অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে সুষ্ঠু জীবন প্রত্যেকের কাম্য এবং তার জন্য সবার প্রথমে প্রয়োজন সঠিক ওজন। এখনকার দিনে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ধরন বদলেছে তাই ওজন বেড়ে যাওয়ার লক্ষণও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ওজন বেড়ে গেলে নানা ধরনের রোগব্যাধী হতে পারে তাই সঠিক ওজন রাখা অত্যন্ত জরুরি। যদি কোনো ব্যক্তি ওজন কমাতে চায় তাহলে তার ডায়েটের ধরন হবে নরম বা তরল, উচ্চ প্রোটিন, কম শর্করা এবং কম চর্বিযুক্ত। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় বিপাক কার্যক্রম সচল রাখতে পর্যাপ্তপরিমাণে পানি পান করতে হবে।
১. নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম : ওজন কমানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো হাঁটা। টানা ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট হাঁটলে রক্তে চলমান চর্বি নিঃশেষ হয়। তারপর শরীরের সঞ্চিত চর্বি খরচ হতে থাকে। ভারী ব্যায়ামের বিকল্প হিসেবে হাঁটাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাই বাড়ি ফেরার জন্য যানবাহন ব্যবহার না করে হাঁটা উচিত। এ ছাড়া অফিস কিংবা বাড়িতে লিফটে না উঠে সিঁড়ি ব্যবহার করতে হবে। এতে ওজন যেমন কমবে, হাড় ও হার্ট-দুটোই ভালো থাকবে। দ্রম্নত ওজন কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি উপায় হচ্ছে ব্যায়াম। ব্যায়াম শরীরকে যেমন ফিট রাখে, ঠিক তেমনি ওজন কমাতেও সাহায্য করে। এ সময়টুকুর মধ্যে হাঁটা, দৌঁড়ানো, সাঁতার কাটা ও সাইকেল চালানও আদর্শ ব্যায়াম।
২. সুষম খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা: সঠিক ওজন কমানোর প্রথম ধাপ হলো সুষম খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা। খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, শাকসবজি, ফলমূল এবং হোল গ্রেইন যোগ করতে হবে। প্রোটিন ওজন কমানোর ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ- কারণ এটি ক্ষুধা কমায় এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরাট রাখতে সহায়তা করে। প্রোটিনের ভালো উৎস হতে পারে মুরগির মাংস, ডিম, মাছ, ডাল, ছোলা এবং এর সঙ্গে যদি কিছু কাজুবাদাম খেতে পারেন ইত্যাদি।
৩. ডিটক্স ওয়াটার: প্রতিদিন বিভিন্ন রকম ডিটক্স ওয়াটার পান করা যেতে পারে। একটি শসা, এক ইঞ্চি আদা ও খোসা ছাড়ানো অর্ধেক লেবু এক মগ হালকা গরম পানিতে বেস্নন্ড করে নিয়ে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এই ডিটক্স ওয়াটার খেতে হবে। এ ছাড়া কালিজিরা, জিরা, মেথি, জৈন, চিয়াসিড (প্রতিটি এক চা চামচ করে) এক মগ পানিতে আগের রাতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সেই পানি সেদ্ধ করে লেবু দিয়ে খালি পেটে পান করতে হবে। এছাড়াও সবুজ চা পান করলে এতে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে- যা মেটাবলিজম বাড়ায় এবং ফ্যাট বার্ন করতে সহায়ক হয়।
৪. পর্যাপ্ত পানি পান করা: ওজন কমানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পানি শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং মেটাবলিজম বাড়ায়। প্রতিদিন ৮-১০ গস্নাস পানি পান করতে হবে। খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে এক গস্নাস পানি পান করলে ক্ষুধা কমে যায় এবং অতিরিক্ত খাদ্যের অভ্যাসও কমে যায়।
৫. নিয়মিত ঘুম: সুস্থ শরীরের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। ঘুমের অভাব মেটাবলিজম কমে যায় ও ক্ষুধা বৃদ্ধির হরমোন বেড়ে যায়- যা বেশি খাওয়ার প্রবণতা তৈরি করে।
৬. চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় পরিহার করা: এটি ওজন বাড়ানোর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি। কোমল পানীয়, মিষ্টি, ক্যান্ডি ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। এগুলো উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত এবং শরীরের চর্বি জমার হার বাড়িয়ে দেয়।
৭. হোল গ্রেইন খাবার গ্রহণ: ব্রাউন রাইস, ওটমিল এবং সম্পূর্ণ গমের রুটি ওজন কমাতে সহায়ক। এগুলোতে ফাইবার থাকে- যা হজম প্রক্রিয়া ধীর করে এবং ক্ষুধা কম লাগে।
৮. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: স্ট্রেস ওজন বাড়ার একটি অন্যতম কারণ। এ মুক্তি পেতে ধ্যান, যোগ ব্যায়াম, নামাজ এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা উচিত। এগুলো মানসিক শান্তি দেয় ও ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৯. খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ: খাওয়ার সময় ছোট পেস্নট ব্যবহার, খাবার খাওয়ার সময় মনোযোগ দিয়ে খাওয়া, যাতে আপনি খাবারের স্বাদ পুরোপুরি উপভোগ করতে পারেন- এতে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
১০. স্বাস্থ্যকর নাস্তা গ্রহণ: নাস্তা খাওয়ার সময় স্বাস্থ্যকর যেমন বাদাম, ফল এবং দই বেছে নেয়া। এগুলো কম ক্যালরি যুক্ত এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ।
১১. বাইরের খাবার বর্জন: বাইরের খাবার যেমন ভাজাপোড়া আর ফাস্ট ফুড বাদ দিয়ে পরিবর্তে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় দুধ, ডিম ও কলা রাখা।
তবে মনে রাখতে হবে, নারী-পুরুষ, বিএমআই, শরীরের ওজন, বয়স, উচ্চতা অনুযায়ী প্রতিবার খাবারের পরিমাণ, ধরন ও সময় অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
নাজিয়া আফরিন
স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ
নারী মৈত্রী।