বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

শীতের শুষ্কতা ও চোখের সুস্থতা

চোখ হচ্ছে মানুষের শারীরিক অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শুষ্কতা, ঠান্ডা হাওয়া এবং বৈরী আবহাওয়া চোখের সুস্থতার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এ সময় চোখের সুরক্ষা ও সুস্থতা রক্ষার জন্য সচেতনতা এবং সঠিক যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল (চিকিৎসক, কবি, ছড়াকার ও কলামিস্ট)
  ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শীতের শুষ্কতা ও চোখের সুস্থতা
শীতের শুষ্কতা ও চোখের সুস্থতা

প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়মে শীতকাল চলে এসেছে। কুয়াশার স্নিগ্ধ সাদা ধূসরতা, উত্তরীয় ঠান্ডা বাতাসের ছোঁয়া, ঘরের ভেতরের উষ্ণতা একদিকে যেমন শরীর ও মনের খোরাক জোগায়, অন্যদিকে, শরীরের বিশেষ যত্নের প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে তোলে। চোখ হচ্ছে মানুষের শারীরিক অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শুষ্কতা, ঠান্ডা হাওয়া এবং বৈরী আবহাওয়া চোখের সুস্থতার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এ সময় চোখের সুরক্ষা ও সুস্থতা রক্ষার জন্য সচেতনতা এবং সঠিক যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শীতকাল আসার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন শুরু হয়। বিশেষ করে চোখের ওপর নানা ধরনের বিরূপ প্রভাব দেখা দেয়। এ সময় চোখের যেসব স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়, তা তুলে ধরা হলো:

ড্রাই আইজ বা চোখের শুষ্কতা

শীতকালে বাতাস শুষ্ক থাকে এবং ঠান্ডা হাওয়া চোখের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা নষ্ট করে দেয়। এ অবস্থায় চোখে জ্বালা, চুলকানি, লাল হয়ে যাওয়া এবং অস্বস্তি তৈরি হয়। চোখের শুষ্কতা যদি দীর্ঘসময় ধরে থাকে, তবে তা চোখের অন্যান্য সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে।

কনজাংটিভাইটিস

কনজাংটিভাইটিস বা চোখের সাদা অংশের প্রদাহ শীতকালের একটি সাধারণ সমস্যা। শীতকাল আসলেই ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে কনজাংটিভাইটিসের ঘটনা বাড়তে থাকে। এর ফলে, চোখে লালচে ভাব, অস্বস্তি, চোখ থেকে পানি ঝরা এবং কখনো কখনো দৃষ্টি অস্পষ্ট হয়ে যেতে পারে।

চোখের অ্যালার্জি

শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় ধূলিকণা, ধোঁয়া এবং গ্যাসের উপস্থিতি বেড়ে যায়। এগুলো চোখের অ্যালার্জি সৃষ্টি করে। চোখে অ্যালার্জিক রি-অ্যাকশন হলে চোখে চুলকানি, লাল হওয়া এবং অস্বস্তি দেখা দেয়, যা খুবই বিরক্তিকর।

আই এস্ট্রেইন বা চোখের ক্লান্তি ও চাপ

শীতকালে দিনের আলো কমে যায় এবং রাত দীর্ঘ হয়। ফলে, অধিকাংশ সময়ই ঘরের মধ্যে থাকতে হয়। ঘরের ভেতরে স্ক্রীনের সামনে দীর্ঘ সময় কাটানো, যেমন কম্পিউটার, মোবাইল, টিভি- এই সমস্ত বিষয় চোখের ক্লান্তি বাড়িয়ে দেয়। স্ক্রীনের সামনে দীর্ঘসময় থাকার ফলে চোখের মাংসপেশির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে; এর ফলে, চোখ ও মাথা ব্যথা ও অস্বস্তি দেখা দেয়।

শীতকালীন চোখের স্বাস্থ্যসমস্যা এড়ানোর জন্য সঠিক ও স্বাস্থ্যসম্মত যত্ন নেয়া অত্যন্ত জরুরি। কিছু সাধারণ ও কার্যকরী যত্ন রয়েছে- যা শীতকালে চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে:

