শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

ইতিবাচক চিন্তা ও মানসিক স্বাস্থ্য

ইতিবাচক চিন্তার অভ্যাস মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে। এটি কর্টিসল নামক চাপ হরমোনের পরিমাণ কমায় এবং মনের প্রশান্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়াও, এটি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য চাপজনিত শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি কমায়।
ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল (চিকিৎসক, কবি, ছড়াকার ও কলামিস্ট)
  ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ইতিবাচক চিন্তা ও মানসিক স্বাস্থ্য
ইতিবাচক চিন্তা ও মানসিক স্বাস্থ্য

শারীরিক সুস্থতার জন্য যেমন স্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের প্রয়োজন, তেমনি মানসিক সুস্থতার জন্যও প্রয়োজন এমন কিছু অভ্যাস- যা আমাদের মনকে শান্ত ও শক্তিশালী রাখে। এর মধ্যে অন্যতম একটি অভ্যাস হলো ইতিবাচক চিন্তা। এটি এমন একটি মনোভাব- যা সমস্যা সমাধানে মনোযোগী করে, ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে মূল্যায়ন করে। আজকে আমরা জানব কীভাবে ইতিবাচক চিন্তা মানসিক স্বাস্থ্যকে পুষ্ট করে এবং আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্য ও ইতিবাচক চিন্তার সম্পর্ক

মানুষ মাত্রই জীবনে ছোট-বড় বিভিন্ন সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। কখনো কখনো পরিস্থিতি এতটাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যে, মনে হয় বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। এই কঠিন সময়ে ইতিবাচক চিন্তা আমাদের চাপ কমাতে এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ইতিবাচক চিন্তার অভ্যাস মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে। এটি কর্টিসল নামক চাপ হরমোনের পরিমাণ কমায় এবং মনের প্রশান্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়াও, এটি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য চাপজনিত শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি কমায়। ইতিবাচক চিন্তা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য যেসব উপকার নিয়ে আসে:

মানসিক চাপ কমায়: নেতিবাচক চিন্তা মনের ভার বৃদ্ধি করে, আর ইতিবাচক চিন্তা চাপকে প্রশমিত করে ও মনে প্রশান্তি আনে।

আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে: ইতিবাচক মনোভাব আমাদের নিজেদের প্রতি বিশ্বাসী করে তোলে।

সম্পর্ক উন্নত করে: ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগে শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করে।

সৃজনশীলতা বাড়ায়: একটি শান্ত মন নতুন ধারণা ও সমাধান খুঁজে বের করতে বেশি সক্ষম।

নেতিবাচক চিন্তার বিপদ :

নেতিবাচক চিন্তা মানসিক অসুস্থতাকে উদ্দীপনা দান করে। এটি মনের ভার বৃদ্ধি করে এবং এমন একটি বলয় তৈরি করে- যা থেকে বের হওয়া অনেক কঠিন হয়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক চিন্তার প্রভাব:

উদ্বেগ ও বিষণ্নতা সৃষ্টি করে: অতিরিক্ত নেতিবাচকতা হতাশা ও অস্থিরতার জন্ম দেয়।

আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়: এটি আত্মবিশ্বাসে আঘাত করে এবং নিজের সক্ষমতার ওপর সন্দেহ সৃষ্টি করে।

সম্পর্কের অবনতি ঘটায়: নেতিবাচক মনোভাব সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।

শারীরিক সমস্যার কারণ হয়: নেতিবাচক চিন্তার ফলে সৃষ্ট মানসিক চাপ উচ্চ রক্তচাপ, ঘুমের সমস্যা এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

ইতিবাচক চিন্তা গড়ে তোলার উপায়

সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করা খুব সহজ নয়, বিশেষ করে যখন জীবন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়ায়। তবে, কিছু অভ্যাস রপ্ত করলে এই গুণটি ধীরে ধীরে আয়ত্তে আনা সম্ভব। এখানে কিছু কার্যকর পদ্ধতি উলেস্নখ করা হলো:

কৃতজ্ঞতা চর্চা করুন: জীবনের ছোটো ছোটো ভালো দিকগুলোকে স্বীকার করা এবং তার জন্য কৃতজ্ঞ হওয়া ইতিবাচক চিন্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন একটি ডায়েরিতে তিনটি বিষয় লিখে রাখুন- যা আপনাকে খুশি করেছে।

নেতিবাচক চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ করুন: যখনই কোনো নেতিবাচক চিন্তা মাথায় আসবে, তখনই নিজেকে প্রশ্ন করুন:

ম এই চিন্তাটি কতটা বাস্তবসম্মত?

ম এটি কি কোনো সমাধান দিতে সাহায্য করবে?

ম অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে কেমন হবে?

ইতিবাচক মানুষের সঙ্গে সময় কাটান: যাদের উপস্থিতি আপনাকে উৎসাহিত করে এবং আপনার মানসিক শান্তি বাড়ায়, তাদের সঙ্গে সময় কাটান। নেতিবাচক পরিবেশ এবং সমালোচনাপ্রবণ মানুষ এড়িয়ে চলুন।

ধ্যান ও মাইন্ডফুলনেস চর্চা করুন: ধ্যান ও মাইন্ডফুলনেস আপনাকে বর্তমান মুহূর্তে থাকতে সাহায্য করে। এটি অতিরিক্ত চিন্তা কমায় এবং মনকে স্থির ও প্রফুলস্ন রাখে। প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিট ধ্যান করেও মানসিক চাপ কমানো সম্ভব।

ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন: বড় লক্ষ্যগুলোকে ছোট ছোট ধাপে ভাগ করুন এবং প্রতিটি ধাপ পূর্ণ হওয়ার পর নিজেকে পুরস্কৃত করুন। এতে আপনার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে এবং ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলবে।

শারীরিক যত্ন নিন: শারীরিক ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং পর্যাপ্ত ঘুম শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো শরীরে এন্ডোরফিন তৈরি করে- যা মনকে খুশি রাখে।

ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন: নিজের ভুলগুলোকে মেনে নিন এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। অতীতে আটকে না থেকে বর্তমানকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যান।

নেতিবাচকতা সঙ্গ কমান: টিভি, সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্য কোনো মাধ্যমে নেতিবাচক খবর বা বিষয়বস্তুর প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ এড়িয়ে চলুন। পরিবর্তে, ইতিবাচক এবং অনুপ্রেরণামূলক বিষয়বস্তু বেছে নিন।

ইতিবাচক চিন্তা এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো সময়ের দাবি। চ্যালেঞ্জ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে, আমাদের প্রতিক্রিয়াই আমাদের যাত্রাকে সংজ্ঞায়িত করে। পৃথিবী যত কঠিনই হোক না কেন, আশার আলো সব সময় আমাদের চারপাশে থাকে। ইতিবাচক চিন্তার মাধ্যমে আমরা এই আলো খুঁজে পেতে এবং ভবিষ্যৎকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে