শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অপূর্ব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শিবপাশা বাবরি মসজিদ

হুমায়ুন কবীর, বাহুবল (হবিগঞ্জ)
  ২৮ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

প্রাচীন আমলে বৌদ্ধ-হিন্দু অধু্যষিত জনপদ হবিগঞ্জে এক সময় ছিল অসংখ্য স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের নান্দনিক শিল্প নিদর্শন। এমনই একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন জেলার বাহুবল উপজেলার লামাতাশী ইউনিয়নের ঐতিহাসিক শিবপাশা বাবরি মসজিদ। এলাকায় যার পরিচিতি রয়েছে 'গায়েবি মসজিদ' নামে।

মসজিদের উত্তর পাশেই রয়েছে ছোট্ট একটি পুকুর। যাকে স্থানীয়রা 'ইন্দিরা' নামে ডাকে। ওই ইন্দিরার পানি পান করলে অনেক অসুখ-বিসুখ ভালো হয় বলে এলাকাবাসীর বিশ্বাস। ইন্দিরা আকারে বেশি বড় নয়। কিন্তু এর পানি কখনো শুকায় না। ইন্দিরার পূর্ব-দক্ষিণ পাশে রয়েছে ৩৬০ আউলিয়ার সফরসঙ্গী সৈয়দ রুশন শাহের (রহ.) মাজার এবং ছিলাখানা (এবাদত খানা)। দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে রয়েছে সিলেট জদির পাহাড় থেকে আগত সৈয়দ আয়নাল শাহের (রহ.) মাজার।

প্রায় হাজার বছরের পুরানো এই নয়নাভিরাম মসজিদ দেখতে এবং ইন্দিরার পানি নিতে প্রতিদিন অনেক লোক ভিড় জমান। কথিত আছে, শিবপাশা বাবরি মসজিদটি গায়েবি। এটি কবে নির্মিত হয়েছিল, এলাকার কেউ জানেন না। কেউ কেউ বলছেন, বাবরি মসজিদটি প্রায় দুই ফুটের মতো গায়েবিভাবে ওঠার পর তৎকালীন সময় এলাকাবাসী মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ করেন। সম্পূর্ণ পাথরের ওপর নির্মিত বাবরি মসজিদের দেওয়ালে স্থাপিত শিলালিপির পাঠোদ্ধার এখনো সম্ভব না হলেও এর নির্মাণ কৌশল, দেওয়ালে পোড়ামাটির অলঙ্করণ ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করে বাবরি মসজিদটি সুলতানী আমলে নির্মিত হয়েছিল বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, সৈয়দ রুশন শাহ-ই এই ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠদের ধারণা, বাবরি মসজিদের পাথর সংগৃহীত হয়েছিল বৌদ্ধ-হিন্দুদের প্রাচীন কোনো নিদর্শন থেকে। এর ব্যয়ের পরিমাণ ছিল অনেক এবং এখনো এটি অনেক মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ।

বাবরি মসজিদের ইটের দেয়ালের বাইরের অংশে তৈরি করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন নকশা। এসব নকশায় বাঙালি মুসলিম সমাজের মর্মকথা লুকায়িত। প্রকৃতি, মানুষ- এসবই এর আলেখ্য বিষয়। এই অপূর্ব শৈল্পিকতায় নিটোল প্রেমের কবিতার সৌন্দর্য পাওয়া যায়। মসজিদের ভেতর সুলতানী আমলের টেরাকোটা ও পাথরের ওপর চমৎকার সব অলঙ্করণ রয়েছে। মসজিদের মূল ভবনের দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট ও প্রস্থ ১৫ ফুট। চার দেওয়ালের পুরুত্ব অনেক। মসজিদের তিনটি গম্বুজের মধ্যে সবচেয়ে বড় গম্বুজটি কেন্দ্রীয় কক্ষের মধ্যে এবং অন্য দুটি এর দুই পাশে অবস্থিত। কেন্দ্রীয় কক্ষের পূর্বদিকে খাঁজকাটা খিলান-সংবলিত ছোট-বড় তিনটি প্রবেশপথ রয়েছে। এলাকাবাসীর উদ্যোগে মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কিছুটা রং-বার্নিশের কাজ করা হয়েছে।

কথিত আছে, সৈয়দ আয়নাল শাহ শিবপাশা গ্রামে এসে তার কবরস্থানের জন্য এলাকাবাসীর কাছে জায়গা চান। এলাকাবাসী প্রথমে তার কথা শুনে অবাক হন এবং পরবর্তীতে জায়গা ঠিক হওয়ার পরই তিনি মারা যান। পরে তাকে নির্দিষ্ট জায়গায়ই দাফন করা হয়। তার কবরের দৈর্ঘ্য ১০ ফুট।

মাজারের খাদেম মো. নূরুজ্জামান কনু জানান, মসজিদের সামনে আরবিতে মসজিদে প্রবেশ করার দোয়া লেখা ছিল। কালের আবর্তে তা বিলীন হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, প্রায় হাজার বছরের পুরানো এই ঐতিহাসিক মসজিদের আরও অনেক কিছুই বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর আবেদন, মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে সরকারের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর নিয়োজিত হলে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে এই নান্দনিক মসজিদটি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<116875 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1