বছরজুড়ে হামলা ও নির্যাতনের শিকার ২৯০ সাংবাদিক
প্রকাশ | ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, বছরজুড়ে ২৯০ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। রোববার প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২৩-আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
সম্মেলনে আসকের নির্বাহী পরিচালক ফারুক হোসেন বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলার শিকার হয়েছেন অন্তত ৭৮ জন সংবাদকর্মী। সংবাদ প্রকাশের জের ধরে বাংলা নিউজ২৪.কম জামালপুর প্রতিনিধি ও ৭১ টিভির বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এছাড়াও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী দ্বারা লাঞ্ছিত ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় বাধা প্রদানের শিকার হয়েছেন ২২ জন সাংবাদিক।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ ১৪টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচন বর্জন করায় ইতিমধ্যে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা এবং অংশগ্রহণমূলকতা নিয়ে দেশ-বিদেশে নানা প্রশ্ন ও উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে।
২০২৩ সালের বার্ষিক মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ বছরেও শান্তিপূর্ণ সভা সমাবেশে বাধা দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গায়েবি মামলা, রাজনৈতিক গ্রেপ্তার, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, হেফাজতে নির্যাতন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আইনবহির্ভূত আচরণ, ধরে নিয়ে যাওয়ার পর গুম করার অভিযোগ, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।
১৩ নভেম্বর জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউয়ের (ইউপিআর) আওতায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচিত হয়েছে এবং উপরোলিস্নখিত মানবাধিকার ইসু্যগুলো নিয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন সদস্য দেশ বাংলাদেশকে প্রায় ৩০০ সুপারিশ করেছে। পর্যালোচনার পরপর ১৪ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে অফিস অব দ্য হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি ঘটছে।
আসকের নির্বাহী পরিচালক বলেন, বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ন্যায্য মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভে দমনপীড়ন চালানো হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে রাজনৈতিক কর্মীদের আন্দোলনেও চলছে দমনপীড়ন। এ ছাড়া সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের নেতাদের বিচারিক হয়রানি করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিক্ষোভ-আন্দোলন দমাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্তি প্রয়োগ, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া, পরিবারের সদস্যদের হয়রানি, ভয় দেখানো এবং বেআইনিভাবে আটক রাখার অভিযোগ সামনে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে এ বছর র?্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃতু্যর ঘটনা ছিল। বিদ্যমান আইন ও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করার অন্যতম উদাহরণ এটি। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো সরকার ক্রমাগত প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এসব অভিযোগকে দেশি-বিদেশি প্রচারণার অংশ হিসেবে উলেস্নখ করে নানা ধরনের দুঃখজনক মন্তব্য করেছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে অনেক সময় বলা হয়, বাহিনীতে কর্মরত যে কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপন হলে তা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হয়। এ ধরনের বিষয়ে যদি যথাযথ তদন্ত করা হয় তাহলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে থাকে কিংবা ইতিপূর্বে নিয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য কিন্তু জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়। নিজ বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিজ বাহিনী তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য কিংবা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে না। কাজেই প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা আবশ্যক।