চোখের আর্দ্রতা বজায় রাখুন

শীতকালে চোখের শুষ্কতা ও অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে চোখের আর্দ্রতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চোখের আর্দ্রতা কমে গেলে চোখে জ্বালা ও অস্বস্তি বৃদ্ধি পায়। এই সমস্যা মোকাবিলায় চোখের জন্য আর্টিফিশিয়াল টিয়ার ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন। আই ড্রপ চোখকে আর্দ্র রাখে এবং শুষ্কতা কমায়। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আই ড্রপ ব্যবহার করতে হবে।

স্ক্রিন টাইম কমিয়ে ফেলুন

শীতকালে ঘরের ভেতর বসে স্ক্রিনের সামনে দীর্ঘক্ষণ সময় কাটানো চোখের জন্য খুবই ক্ষতিকর। স্ক্রিনের দিকে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের মাংসপেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং চোখে চাপ বেড়ে যায়। স্ক্রিনের সামনে একটানা বসে থাকার ক্ষেত্রে প্রতি ২০ মিনিট পর পর কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিতে হবে। এছাড়া, স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা কমিয়ে ফেললে চোখের ওপর চাপ কম পড়বে।

সানগস্নাস বা ফটো চশমা ব্যবহার করুন

কুয়াশার সাদা প্রতিফলনের জন্য সূর্যের আলোর তীব্রতা অনেক বেশি হতে পারে। সূর্যের রশ্মি চোখে পড়লে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই শীতকালে বাইরে বের হলে সানগস্নাস ব্যবহার করা উচিত। এটি চোখকে সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মি এবং তীব্র আলো থেকে রক্ষা করে এবং চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখে।

তাজা ফলমূল ও শাকসবজি খান

চোখের জন্য বিশেষ উপকারী হলো ভিটামিন এ, সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার। গাজর, পালং শাক, টমেটো, লাল বেল পিপার, আমলকী এই ধরনের খাবার চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া, শীতকালীন তাজা ফল এবং শাকসবজি খেলে চোখের আর্দ্রতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

পর্যাপ্ত তরল খাবার ও পানি পান করুন

শীতকালে আমাদের শরীরকে সতেজ রাখতে পর্যাপ্ত তরল খাবার ও পানি পান করতে হবে। শুষ্ক বাতাসের কারণে শরীরের পানি হারাতে পারে- যার প্রভাবে চোখের শুষ্কতা বাড়তে পারে। তাই সারা দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।

পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলুন

চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত দরকারি। ঘুম কম হলে চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়ে, ভেতরের দিকে তলিয়ে যায় এবং চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল দেখা দেয়। শীতকালে রাতের সময় দীর্ঘ হওয়ায়, পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা সহজ। প্রতি রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমালে চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

চোখের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন

চোখের সুরক্ষা এবং সুস্থতা ধরে রাখতে চোখের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। চোখের চারপাশে এবং চোখের ভেতর নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। কখনো ময়লা বা ধুলোবালি যেন চোখে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে কুসুম গরম পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার করতে হবে।

শীতকালে শরীরের অন্যান্য যত্নের পাশাপাশি চোখের যত্ন নেওয়া চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত দরকারি, কারণ এ সময় চোখের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন শুষ্কতা, অ্যালার্জি, কনজাংটিভাইটিস এবং চোখের চাপ। তবে, সঠিক যত্ন ও সচেতনতার মাধ্যমে আমরা এই সমস্যাগুলো সহজেই প্রতিরোধ করতে পারি। পর্যাপ্ত পানি পান, সানগস্নাস ব্যবহার, স্ক্রিন টাইম কমানো এবং তাজা ও তরল খাবারের মাধ্যমে চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব। শীতকালে চোখের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য আমাদের এই সহজ ও কার্যকরী পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা উচিত। শীতকালকে উপভোগ করতে চোখের সুস্থতার দিকে নজর রাখলে, তা আমাদের জীবন মানকে আরও উন্নত করতে সহায়তা করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে