আগামী ১-৭ জানুয়ারি আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগসহ সারা দেশের আদালত বর্জনের কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি ও জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা। রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তারা আদালত বর্জনের শপথ নেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির শীর্ষ আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা এখান থেকে শপথ নিলাম সোমবার থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত আদালতের কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করব না। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আইনজীবীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
এ সময় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, জামায়াত সমর্থিত বাংলাদেশ ল'ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, ইউনাইটেড ল'ইয়ার্স ফ্রন্টের কো-কনভেনর অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুবসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ১-৭ জানুয়ারি আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগসহ সারা দেশের আদালত বর্জনের ঘোষণা করে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। গত বুধবার সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
'ডামি নির্বাচন বর্জন, কর্তৃত্ববাধীন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে জনগণের অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জ্ঞাপন এবং আইনজীবীদের কর্মসূচি ঘোষণা উপলক্ষে' এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তিনি বলেন, দেশ ও জাতির এই চরম যুগ সন্ধিক্ষণে দেশের বৃহত্তম এবং জনপ্রিয় আইনজীবী সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম জনগণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ডামি নির্বাচন বর্জন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আমরা নিম্নরূপ কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
আগামী ১ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ, সমস্ত জেলা আদালত, সেশন্স আদালত, মুখ্য মহানগর হাকিমদের আদালত, মুখ্য জুডিশিয়াল আদালতসহ সমস্ত আদালত বর্জন কর্মসূচি পালন করা হবে।
কায়সার কামাল বলেন, সরকার বা সরকারের কোনো অনুচরের উসকানিতে পা না দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে এই গণতান্ত্রিক কর্মসূচি সফল করার জন্য দেশের আইনজীবী সমাজের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।
'এই কর্মসূচি আইনের শাসনের পরিপন্থি'
এদিকে, রোববার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আবদুন নূর দুলাল বলেছেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আদালত বর্জনের কর্মসূচি গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের পরিপন্থি ও বিচার কার্যক্রমে সরাসরি হস্তক্ষেপ। এইরূপ কর্মসূচি বিচারপ্রার্থী মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকারের পরিপন্থি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন একটি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা এবং বাধ্য-বাধকতা। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ধারাবাহিকতার জন্য নির্বাচন অপরিহার্য। সারা দেশে নির্বাচনী আবহ তৈরি হয়েছে এবং জাতি ৭ জানুয়ারি, ২০২৪ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বা না করা যে কোনো রাজনৈতিক দলের নিজস্ব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু নির্বাচন প্রতিহত করার নামে একটি রাজনৈতিক দলের আইনজীবী ফোরাম ১ জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত আদালত বর্জনের যে ডাক দিয়েছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অনভিপ্রেত। এইরূপ কর্মসূচি দেওয়ার কোনো এখতিয়ার আইনজীবী ফোরামের নাই। এইরূপ আহ্বান গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের পরিপন্থি এবং বিচার কার্যক্রমে সরাসরি হস্তক্ষেপ। এইরূপ কর্মসূচি বিচারপ্রার্থী মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকারের পরিপন্থি। বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশে সন্ত্রাস এবং নৈরাজ্য সৃষ্টির অপপ্রয়াসে লিপ্ত রয়েছে। এই অপশক্তি বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছিল। আবার তারা বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এই অপপ্রয়াসের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করছে যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ এবং অধঃস্তন আদালতসমূহ জানুয়ারি ১ থেকে ৭ জানুয়ারি এবং তৎপরবর্তী সময়ে যথারীতি খোলা থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর, সুপ্রিম কোর্ট বারের কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।