দেড় মাস আগে পেটের তাগিদে গভীর সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ হয় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর ২৫ জেলে। যাদের সন্ধান এখনও মেলেনি। তাই নতুন বছরে আনন্দ নেই ওইসব পরিবারের। বরং তাদের প্রশ্ন- নিখোঁজ জেলেদের ভাগ্যে কি ঘটেছে? জানতে চান তারা।
জানা গেছে, গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে গত ১৭ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় মিধিলির ঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ হয় ওই ২৫ জেলে। ঘটনার দেড় মাস হয়ে গেলেও তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ জেলেদের মধ্যে তিন বোনের তিন ছেলেও রয়েছে। তারা হলেন- উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামের জিসান, নয়াভাঙ্গুনি গ্রামের তামিম ও কামরুল।
একই ইউনিয়নের কাউখালী গ্রামের বাসিন্দা হাসান জোমাদ্দারের ট্রলারে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন তিন খালাতো ভাই। কিন্তু ঝড়ের পর বাড়ি ফেরা হয়নি তাদের। পরিবারের সঙ্গেও হয়নি কোনো যোগাযোগ। তাই দিশেহারা তাদের পরিবার। নিখোঁজ তিন জেলের মামা শিহাব উদ্দিন বলেন, 'প্রশাসনকে জানিয়েছি। আমরা ট্রলার নিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। এখনও খোঁজ-খবর নিচ্ছি। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। ওরা বেঁচে আছে নাকি নেই- তাও জানতে পারছি না।'
শুধু এই তিন জেলে পরিবারের এমন হতাশা নয়- বাকি ২২ জেলে পরিবারের ভাষ্যও একই। তারা বলছেন, 'বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। সুন্দরবন ও মোংলা গিয়েও অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়েছে। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও খোঁজ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।'
সংশ্লিষ্টদের তথ্যানুযায়ী, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির পর থেকে নিখোঁজ হয় উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কাউখালী গ্রামের বাসিন্দা হাসান জোমাদ্দারের ট্রলারের জিসান, তামিম, কামরুলসহ ৮ জন জেলে, মৌডুবী ইউনিয়নের কাজিকান্দা দিদার মৃধার ট্রলারের ৮ জন জেলে এবং একই এলাকার হিমু হাওলাদারের মালিকানাধীন ট্রলারের ৯ জন জেলে।
উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া মৎস্য সমিতির সভাপতি জহির উদ্দিন হাওলাদার বলেন, 'জেলেদের নিখোঁজের বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করেছি। সুন্দরবন, মোংলা এবং ভারতের বর্ডারেও ট্রলার নিয়ে খোঁজাখুঁজি করেছি। কিন্তু কোথাও তাদের কোনো সন্ধান পাইনি আমরা।'
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'নিখোঁজদের বিষয়ে আমরা এখনও কোনো ম্যাসেজ পাইনি। তাদের সন্ধানে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। কোস্টগার্ডকে বিষয়টি অবহিত করা আছে। এছাড়া নিখোঁজ জেলে পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। শীতার্তদের কম্বল দেওয়া হয়েছে। নিখোঁজদের মধ্যে খুবই অসহায় একজনকে বিনামূল্যে সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে।'