শীতকাল চলে এসেছে। এ ঋতুতে ধুলাবালির প্রকোপ বেশি। হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়াসহ আরও নানারকম অ্যালার্জিজনিত সমস্যা দেখা দেয় এ সময়। অ্যাজমা আক্রান্তদের জন্য এ ঋতু বিপজ্জনক। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের অ্যাজমা বা হাঁপানি রয়েছে, তাদের শীতকালে অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় বেশি ভুগতে হয়। অ্যালার্জির কারণে শ্বাসকষ্টও বেড়ে যায় বহুগুণে। অ্যাজমা আক্রান্তদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। অ্যাজমা অ্যাটাকের কারণে নানা শারীরিক জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। তাই এদের সব ধরনের সাবধান থাকতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে অবশ্যই রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসার পাশাপাশি জীবনযাত্রা ও ডায়েটে পরিবর্তন আনা জরুরি। অ্যাজমা হলো ফুসফুসের সমস্যা। এই রোগে অ্যালার্জিজনিত কারণে ফুসফুসে প্রদাহ হয়। ফলে শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। অ্যাজমা প্রতিরোধ সম্পর্কে জানতে হবে। এজন্য রোগীদের ডায়েটের দিকে নজর দিতে হবে।
খাদ্য তালিকায় যা রাখতে হবে
ভিটামিন ডি-যুক্ত খাদ্য গ্রহণ: অ্যাজমার সমস্যায় অবশ্যই ভিটামিন ডি-যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। তাই নিয়মিত এই ভিটামিন যুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে স্যালমন মাছ, দুধ ও ফর্টিফায়েড দুধ, কমলার রস, ডিম ভিটামিন ডি-যুক্ত এ খাবারগুলো খাওয়া যেতে পারে। তবে কারও ডিম ও দুধে অ্যালার্জি থাকলে এই দুটি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
ভিটামিন-এ যুক্ত খাদ্য গ্রহণ: সাধারণত ভিটামিন-এ শরীরে কম থাকলে এটি বেশি হয়। তাই এই ভিটামিন পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত থাকলে ফুসফুস ঠিকমতো কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে গাজর, মিষ্টি আলু, সবুজ শাকসবজি, পালং, ব্রকলি খেতে হবে। এই খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ রয়েছে। নিয়মিত খেলে শরীরে এই ভিটামিনের ঘাটতি দ্রম্নত কমবে।
উপকারী আপেল: আপেল কেবল স্বাদেই দারুণ নয় বরং এই ফলের গুণও অপরিসীম। নিয়মিত আপেল খেলে অ্যাজমার আশঙ্কা কমে। এমনকি ফুসফুসও নিজের কাজ ঠিকমতো করতে পারে। এ কারণে অ্যাজমা রোগীরা অবশ্যই 'অ্যান অ্যাপেল এ ডে' থিওরিতে ভরসা রাখতে পারেন। রোজ দিনের যে কোনো সময় একটি আপেল খেতে হবে।
অ্যাজমায় কলা উৎকৃষ্ট খাবার: অনেকেই মনে করে কলা খেলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাবে, ঠান্ডা লাগবে। যদিও বিষয়টি ঠিক নয়। বরং কলা খেলে শরীর সুস্থ থাকে। ইউরোপিয়ান রেসপিরেটরি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কলা খেলে অ্যাজমা আক্রান্ত শিশুরা সুস্থ থাকে। এতে এমন কিছু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে- যা ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে. শ্বাস নিতে সুবিধা হয়। তাই নিয়মিত কলা খাওয়া জরুরি।
প্রতিদিন ম্যাগনেশিয়াম যুক্ত খাদ্য গ্রহণ:?অ্যাজমা আক্রান্ত সব বয়সি মানুষের ম্যাগনেশিয়াম যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে পালং, কুমড়ার বীজ, ডার্ক চকোলেট, স্যালমন অথবা সামুদ্রিক মাছ উলেস্নখযোগ্য।
আদা খাওয়া জরুরি : প্রাচীনকাল থেকেই সর্দি-কাশি সারাতে আদা ব্যবহার করা হতো। স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি এটি হাঁপানি রোগীদের জন্যও বেশ উপকারী।
হলুদ: হলুদে উপস্থিত কারকিউমিন শরীরে প্রদাহ কমাতে কাজ করে। এটি খেলে শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
খাদ্য তালিকায় যা রাখা যাবে না
হ অ্যাজমার সমস্যা থাকলে শুষ্ক ফল এড়িয়ে চলতে হবে। শুকনো ফলে প্রচুর পরিমাণে সালফাইট থাকে। সালফাইট অ্যাজমার সমস্যা বাড়ায়।
হ গ্যাস উৎপন্ন করে এমন খাবার যেমন বিনজাতীয় সবজি, রসুন, আচার ইত্যাদি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
হ কফি, চা বা অন্যান্য অনেক পানীয়তে স্যালিসিলেটস নামক পদার্থ থাকে। এই উপাদান দেহের প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতে পারলেও শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে। তাই কফি এড়িয়ে চলতে হবে।
হ সাপিস্নমেন্ট বা যে কোনো ধরনের লিকুইড নাইট্রোজেন দেহের ক্ষতি করে।
হ ফাস্টফুড জাতীয় খাবার গ্রহণে শিশুদের অ্যাজমা প্রবণতা ২৭ শতাংশ বাড়ে।
হ প্রিজারভেটিভ জাতীয় উপাদান অ্যাজমার জন্য ক্ষতিকর।
হ চিংড়িতে সালফাইটের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই অ্যাজমা রোগীদের সাধারণত চিংড়ি খাওয়া যায় না।
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা পুষ্টিসমৃদ্ধ করতে হবে। কারণ ব্যালেন্স ডায়েট এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে খাবারগুলো অ্যালার্জির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় তা খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে তাহলেই সুস্থ থাকা যাবে।
\হনাজিয়া আফরিন
স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ
নারী মৈত্রী।