কালিদাস এলেন ভোটও দিলেন

প্রকাশ | ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিচ্ছেন কালিদাস -সংগৃহীত
যাত্রাবাড়ীর একটি কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন ঢাকা শহরে এক সময় জুতা মেরামতের কাজ করা কালিদাস। তখন এই শীতেও তার পায়ে জুতা ছিল না। পরনে ছেঁড়া কালো জ্যাকেট আর ময়লা জিন্স, মাথায় আবার বিছিয়ে দিয়েছেন রুমাল। ভোটকেন্দ্রের ফটকে প্রথমে বাধা পেলেও পরে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সহযোগিতায় নিজের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করেন এই শহরের রাস্তায় রাস্তায় 'ভবঘুরে' হয়ে ঘুরে বেড়ানো এই বয়স্ক মানুষটি। ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি কেবল ভোট দিতেই এসেছিলেন, তার আর কোনো কথা নেই। কালিদাসকে প্রথমে চোখে পড়ে সকাল সোয়া ১০টার দিকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ফটকে। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ির কালিদাসের পথ আটকে দাঁড়ান ওই কেন্দ্রের ফটকের দায়িত্বে থাকা এক আনসার সদস্য। সে সময় পকেট থেকে বের করা ভোটার নম্বর লেখা চিরকুট দেখিয়ে ভেতরে ঢোকার ছাড়পত্র মেলে কালিদাসের। তার ধীর পায়ে কোনোরকমে হাঁটাচলা দেখে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. সুজন একজন আনসার সদস্যকে দায়িত্ব দেন কালিদাসকে ওপর তলার কেন্দ্রে নিয়ে যেতে। আনসার সদস্য এগিয়ে কালিদাসের হাত ধরতে চাইলে তিনি প্রথমে সরিয়ে দেন। পরে অবশ্য ওই আনসারের হাত ধরেই ধীরে ধীরে ওপরে উঠে আসেন; ভোটও দেন। কথা বলতে চাইলে খুব নিচু স্বরে বলেন, 'ভোট দিছি, ভোট দেওয়া শ্যাষ।' আর কোনো কথা না বলে হাতের ইশারায় সরে যেতে বললেন কালিদাস। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যাত্রাবাড়ী, কুতুবখালী এলাকায় এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় কালিদাসকে। ওই কেন্দ্রে উপস্থিত ওবায়দুলস্নাহ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, 'কালিদাস মানসিকভাবে অসুস্থ। আগে জুতার কাজ করলেও এখন এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ান। পথঘাট থেকে কুড়িয়ে খাবার খেতে দেখা যায় তাকে।' কালিদাসের পরিবার বা ছেলেমেয়েদের খবর জানাতে পারলেন না ওবায়দুলস্নাহ। ওবায়দুলস্নাহ জানালেন, কোনো প্রার্থীর লোকজনই হয়তো কেউ তাকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন। মো. সুমন নামে ট্রাক মার্কার প্রার্থী মশিউর রহমান মোলস্না সজলের এক কর্মী জানান, তাদের কর্মীরা কালিদাসকে ভোটকেন্দ্র দেখিয়ে দিয়েছেন। ঢাকার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে প্রবেশ মুখের আসন ঢাকা-৫ আসনের ভোটার কালিদাস। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই আসনের ভোটার সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। তবে সকাল থেকে কেন্দ্রগুলোয় ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। কুতুবখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. সুজন বলেন, তার কেন্দ্রে ভোটার প্রায় সোয়া তিন হাজার। সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মোটে ১২৩টি। এ এলাকায় রয়েছে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল। ভোটারদের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও আছে শ্রমজীবী ও ব্যবসায়ীরা।