নাইক্ষ্যংছড়িতে কুল চাষে স্বাবলম্বী বেকার ১০ যুবক প্রতি মৌসুমে আয় লাখ টাকা
প্রকাশ | ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের কাগজিখোলা এলাকায় কুল চাষে স্বাবলম্বী ওরা ১০ বেকার যুবক। ১ হাজার ৫শ কুলগাছ রোপণ করে মৌসুমে আয় করছেন প্রায় লাখ লাখ টাকা। এক সময়ের বেকার ১০ যুবকের এমন সাফল্য সাড়া ফেলেছে এলাকায়। তাদের এ সাফল্য দেখে অন্যরাও ঝুঁকছেন কুল চাষে। বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেতে ইউটিউব দেখে কৃষি ক্ষেত্রে কিছু করা যায় কিনা ভাবতে থাকেন সাজোয়ার, কামাল, নেজাম উদ্দিন, আবদুস শুক্কুর, শাহ আলম, সাদেক ও ওমর ফারুকসহ বেকার ১০ যুবক। তৎকালীন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করেন এবং তার পরামর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে নেমে পড়েন কুল চাষে। নিজেদের পর্যাপ্ত জমি না থাকায় ২০২০ সালে ৫ একর জমি ইজারা নিয়ে কাশ্মীরি কুল, ভারতী সুন্দরী কুল ও বল সুন্দরী কুল চারা নিয়ে শুরু করেন কুল চাষ। গত ২০২০ সালের শুরুতে রামু ঈদগড় এলাকার এক বাগান থেকে সংগ্রহ করেন ৩ প্রজাতির কুল গাছ। গত ২ বছর তেমন লাভবান না হলেও গত বছরের চেয়ে এ বছর ফল ধরেছে সব গাছে। গাছে গাছে দুলছে থোকায় থোকায় কুল। আকার, স্বাদে ভালো হওয়ায় বাজারে চাহিদাও বেশ। প্রথমে ১২০ টাকা কেজি বাজারে বিক্রি শুরু করেন। এখন বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। প্রতিদিন ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকার কুল বিক্রি হচ্ছে। সাজোয়ার কামাল জানান, বছরের ডিসেম্বর থেকে ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত ৩ মাস (কুল) বড়ই বিক্রি করতে পারে। তিনি বলেন, সরকারিভাবে যদি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা থেকে সহযোগিতা বা পরামর্শ পাওয়া যেত তাহলে বছরের ৫০ লাখ টাকার উপরে কুল বিক্রি করা সম্ভব হতো। তবে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণের কোনো সহযোগিতা পরামর্শ তারা পাচ্ছেন না বলে জানালেন। নেজাম উদ্দিন বলেন, ৫ একর জমি বার্ষিক ১ লাখ টাকা ইজারা নিয়ে এই কুলবাগান গড়ে তুলেছি। এখানে ৩ ধরনের কাশ্মীরি কুল, বনসুন্দরী কুল ও ভারতী সুন্দরী কুল আছে। ফলন দেখে তিনি অনেক খুশি। তিনি আরও জানান, প্রথমে মাছ চাষ করতে গিয়ে লোকসান হলেও এখন কুল চাষ করে তা পুষিয়ে নেওয়া গেছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাগান থেকেই কুল কিনে নিয়ে যান এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পর্যটকরা প্রতিদিন বাগান থেকে কুল নিয়ে যায়। এই বাগানের বাউকুল খুবই মিষ্টি। তাই চাহিদাও বেশি। জেলার চাহিদা পূরণ করে এই বাগানের কাশ্মীরি কুল সরবরাহ করা হয় চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। লাভবান হওয়ায় গ্রামের অনেকে বিষাক্ত তামাক চাষ ছেড়ে বাউ কুল চাষে এগিয়ে আসছেন। এসব দেখে এলাকার কয়েকজন বেকার যুবকদের নিয়ে শুরু করেছেন নতুন করে কুল চাষ। তাদের বাগানে আগামী বছর থেকে কুল উৎপাদন শুরু হবে বলে জানালেন। বর্তমানে নেজামসহ ৩ শ্রমিক নিয়ে পুরো বাগানের পরিচর্যা করেন। কুল চাষিরা জানান, আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এ বছর বাগানে পর্যাপ্ত ফলন হয়েছে। গতবারের চেয়ে বেশি আয় করা সম্ভব। পাশাপাশি উক্ত জায়গার কুল গুলু রসালু ও সুস্বাধু। তাই এ ফলের চাহিদাও বেশি। এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইনামুল হক বলেন, 'বিষয়টি তাদের নয়। তাই কুল চাষিদের আমাদের পক্ষ থেকে কি করে সহযোগিতা করব। তার পরেও সরেজমিন পরিদর্শন করে কৃষকদের সাথে পরামর্শ করে আরো যাতে ভালো করা যায় সে বিষয়ে খেয়াল করব। কুল চাষিদের দাবি সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা না পেলে ও কৃষি অফিসারদের সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে আমরা আরো এগিয়ে যেতাম।'