দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে আগাম জাতের আলুর ভালো মূল্য পেয়ে খুশি চাষিরা। এবার আবহাওয়া অনুকূল, খরচ কম উৎপাদিত আলুর বাজারদর ভালো পাওয়ায় আগাম জাতের আলু চাষ করে কৃষকরা লাভের মুখ দেখছেন।
পাইকারি বিক্রেতারা কৃষকদের ক্ষেত থেকেই আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ২ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার ৯৯ টন।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার নশরতপুর, সাতনালা, ফতেজংপুর, সাঁইতাড়া, আব্দুলপুর, ঈসবপুর, আলোকডিহিসহ বিভিন্ন গ্রামে চাষিরা আগাম জাতের আলু তুলতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন।
আগাম জাতের আলুর মধ্যে গ্রানুলা, রোমানা, পাকরি, বটপাকরি, ফ্রেশ, ক্যারেজ তোলা হচ্ছে। চাষিরা জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে প্রতিবিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু উৎপাদনে জমি প্রস্তুত, সেচ, সার, বীজ, শ্রমিকের মজুরি, কীটনাশক, আলু উত্তোলন খরচ এবং জমির চুক্তিসহ খরচ পড়েছে অন্তত ৫৫-৬০ হাজার টাকা।
প্রতি বিঘা জমিতে হচ্ছে গড়ে আড়াই হাজার কেজি। এ বছর আলুর গছের (চারা) দাম বেশি থাকায় প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে কমপক্ষে ২৮-৩০ টাকা। প্রতি কেজি আলু পাইকারি ৪৫-৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার আলোকডিহি ইউনিয়নের গছাহার গ্রামের দেলোয়ার হোসেন বলেন, আগাম জাতের আলুতে খরচের চেয়ে দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন।
ওই গ্রামের আরেক কৃষক মাইজার রহমান বলেন, 'আমি এ বছর দেড় বিঘা জমিতে আগাম জাতের রোমানা আলু চাষ করেছি। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। ক্ষেত থেকেই পাইকাররা প্রতি কেজি আলু ৫৫ টাকা দরে কিনছেন।'
চিরিরবন্দরের আলুচাষি ময়ছার আলী জানান, 'আমি এবার দেড় বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু লাগিয়েছি। মাত্র ৫৫ দিন পরে ক্ষেত থেকে নতুন আলু তুলতে শুরু করেছি। আলুর ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় তেমন কীটনাশক স্প্রে করতে হয়নি। দেড় বিঘা জমিতে আলু উৎপাদনে আমার ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আলু বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে যেতে হয়নি। পাইকাররা জমি থেকে প্রতি কেজি আলু ৪৩ টাকা দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। দেড় বিঘা জমিতে উৎপাদন খরচ বাদ দিলেও ২ লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছি।'
উপজেলার দক্ষিণ পলাশবাড়ী গ্রামের আলুচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমি প্রায় ৪ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। আলু তুলতে আর সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে। শীত আর কুয়াশা কম হওয়ায় আলুর উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম হয়েছে। আলুর বাজারদর ভালো থাকলে লাভ হবে।'
আলুর পাইকারি ক্রেতা মো. মফিজুল ইসলাম ও জামিল হোসেন বলেন, বাজারে আগাম জাতের আলু উঠতে শুরু হয়েছে। এসব আলু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ বছর আলুসহ সব ধরনের সবজির প্রচুর দাম পাচ্ছেন চাষিরা।
উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. খাদেমুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা ফসলের মাঠ থেকে আগাম জাতের আলু উত্তোলন শুরু করেছেন। আলু চাষিদের কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আগাম জাতের আলুর ফলন তুলনামূলক কম হয়ে থাকলেও এবার ফলন সন্তোষজনক হয়েছে। আগামী মৌসুমে আগাম জাতের আলু চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, চাষিরা আগাম জাতের আলু ক্ষেত থেকে ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে উত্তোলনের পর জমিতে পুনরায় ভুট্টা ও বোরোধান চাষ করতে পারবেন। প্রতি হেক্টর জমিতে ১৭ টন আগাম জাতের আলুর ফলন হয়েছে। এ বছর বাজারে নতুন আলুর ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা লাভবান হচ্ছে।