ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে ১০ প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে মাঠে আছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী মোহিত উর রহমান শান্ত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীক নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমিনুল হক শামীমের প্রচারণা চলছে জোরেশোরে। এতে এ আসনে বইছে নির্বাচনী আমেজ। ভোটের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই জমজমাট হচ্ছে প্রচারণা।
দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রচারণায় অনেকটা এগিয়ে আছেন আমিনুল হক শামীম। উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ একগুচ্ছ প্রতিশ্রম্নতি নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে চাইছেন ট্রাক মার্কায় ভোট। আমিনুল হক শামীম ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি। স্মার্ট ময়মনসিংহ গড়তে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জঙ্গিবাদ নির্মূল করে নিরাপদ সমাজ বিনির্মাণের পাশাপাশি নিজের অঙ্গীকারনামায় বেকারত্ব রোধে শিল্পনগরী গড়ে তুলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও যুব সমাজের বহুমুখী কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ময়মনসিংহের সঙ্গে সারা দেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন, সদর হাসপাতাল, গ্যাস সংযোগ স্থাপনে কার্যকর ভূমিকা রাখার ব্যাপারে তিনি জোর দিয়েছেন। এতে শামীমের ট্রাকে আকৃষ্ট হচ্ছেন ভোটাররা। দিন দিন ট্রাক প্রতীকে বাড়ছে জনমতও।
ভোটাররা বলছেন বলছেন, মার্কা নয়, যোগ্য ব্যক্তি দেখেই ভোট দেবেন তারা। এ অঞ্চলের উন্নয়নে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে যিনি ভূমিকা রাখবেন তাকেই বিজয়ী করতে চান সাধারণ ভোটাররা।
সদরের উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হক শামীম বলেন, 'মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রার্থী হয়েছি। বিভাগীয় শহর হওয়া সত্ত্বেও অন্যান্য জেলা থেকে উন্নয়নে পিছিয়ে রয়েছে। পার্শ্ববর্তী জামালপুর ও নেত্রকোনার সঙ্গে তুলনায় অনেক পিছিয়ে। নির্বাচিত হলে সদরসহ জেলার উন্নয়নের কাজ করার অঙ্গীকারবদ্ধ।'
তিনি বলেন, 'প্রথমেই আমার উদ্দেশ্য থাকবে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও চাঁদাবাজি মুক্ত করা। এ জনপদের আওয়ামী লীগের এমপি না থাকার কারণে জনপদের রাস্তাঘাটের যথাযথ উন্নয়ন হয়নি। স্বাস্থ্যসেবাসহ অন্য খাত প্রায় বিপর্যস্ত। নির্বাচিত হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত করা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়া হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও শিক্ষিত ছেলেমেয়ে যেন সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে অবদান রাখতে পারে এটি হবে আমার মূল লক্ষ্য।'
তিনি আরও বলেন, শহরে গ্যাস সংযোগ হলেও গ্রামে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়নি। সরকারের উদ্যোগ থাকলে গ্রামাঞ্চলে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী তিনটি ব্রিজ দিয়েছেন। এই ব্রিজগুলো হয়ে গেলে গ্রামাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। গ্রামাঞ্চলে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং উৎপাদিত সবজির সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এতে অনেক সময় অল্প দামে সবজি বিক্রি করতে হয়। চরাঞ্চলে সবজি সংরক্ষণের জন্য তিন থেকে চারটি সংরক্ষণ গোডাউন স্থাপন করা হবে।
শামীম আরও বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যতবার দেখা হয়েছে এবং বিদেশে সফরে গেছি সুযোগ হলে প্রথমেই বলেছি এ জেলায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে। দেশের প্রতিটি জেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে নেত্রীর নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বিভাগীয় এ শহরে অজ্ঞাত কারণে এখানে অর্থনৈতিক জোন হয়নি। উনার নির্দেশনায় অর্থনৈতিক জোন অনেকটা এগিয়ে গেছে। আশা করি, আগামী সংসদে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসলে এই অর্থনৈতিক জোনের কাজটি সমাপ্ত হবে। সেখানে প্রত্যক্ষভাবে এক লাখ ও পরোক্ষভাবে ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। সেইসঙ্গে ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত মানুষ যেন সুবিধা ভোগ করতে পারে সে জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে একটি করে অফিস করা হবে। যাতে নাগরিকদের সমস্যা দ্রত সমাধান করা যায়।'
আমিনুল হক বলেন, 'ময়মনসিংহে শিক্ষার হার অন্যান্য বিভাগের চেয়ে কম। আমি নির্বাচিত হলে চরাঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হবে। শিক্ষার সঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও অনুন্নত। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যা আরও উন্নত করা প্রয়োজন সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখব। শহর ও গ্রামের কিছু এলাকায় বস্তি কিংবা আশ্রয়ণ কলোনি রয়েছে। বিভিন্ন অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বস্তিগুলোকে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এবং বিদেশি সহায়তায় বিটুবি প্রকল্পের আওতায় এনে বস্তিবাসীর জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'ময়মনসিংহ সদরে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ না থাকার কারণে শিশু-কিশোর খেলাধুলায় অভ্যস্ত নয়। সদরে এমনভাবে উন্নয়ন করব যেন গ্রাম ও শহরের মধ্যে পার্থক্য না থাকে। পরিবহণ ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষকের ন্যয্যমূল্য প্রাপ্তি এবং কৃষিঋণ প্রাপ্তিতে ব্যাংক ও কৃষকের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি ঘটানোর চেষ্টা করব। সদের হিন্দু-মুসলমান অসাম্প্রদায়িক ভাতৃত্ববোধ নিয়ে সহাবস্থান করে। মন্দির-মসজিদগুলো কীভাবে উন্নয়ন করা যায় সবার সঙ্গে কথা বলে সে ব্যবস্থা করা হবে।'