মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হতদরিদ্রদের ভরসা ইঁদুরের গর্তের ধান

মো. আহসানুল হক চন্দন, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী)
  ২৯ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

আমন ধান কাটা মাড়াই প্রায় শেষ। ফসলশূন্য মাঠে দলবেঁধে বৃদ্ধ ও শিশু-কিশোররা মাটি খুঁড়ছে। তবে কোনো গুপ্তধন পাওয়ার আশায় নয়। মাটি খুঁড়ে তারা ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান সংগ্রহ করছে। ইঁদুরের গর্তে ধান সংগ্রহের এমন দৃশ্য এখন হরহামেশাই চোখে পড়ে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার দিগন্ত ভরা বিভিন্ন ফসলের মাঠে। ইঁদুরের গর্তে পাওয়া ধানের পুঁজি দিয়ে উপজেলার হতদরিদ্র বয়স্ক, বিধবা-স্বামী পরিত্যক্তা নারী ও শিশু-কিশোররা সংসারের অভাব পূরণের চেষ্টা করছেন। কেউ শীতের পিঠা, কেউবা মুড়ি তৈরি ও বিক্রি করে সংসারে অভাব জয় করছেন।

জানা যায়, প্রতি বছর আমন ধানের মৌসুমে বেড়ে যায় ইঁদুরের উপদ্রব। ইঁদুর ধানের শীষ কেটে নিয়ে ভবিষ্যতের খাদ্য হিসেবে গর্তে মজুত রাখে। আর ইঁদুরের গর্ত ও মাঠে পরিত্যক্ত ধানের শীষ সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। প্রতি বছর তারা বিভিন্ন ধানি বিলের মাঠে মাঠে এসব সংগ্রহ করেন। এ বছরও ধান সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। সংগৃহীত ধানে দুই তিন মাসের খাবারের সংস্থান হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ধান কুড়ানিরা হাতে ব্যাগ, গর্ত খোঁড়া শাবল, ঝাড়ু ও ঘাড়ে বস্তা নিয়ে পিপীলিকার মতো দলবল ছেড়ে আগামীর সঞ্চয় সংগ্রহে যেন সংগ্রামী যোদ্ধা। এ সময় সদর ইউনিয়নের পুশনা নয়াবাড়ি গ্রামের দিনমজুর নজরুল জানান, ধান কাটা শেষ হলে ইঁদুরের গর্তের ধান ও ধানের শিষ সংগ্রহের জন্য সকালে দলবেঁধে বের হন। ভাগ্য ভালো হলে এক গর্তে পাঁচ থেকে সাত কেজি ধান পাওয়া যায়। গাড়াগ্রাম ইউনিয়ন কৃষক দিপু বাবু জানান, আমন ধান কাটার পর দরিদ্র কৃষক পরিবারের নারী-পুরুষ শিশু-কিশোর একযোগে ধান সংগ্রহে নেমে পড়েন। পরিবহণের সময় ধান পড়ে যায়। এছাড়া ইঁদুর গর্তে প্রচুর ধানের শিষ জমিয়ে রাখে। এভাবে অনেক পরিবার ৬ থেকে ১০ মণ ধান সংগ্রহ করে থাকে। এতে একদিকে পরিবারগুলোর খাবারের সংস্থান হচ্ছে, অন্যদিকে অপচয় রোধ হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, এলাকায় ধান কাটার পর দরিদ্রদের ধান কুড়ানো এবং ইঁদুরের গর্ত থেকে সংগ্রহের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তবে প্রতি বছর ইঁদুর নিধন অভিযান ও কীটনাশকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় গর্তে আগের মতো ধান পাওয়া যায় না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে