ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস শিক্ষা কর্মকর্তার
বই বিতরণে অর্থ আদায়ের অভিযোগ জড়িতদের শাস্তি দাবি
প্রকাশ | ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি
রাজিফা আকতার। প্রত্যন্ত এলাকার একটি দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। পড়াশুনা করার অদম্য ইচ্ছে। কলম বা শিক্ষা সামগ্রী কেনা তো দূরে কথা তাদের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরাই অবস্থা। তবুও পড়তে হবে। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। বছরের প্রথম দিন অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতো সেও বিদ্যালয়ে গিয়েছিল বিনামূল্যের সরকারি পাঠ্য বই আনতে। কিন্তু শিক্ষকদের দাবি করা টাকা দিতে না পারায় হতাশ হয়ে কান্না করতে করতে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাকে।
শুধু রাজিফা আকতার নয়, টাকা দিতে না পারায় খালি হাতে বাড়ি ফিরেছে অনেকেই। বিদ্যালয় থেকে নতুন বই পেতে শিক্ষার্থীদের থেকে জনপ্রতি ৭৫০-৮০০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাইগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ভর্তি ও পরীক্ষার ফরম বাবদের কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে স্স্নিপ দিয়ে নেওয়া হয় টাকা। স্স্নিপ দেখিয়ে বই সংগ্রহের পর শিক্ষার্থীদের থেকে আবার সেই স্স্নিপ ফেরত নেওয়া হয়। নতুন বই পাওয়ার আশায় বাধ্য হয়ে টাকা দিয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। এতে ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও এলাকাবাসী। অভিযোগের ভিত্তিতে বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, বিষয়টি জানার পর ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসী। তারা প্রধান শিক্ষকের শাস্তি দাবি করেন।
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজিফা আকতার জানায়, 'বছরের প্রথম দিনে স্কুলে বই নিতে আসি। পরে স্যারকে বললে, স্যার টাকা ছাড়া বই দেওয়া যাবে না বলেন। তখন বাড়িতে গিয়ে কান্নাকাটি করে মাকে বলি টাকা ছাড়া বই দেয়নি। বই না পেয়ে অনেক খারাপ লাগছে।' রাজিফার মা শাহিদা বেগম বলেন, 'বছরের প্রথম দিন প্রধানমন্ত্রী বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের বই বিতরণ করার ঘোষণা দিয়েছেন। সেখানে আমার মেয়ে টাকা না দিতে পারায় বছরের প্রথম দিন বই না পেয়ে কান্না করতে করতে বাড়িতে আসে। পরে তাকে টাকা দিয়ে বই নিয়ে আসার কথা বলি।' মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান তিনি।
একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আসিফ হোসেন বলে, 'প্রথম দিন টাকা নিয়ে না আসায় বই দেওয়া হয়নি। তাই আবার বাড়ি গিয়ে ৮০০ টাকা নিয়ে এসে নতুন বই নিয়েছি।' মেহেদী হাসান ও বাধনসহ আরও ২-৩ জন শিক্ষার্থী বলে, 'প্রথম দিন বই নিতে আসলে স্যার জিজ্ঞাসা করে টাকা নিয়ে আসছি কিনা। পরে টাকা নিয়ে আসার কথা বললে একটা স্স্নিপ দেয়। সেই স্স্নিপ দিয়ে বই সংগ্রহ করি। পরে সেই স্স্নিপ আবার ফেরত নেওয়া হয়।'
অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম শাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি চুপ ছিলেন। কোনো উত্তর দেননি। বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি অসিত চন্দ বলেন- 'টাকার বিনিময়ে বই দেওয়ার নিয়ম নেই, এটা ঠিক নয়। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখব। আর যারা বই পায়নি তাদের কাছে বই পৌঁছানো হবে।'
নওগাঁ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, কোনো শিক্ষক টাকার জন্য শিক্ষার্থীকে নতুন বই না দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।