স্ট্রোক বলতে আমরা সাধারণত জানি, মুখ বা শরীরের নড়াচড়া হারানোর ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া। কিন্তু এসব লক্ষণ না থাকার পরও কোনো কোনো মানুষের স্ট্রোক হতে পারে। এ ধরনের স্ট্রোককে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় সাইলেন্ট বা নীরব স্ট্রোক বলে থাকে।
সাইলেন্ট স্ট্রোক ঘটে যখন মস্তিষ্কের একটি অংশে রক্ত সরবরাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে এবং প্রক্রিয়াটিতে কিছু মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর স্পষ্ট লক্ষণ দেখা যায় না। কিন্তু এগুলো মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করে দেয়।
দেখা গেছে, কোনো ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন থাকলে স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। সাইলেন্ট স্ট্রোক শনাক্ত করা কঠিন। কারণ, এটি আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কের এমন একটি অংশে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত করে- যা কথা বলা বা চলাফেরার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে না। যদি কোনো ব্যক্তির এক বা একাধিক সাইলেন্ট স্ট্রোক হয়ে থাকে- তবে তিনি চিন্তাভাবনা এবং স্মৃতিশক্তির সমস্যায় ভুগতে পারেন। এটি আরও গুরুতর স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।
লক্ষণ
জ্ঞানের দক্ষতায় ব্যাঘাত ঘটে- পেশি, বিশেষ করে মূত্রাশয়ের অস্থায়ী নড়াচড়ায় প্রভাব পড়ে। এ ছাড়া শারীরিক ভারসাম্যের ব্যাঘাত ঘটে, মনমেজাজ পরিবর্তন হয়, ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন ঘটে, শারীরিক শক্তি হ্রাস পায়, দৃষ্টিশক্তি কমে যায় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়।
করণীয়
কেউ সাইলেন্ট স্ট্রোক অনুভব করলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মস্তিষ্কের অস্বাভাবিকতা হয়েছে কিনা, বোঝার জন্য এমআরআই বা সিটি স্ক্যানের মতো পরীক্ষা করাতে পারেন। যদি সাইলেন্ট স্ট্রোক হয়েছে, এটা পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ, জীবনযাত্রার পরিবর্তন বা ফিজিওথেরাপি নিতে পারেন। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে হবে। শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকতে হবে। ধূমপান স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ধূমপান পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। এ ছাড়া নিয়মিত চিকিৎসকের ফলোআপে থাকতে হবে। সাইলেন্ট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে পরিবারের সদস্যদের মানসিক সমর্থন দিতে হবে। দেখার মতো লক্ষণ না থাকলেও সুপারিশ করা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে সহায়তা করতে হবে।
প্রতিকার
স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণগুলো চিহ্নিত করে তার প্রতিকার করতে হবে। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ভাসকুলার ডিজিজ কিংবা ডায়াবেটিসের মতো রোগ স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়। তাই এসব রোগ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নিয়মিত কোলেস্টেরলের মাত্রা পরীক্ষা করা, রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা স্ট্রোকের ঝুঁকি উলেস্নখযোগ্যভাবে কমাতে পারে। ধূমপানের কারণে সাইলেন্ট স্ট্রোক হতে পারে। ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ বাদ দেওয়া ভালো।