পীরগঞ্জে অরেঞ্জ ভ্যালিতে কমলার বাম্পার ফলন

৫০ লাখ টাকা বিক্রি হবে লক্ষ্যমাত্রা

প্রকাশ | ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে কুল বাগান পরিচর্যা করছেন কৃষক -যাযাদি
চারদিকে সবুজ মাঠে ঘেরা। মাঝখানে বাগানের সারিবদ্ধ গাছের ডালে ঝুলছে হলুদ রঙের বড় আকারের থোকায় থোকায় সুমিষ্ট কমলা। কমলার ভারে দুলে পড়েছে গাছের ডাল। এমন কমলা বাগান দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত মানুষ আসছেন। ঘুরেফিরে গাছ থেকে পেরে খাচ্ছেন চোখের সামনে পড়া পাকা কমলা। ছবি বা সেলফি তুলছেন বন্ধুবান্ধব বা পরিবার-পরিজন নিয়ে। কমলা কিনে হাসিমুখে বাড়ি ফিরছেন। সমতল ভূমিতে এমন কমলা বাগানের দেখা মিলবে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার উত্তর মালঞ্চা গ্রামে। বাগানটির নাম দেওয়া হয়েছে বীরগলী অর্গানিক অরেঞ্জ ভ্যালি। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানান, এ অঞ্চলের মাটি কমলা তথা লেবু জাতীয় ফল উৎপাদনের জন্য উপযোগী। এ জন্য এরই মধ্যে অরেঞ্জ ভ্যালিসহ আরও বেশ কয়েকটি কমলা ও মাল্টা বাগান হয়েছে। অরেঞ্জ ভ্যালি সারা দেশে বেশ নাম করেছে। ঐ বাগানের কমলা সুমিষ্ট ও রসালো। ১ ডিসেম্বর থেকে বাগান থেকে কমলা তোলা শুরু হয়েছে। বাইরে বিক্রি করা হয় না এখানকার কমলা। বাগানেই বিক্রি করা হচ্ছে তিনশ' টাকা কেজি দরে। বাগানের সাড়ে চারশ' গাছ থেকে এবার কমলা পাওয়া যাবে প্রায় ১৬ হাজার কেজি। সে হিসেবে ৫০ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা বাগান মালিকের। বাগান মালিক উপজেলার বীরহলি গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা আবু জাহিদ ইবনুল ইকরাম জুয়েল জানান, ১৪ বছর আগে ১ একর ৫০ শতক জমিতে ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলার বাগান করেন তিনি। শুরুতে বাগানটিতে আড়াইশ' কমলা গাছ রোপণ করা হয়। এখান থেকে বেশ আয় হয় তার। দুই বছর আগে পাশের আম বাগান কেটে সেখানে আরও দুইশ' কমলা চারা রোপণ করা হয়। এবার সব গাছেই ফল ধরেছে। গত বছর এ বাগানের আড়াইশ' গাছের কমলা থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছিলেন তিনি। এবার সাড়ে চারশ' গাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন। বাগানে প্রচুর দর্শনার্থী আসছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। তাদের রেস্ট নিতে এবার বাগানের ভিতরে দুটি কটেজ ও খাবারের জন্য একটি রেস্টুরেন্টও চালু করা হয়েছে। সন্ধ্যায় বাগানের দৃশ্য দেখতে বিশেষ আলোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দর্শনার্থীর চাপ কমাতে বাগানে প্রবেশের জন্য ৪০ টাকা প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ অবস্থায় এখন প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে তিনশ' দর্শনার্থী বাগানে আসছেন বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। তার পরেও ভিড় সামাল দিতে মালিকসহ ১৫ জনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ রকম চলবে আগামী বছরের ফেব্রম্নয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত। উদ্যোক্তা জুয়েল আরও জানান, কমলা একটি অর্থকরী ফসল, যা খুব সহজে ও স্বল্প খরচে উৎপাদন করা যায়। তার বাগানে কমলার চারাও উৎপাদন করা হয়। কেউ যদি এমন বাগান করতে চায় তাহলে তার পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন। সম্প্রতি বিকেএসপি'র পরিচালক ফুয়াদ হাসান কমলা বাগান পরিদর্শনে এসে মুখ হয়ে বাগানে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, দেশেই এমন কমলা বাগান হতে পারে তা স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাসই করা যায় না। মনে হচ্ছে দার্জিলিংয়ের কোনো এক কমলা বাগানে ঘুরছি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সেনা কর্মকর্তা জানান, সপরিবারে ঘুরে আসার মতো একটি চমৎকার জায়গা এ কমলা বাগান। সহকারী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান জানান, অরেঞ্জ ভ্যালির সাফল্য দেখে তারা পীরগঞ্জ-বোচাগঞ্জ পাকা সড়কে বাঁশগাড়া এলাকায় একটি কমলা বাগান করেছেন। তাদের বাগানেও ফল আসতে শুরু করেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া কমলা তথা লেবু জাতীয় ফলের জন্য উপযোগী। অরেঞ্জ ভ্যালি এর উদাহরণ। এ জাতীয় ফল বাগান করতে তাদের পক্ষ থেকে চাষিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। চাষিরাও আগ্রহী হচ্ছেন। এতে তারা লাভবানও হচ্ছেন। আগামীতে কৃষি অর্থনীতিতে লেবু জাতীয় ফল উৎপাদন বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেই এ কৃষিবিদ।