শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

হোসেনপুরে লাউচাষে ভাগ্যবদল

হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
হোসেনপুরে লাউচাষে ভাগ্যবদল

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে চলতি মৌসুমে লাউসহ শীতকালীন বিভিন্ন সবজির ব্যাপক চাষ করেছেন কৃষকরা। এবার শুধু লাউচাষ করে সারা উপজেলায় এক হাজারের বেশি কৃষক সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অনেকেই লাখ টাকার মালিক হয়েছেন।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে লাউসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির বাম্পার ফলন হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরাও এবার মহাখুশি। স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দার চরাঞ্চলসহ আশপাশের এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে শাকসবজির আবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে সবজি চাষে খেটেখাওয়া মানুষের ব্যাপক আর্থিক অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে। লাউসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার স্বল্পআয়ের অনেক কৃষক পরিবার আজ সাবলম্বী।

উপজেলার সাহেবেরচর গ্রামের কৃষক আল-আমিন, সাইফুল ইসলাম, চর জিনারী গ্রামের কৃষক নবী হোসেন, কৃষক রুস্তম আলীসহ অনেকেই জানান, বিগত সময় চরাঞ্চলের কৃষকরা বালুমিশ্রিত জমিতে মিষ্টি আলু, মাষকলাই ও বাদাম ছাড়া অন্য কোনো ফসল উৎপাদনের চিন্তাও করতেন না। বর্তমানে সেচ সুবিধাসহ বিভিন্ন কৃষিপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব এলাকায় লাউ, কপি, মুলা ও কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করে প্রতিটি কৃষকই তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। তাই হোসেনপুরের সর্বত্রই এখন অর্থকরী ফসল হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে লাউসহ বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজি। এখানকার উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন মৌসুমি সবজি ব্যবসায়ীরা।

প্রসঙ্গত, উপজেলার কাওনা গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম, পুমদি গ্রামের জামির হোসেনসহ অনেকেই জানান, পরিশ্রম করে এখানকার কৃষকরা সবজি উৎপাদন করলেও লাভের বেশিরভাগ অংশ চলে যায় ফরিয়াদের পকেটে। কারণ হিসেবে তারা বলেন, সবজি সংরক্ষণের জন্য হোসেনপুরে কোনো হিমাগার না থাকায় ক্ষেত থেকে সবজি তোলার পরপরই কৃষকরা পচনের আশঙ্কায় তড়িঘড়ি করে কিছুটা কম মূল্যে ফরিয়াদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হন।

উপজেলার চর হাজীপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল ও চর জামাইল গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন প্রতিকূলতা পেরিয়ে এবার লাউয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে এ বছর লাউসহ বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই তা বিক্রি করে আয় করেছেন লাখ টাকার বেশি।

এ ছাড়া উপজেলার রহিমপুর গ্রামের কৃষক শামসুল ইসলাম, চর হাজীপুর গ্রামের জসিম উদ্দীন, দাপুনিয়ার ফারুক আহমেদ, উত্তর গোবিন্দপুরের ফরহাদ হোসেনসহ শতাধিক কৃষক সবজি চাষে লাখোপতি হওয়ার দাবি করেছেন। তাদের দেখাদেখি অনেকেই অন্য ফসল বাদ দিয়ে লাউসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষে ঝুঁকেছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ একেএম শাহজাহান কবির ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, চলতি বছর অনুকূল আবহাওয়ায় হোসেনপুর উপজেলার সর্বত্রই লাউ, শিম, মুলা, কপি, বেগুন, আলুসহ বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে হিমাগারের অভাব ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণের কার্যকরী উপায় না থাকায় স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজির ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই ভুক্তভোগীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে তারাও হোসেনপুরে একটি আধুনিক হিমাগার স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে