বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

স্বল্প ওজনের অপরিণত নবজাতক

জন্মের সময় নবজাতকের ওজন যদি ২৫০০ গ্রাম বা ২.৫ কেজির কম হয় তাহলে তাকে স্বল্প ওজনের নবজাতক বলা হয়। সাধারণত সময়ের আগে জন্মানো বাচ্চারাই কম ওজন নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে থাকে। বাংলাদেশে প্রতিবছর ২৫০০০ জন নবজাতক স্বল্প ওজনের এবং অপরিণত হওয়ার কারণে মৃতু্যবরণ করে
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
স্বল্প ওজনের অপরিণত নবজাতক
স্বল্প ওজনের অপরিণত নবজাতক

# অপরিণত নবজাতক

ডা. মৌসুমি আহমেদ মৌরী

গর্ভাবস্থা ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগে যে নবজাতক জন্মগ্রহণ করে, তাদের অপরিণত নবজাতক বলা হয়ে থাকে।

স্বল্প ওজনের নবজাতক : জন্মের সময় নবজাতকের ওজন যদি ২৫০০ গ্রাম বা ২.৫ কেজির কম হয় তাহলে তাকে স্বল্প ওজনের নবজাতক বলা হয়।

সাধারণত সময়ের আগে জন্মানো বাচ্চারাই কম ওজন নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে থাকে। তবে অনেক সময় মায়ের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা বা গর্ভাবস্থার কোনো জটিলতার জন্য সঠিক সময়ে অর্থাৎ ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ করে জন্মানো বাচ্চারও ওজন কম (<২৫০০গ্রাম) হতে পারে, এদেরকে বলা হয় স্বল্প ওজনের কিন্তু পূর্ণ গর্ভাবস্থার নবজাতক।

বাংলাদেশে প্রতিবছর ২৫০০০ জন নবজাতক স্বল্প ওজনের এবং অপরিণত হওয়ার কারণে মৃতু্যবরণ করে। এছাড়া আমাদের দেশে শতকরা ১৬ জন অপরিণত নবজাতক এবং শতকরা ২৩ জন স্বল্প ওজনের নবজাতক জন্মগ্রহণ করে থাকে।

কারণসমূহ :

১. কম বয়সে মা হওয়া, অপুষ্ট মা।

২. মায়ের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা, যেমন-ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ।

৩. একের অধিক সন্তান একসঙ্গে গর্ভে থাকলে, যেমন- (যমজ বাচ্চা/ট্রিপলেট)।

৪. গর্ভের সন্তানের কোনো শারীরিক জটিলতা থাকলেও বাচ্চা সময়ের আগে বা কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে।

৫. মায়ের জরায়ুর অসুবিধা।

৬. মায়ের গর্ভকালীন সময় রক্তপাত হলে।

লক্ষণসমূহ :

১. সাধারণত কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং আকারে ছোট হয়।

২. নড়াচড়া স্বাভাবিক নবজাতকের চাইতে কম করে।

৩. গায়ের চামড়া পাতলা ধরনের হয়, চামড়ার নিচে মেদ খুব কম হয়, অনেক সময় রক্তনালীগুলো পরিষ্কার দেখা যায়।

৪. মায়ের বুকের দুধ টেনে খেতে পারে না বা অসুবিধা হয়।

জটিলতাসমূহ :

১. শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া।

২. শরীরে গস্নুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া।

৩. শ্বাসকষ্ট হওয়া বা হঠাৎ শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া।

৪. জন্ডিস অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া।

৫. রক্ত স্বল্পতা।

৬. ইনফেকশনের ঝুঁঁকি এবং এর জটিলতা।

৭. হার্টের সমস্যা।

৮. চোখে অন্ধত্বের ঝুঁঁকি।

৯. কানের সমস্যা/বধির হওয়া।

১০. হজমে অসুবিধা, বমি এবং খাদ্যনালীর সমস্যা।

১১. জন্মগত বিভিন্ন ত্রম্নটি।

এই ধরনের বাচ্চাদের অন্য স্বাভাবিক বাচ্চার তুলনায় অধিক যত্নের প্রয়োজন হয়। যেমন-

১. অপরিণত বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা খুব দ্রম্নত কমে যায়। তাই তাদেরকে উষ্ণ রাখতে হবে বা শরীরের তাপমাত্রা ঠিক আছে কিনা সেটা খেয়াল রাখতে হবে।

২. ইনফেকশনের ঝুঁঁকি কমাতে নবজাতকের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা।

৩. পাশাপাশি ক্যাংগারু মাদার কেয়ারে দিতে হবে।

৪. চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজন হলে বাচ্চাকে নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা ঘওঈট তে রেখে চিকিৎসা করাতে হবে।

অপরিণত শিশুর জন্ম প্রতিরোধে করণীয় :

১. সরকার নির্ধারিত বিয়ের বয়স মেনে চলা, অল্প বয়সি মায়ের অপরিণত শিশুর জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

২. মায়ের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে যাতে গর্ভের সন্তানও মায়ের মাধ্যমে সঠিক পুষ্টি পায়।

৩. মাকে নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা এবং মায়ের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ বা অন্য সমস্যা থাকলে সেগুলো সঠিক সময়ে চিহ্নিত করা এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৪. গর্ভকালীন সময় মায়ের শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন নিশ্চিত করা।

৫. প্রসূতি মায়ের প্রয়োজনীয় টিকা প্রদান করতে হবে।

ডা. মৌসুমি আহমেদ মৌরী

শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ

এমবিবিএস, এমডি পেডিয়াট্রিক

চেম্বার : আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-৬, হটলাইন: ১০৬৭২

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে