বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চারশ' বছরের ঐতিহ্য বাওড়া মসজিদ

মো. মাজহারুল ইসলাম, লালপুর (নাটোর)
  ২৯ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
নাটোরের লালপুরে ঐতিহাসিক বাওড়া মসজিদ -যাযাদি

নাটোরের লালপুর উপজেলার ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম বাওড়া এক কাতারের তিন গম্বুজ মসজিদ। ৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের ঐতিহ্য বহন করে আজও দাঁড়িয়ে আছে এটি। বর্তমানে এটি বাওড়া মসজিদ নামেই পরিচিত। ইতিহাসবিদদের মতে, উপজেলার সবচেয়ে পুরনো দুটি মসজিদের মধ্যে এটি অন্যতম। মসজিদটি ঠিক কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এর সঠিক কোনো ইতিহাস পাওয়া না গেলেও এর গঠনশৈলী ও নির্মাণের উপাদান মোগল আমলে নির্মিত মসজিদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সেই হিসাবে মসজিদটি প্রায় ৪০০ বছরেরও বেশি পুরনো। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক লোক আসে ঐতিহাসিক, দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় এই মসজিদটি দেখতে। তবে মুসলিম সভ্যতার এই ঐতিহাসিক নিদর্শন রক্ষায় এখন পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি বা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাই নিপুণ কারুকাজ-সংবলিত দর্শনীয় এই মসজিদটি দিন দিন ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

লালপুর উপজেলা পরিষদ অর্থাৎ গোপালপুর থেকে ২.৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে নর্থ-বেঙ্গল সুগার মিলের কেন্দ্রীয় কবরস্থানের পাশে বাওড়া গ্রামে ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি অবস্থিত। পাতলা ইটের তৈরি তিন গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদটি মুসলিম স্থাপত্যশিল্প ও শিল্পকলার এক অপূর্ব নিদর্শন। ইটের গাঁথুনিতে জোড়ক মসলা হিসেবে চুন-সুঁড়কি ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদটির গাঁথুনি এবং এর ভেতর ও বাইরে নিপুণ শিল্পীর হাতে করা নানা কারুকাজ রয়েছে। আয়তাকার এই মসজিদটি ১৩৮ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত। এক কাতারবিশিষ্ট মসজিদটির বাইরে উত্তর-দক্ষিণে লম্বায় ৩১ ফুট ৬ ইঞ্চি। পূর্ব-পশ্চিমে প্রস্থে ১৩ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং উচ্চতা ১১ ফুট ৬ ইঞ্চি। মসজিদের নামাজঘরের ভেতর উত্তর-দক্ষিণে লম্বায় ২৫ ফুট ৬ ইঞ্চি ও পূর্ব-পশ্চিমে ৭ ফুট ৬ ইঞ্চি। ৩ ফুট পুরুত্বের দেওয়ালবিশিষ্ট মসজিদের চার কোণে চারটি অষ্টভুজাকৃতির বুরুজ রয়েছে। বুরুজগুলো কার্নিশ ছেড়ে ওপর দিকে ছত্রি দিয়ে শেষ হয়েছে। ছাদ থেকে প্রতিটি ছত্রির উচ্চতা ৩ ফুট ৬ ইঞ্চি। প্রতিটি ছত্রির শীর্ষ পদ্মকলি সজ্জিত। উত্তর-দক্ষিণে দুটি বড় আকারের খিলান দিয়ে এক কাতারবিশিষ্ট মসজিদটি ৭ বর্গফুটের তিনটি আয়তাকার 'বে'-তে বিভক্ত। প্রতিটি 'বে' অষ্টভুজাকৃতির পিলারের ওপর ৮ ফুট ব্যাসের (ভেতরের মাপ) একটি করে মোট তিনটি গম্বুজে মোড়ানো। নামাজঘরের ভেতরে প্রবেশের জন্য পূর্ব দেওয়ালে তিনটি অর্ধ-বৃত্তাকার খিলানবিশিষ্ট প্রবেশপথ রয়েছে। মধ্যবর্তী প্রবেশপথের দুই পাশে একটি করে অষ্টভুজাকৃতির আলঙ্কারিক সরু বুরুজ রয়েছে।

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাওড়া গ্রামের নাহারুল ইসলাম জানান, মসজিদটি এক কাতারবিশিষ্ট। এখানে এক সঙ্গে ১৮-২০ জন মুসলিস্ন নামাজ আদায় করতে পারেন। মুসলিস্নদের নামাজের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ২০১০ সালে মসজিদসংলগ্ন পূর্বদিকে নতুনভাবে একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। এটি নির্মাণের সময় মূল মসজিদের স্থাপত্য-সৌন্দর্য কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখনো কারুকাজ-সংবলিত বাকি অংশ নিয়ে স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক এই মসজিদটি। আজও বহন করছে ইতিহাসের গৌরবময় মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের নিদর্শন। মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণে প্রত্নতত্ত্ব্ব বিভাগ, সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে