, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ'র ওমর ফারুক সিজার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়নাল আবেদীন।
হবিগঞ্জ ও আজমিরীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জ জেলায় ৩১ জন সংসদ সদস্য প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। যারা প্রদত্ত ভোটের সাড়ে ১২ শতাংশের কম পেয়েছেন তাদেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
জামানত হারানো প্রার্থীদের মধ্যে হবিগঞ্জ-১ আসনে ৩ জন; হবিগঞ্জ-২ আসনে ৭ জন; হবিগঞ্জ-৩ আসনে ৮ জন এবং হবিগঞ্জ-৪ আসনের বাকি ৬ জন।
হবিগঞ্জ-১ আসনে গাজী মোহাম্মদ শাহেদ ট্রাক প্রতীকে ৩১৯, মোস্তাক আহমদ ফারকানী মিনারে ৩১৭ এবং নুরুল হক গামছা প্রতীকে ২১৩ ভোট পাওয়ায় জামানত হারাচ্ছেন।
হবিগঞ্জ-২ আসনে এসএএম সোহাগ (নোঙ্গর)-১৪৫, মনমোহন দেবনাথ (গামছা)-৫৪, খায়রুল আলম (সোনালী আঁশ)-৩১০, মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ (চেয়ার)-১৪১, জিয়াউর রশিদ (ডাব)-১৭০, শংকর পাল (লাঙ্গল)-২৫৩ ও শেখ হিফজুর রহমান (মিনার)-৪২১ ভোট পাওয়ায় জামানত হারাচ্ছেন।
হবিগঞ্জ-৩ আসনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪১২টি। এর মধ্যে আব্দুল মুমিন চৌধুরী (লাঙ্গল) ৪ হাজার ৭৬, আদম আলী (ফুলের মালা)-২৮৪, আনছারুল হক (গোলাপ ফুল)-৮৮৫, আব্দুল ওয়াহেদ (চেয়ার)-৪৪৪, আব্দুল কাদির (আম)-২৮৫, নোমান হাছান (ডাব)-২১২, বদরুল আলম সিদ্দিকী (নোঙ্গর)-৩৫২ এবং শাহীনুর রহমান (ছড়ি)-১৫১ ভোট পেয়ে জামানত হারাচ্ছেন।
এছাড়া হবিগঞ্জ-৪ আসনে আবু সালেহ (মিনার)- ১৭৩, আহাদ উদ্দিন চৌধুরী (লাঙ্গল)- ৪১৭, মোহাম্মদ আব্দুল মমিন (চেয়ার)-৩৩৭, আল আমিন (ডাব)- ৫৪০, মোখলেছুর রহমান (নোঙ্গর)- ৩৯৩ ও রাশেদুর ইসলাম খোকন (ছড়ি)- ১৬৭ ভোট পেয়ে জামানত হারাচ্ছেন।
ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) প্রার্থী ও দলের মহাসচিব ডক্টর মোহাম্মদ শাহজাহান এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও দলের চেয়ারম্যানের বৈদেশিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা রেশখ সাজ্জাদ রশিদ সুমনসহ এই আসনের ৫ জন প্রার্থীর জামায়াত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। নির্বাচনে বিএনএম প্রার্থী ডক্টর মোহাম্মদ শাহজাহান (প্রতীক- নোঙ্গর) পেয়েছেন ১০৭৪ ভোট, জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাজ্জাদ রশিদ (প্রতীক- লাঙ্গল) পেয়েছেন ৫৯০ ভোট, তৃণমূল বিএনপি মোহাম্মদ আব্দুল কাদের তালুকদার (প্রতীক- সোনালী আঁশ) পেয়েছেন ৩৬০ ভোট, তরিকত ফেডারেশন প্রার্থী বাকী বিলস্নাহ মিশকাত (প্রতীক- ফুলের মালা) পেয়েছেন ২০১ ভোট, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি প্রার্থী আবদুল গণি প্রতীক (আম) পেয়েছেন ২০৮ ভোট।