বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

শিশুদের ঠান্ডালাগা ও কানে ব্যথা

সুস্বাস্থ্য ডেস্ক
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শিশুদের ঠান্ডালাগা ও কানে ব্যথা
শিশুদের ঠান্ডালাগা ও কানে ব্যথা

শিশুরা সাধারণভাবে যে কয়েকটি রোগে ভুগে তার মধ্যে ঠান্ডালাগা এবং কানে ব্যথা অন্যতম। ঠান্ডালাগার সঙ্গে কানে ব্যথার কি সম্পর্ক আছে এবং এই কানে ব্যথার জন্য কি করতে হবে? এ ধরনের প্রশ্ন আপনার মনে হতেই পারে।

শিশুর ঠান্ডালাগার সঙ্গে কানের একটি সম্পর্ক আছে। এই সম্পর্কটি কি- আলোচনার শুরুতেই সে দিকে একবার নজর দেওয়া যাক। ঠান্ডালাগা থেকে শিশুর নাকে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। নাক থেকে কানে দু'টি নালিকা বা টিউব চলে গেছে। এই নালিকা দু'টি কানের ভেন্টিলেশনে কাজ করে। প্রদাহ নাকের পেছনের দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং ঐ বা নালিকার মুখে যে ঝিলিস্ন আছে তাতেও সংক্রমণ ঘটাতে পারে। পরিণামে ঝিলিস্ন ফুলে যায় এবং কানের ভেন্টিলেশন বাধাগ্রস্ত হয়। এদিকে প্রদাহের আরও বিস্তার ঘটে এবং মধ্যকর্ণে ছড়িয়ে পড়ে। মধ্যকর্ণে কোনো প্রদাহ হলে তা শেষ পর্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ব্যথার সৃষ্টি করে। এই ব্যথার সঙ্গে জ্বরও হয়।

তবে শিশুর ঠান্ডা লাগলেই কানে ব্যথা হবে এমন কথা সব সময় সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। ঠান্ডালাগার সঙ্গে সঙ্গে কানের দু'টি টিউব বন্ধ হয়ে যাওয়ার একটি সম্পর্ক রয়েছে। নাকের পেছনে অবস্থিত এডেনয়েড নামের মাংসখন্ডে কোনো সমস্যা থাকলে বা স্বাভাবিক আকারের থেকে বড় হলে তবেই শিশুর ঠান্ডা লাগলেই কানে ব্যথা সৃষ্টি হওয়ার কারণ বেশি মাত্রায় ঘটবে বা ঘটার আশংকা থাকবে। এদিকে এডেনয়েড স্বাভাবিক আকারের চেয়ে বড় হলে অনেক সময় নাকে সংক্রমণ না ঘটলে কানে সংক্রমণ ঘটতে পারে। এ জাতীয় কোনো শিশুর যদি যে কোনো কারণে নাকে সংক্রমণ ঘটে। তবে অবধারিতভাবে কানে সংক্রমণ ঘটবে। এভাবে কানের ভেন্টিলেশন টিউব বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে আরও সংকটের সৃষ্টি হতে পারে। শিশু কানে কম শুনতে পারে।

কানের এই সংক্রমণের মধ্যকর্ণ পর্যন্ত বিস্তার ঘটতে পারে এবং শিশুর কানে শেষ পর্যন্ত পুঁজ জমতে পারে। সঠিক সময় এই রোগের চিকিৎসা না করা হলে তা কানের পর্দাকে ছিদ্র করে বের হয়ে আসতে পারে। শিশুর কান পাকার রোগ নিয়ে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গেলে এ কারণে চিকিৎসক প্রথমেই নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেন যে তার এই রোগের উৎস এডেনয়েড নয় বা শিশুর নাকে কোনো সংক্রমণ আছে কিনা।

কান পাকার মতো সমস্যা বহিঃকর্ণে দেখা দিতে পারে। কানের পর্দার বাইরে সংক্রমণের কারণে শিশুর কান থেকে জলীয় পর্দাথ বা পুঁজ বের হয়ে আসতে পারে। তবে কানের এ ধরনের সমস্যাকে বোঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু সত্যিকারভাবে কান পাকা বলতে কিন্তু মধ্যকর্ণের প্রদাহকে এবং সেখান থেকে পুঁজ বের হওয়াকে বোঝানো হয়। তবে এডেনয়েডের সমস্যা ছাড়াও আরও অনেক কারণে কান পাকতে পারে। আঘাতজনিত কারণে শিশুকানের পর্দা ছিড়ে যেতে পারে এবং প্রদাহ হতে পারে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, শিশু খেলতে যেয়ে কানে কিছুর খোঁচা খেতে পারে এবং তাতে পর্দা ছিড়ে যেতে পারে। শিশু কানে আঘাতজনিত কারণে বা অন্য কোনো কারণে প্রদাহ হয়নি। তবে এডেনয়েড বা কানের ভেন্টিলেশন টিউবের সমস্যা রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ধরে নিবেন। কিংবা এ ধরনের সমস্যা নাকের কারণেও হতে পারে। সাধারণ কানের এ রকম সমস্যার চিকিৎসা করতে গেলে চিকিৎসক প্রথমেই কারণ চিহ্নিত করার চেষ্টা করবেন। তিনি সঠিকভাবে কারণটি খুঁজে বের করার পর সে অনুযায়ী চিকিৎসা করবেন।

বাইরের আঘাতের কারণে যদি এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে তবে তার চিকিৎসা এক ধরনের হবে। অন্যদিকে তবে এডেনয়েডের কারণে এ ধরনের সমস্যা তার চিকিৎসাও ভিন্ন হবে। তবে সাধারণভাবে এডেনয়েডের কারণে এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকরা তা অপারেশন করে কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই অপারেশন জটিল বা ব্যয়বহুল নয় বলে এর তা দেরি না করে সম্পন্ন করে নেওয়া ভালো। তবে কখনো কখনো কানের ভেতর পুঁজ আটকে শিশুর কানে ভয়াবহ যন্ত্রণার সৃষ্টি করতে পারে। চিকিৎসকরা সেক্ষেত্রে তড়িঘড়ি কানের সে ব্যথা কমানোর জন্য বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে নিখুতভাবে কানের পর্দা কেটে দেন। আর পর্দা কেটে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুর কানে পুঁজের চাপ কমে ব্যথা হ্রাস পায়। এই কাটা পর্দা পরে ভালো হয়ে যায়। চিকিৎসকারা এ জাতীয় চিকিৎসার জন্য এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন।

শিশুর কানে ব্যথা হলে বা ঠান্ডা লাগলে তার চিকিৎসা করতে অনর্থক সময় নষ্ট করবেন না তাকে নিয়ে দ্রম্নত চিকিৎসকের কাছে যাবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে