মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ফাইব্রোমায়ালজিয়া এক অদ্ু্ভত বাতরোগ

ডা. মো. সফিউল্যাহ প্রধান
  ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ফাইব্রোমায়ালজিয়া এক অদ্ু্ভত বাতরোগ

সুমাইয়া (ছদ্মনাম) পড়ালেখা শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন ৩-৪ মাস হলো বিয়ে করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে শরীরের জায়গায় জায়গায় ব্যথা হয়। বেশি পরিশ্রম করলে ব্যথা ও ক্লান্তি লাগে। রাত্রে ঘুমাতে গেলে ব্যথা বেড়ে যায়। তবে স্বাভাবিক হাঁটা চলায় ব্যথা কম থাকে। সুমাইয়া বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখিয়ে কোনো ফল পাচ্ছিলেন না। পরে জানতে পারেন তার ফাইব্রোমায়ালজিয়া রোগ হয়েছে।

ফাইব্রোমায়ালজিয়া একটি দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুস্থতা, যার প্রধান উপসর্গ হচ্ছে মাংসপেশি, টেন্ডন এবং অস্থি সন্ধিগুলোতে প্রদাহ হওয়া। মধ্যবয়সি লোকজনের মধ্যে এই রোগের সূত্রপাত হয়। পুরুষের তুলনায় নারীরা সাতগুণ বেশি এই রোগে আক্রান্ত হয়।

ফাইব্রোমায়ালজিয়ার কারণ:

১. বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও মনস্তাত্ত্ব্বিক। ২. পেশিব্যথা, ৩. দীর্ঘমেয়াদি মাথাব্যথা। যেমন: টেনশনের মাথা ব্যথা (প্রায়ই ঘাড়ের অস্বস্তি ব্যথা), ৪. ঘুমের সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে পা নাড়ানো (নিশাচর মায়োক্লোনাস), ৫. ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম, ৬. কোভিড-১৯ পরবর্তী জটিলতা, ৭. হরমোন পরিবর্তন। ৮. মানসিক চাপের ভিন্নমাত্রা, ৯. জলবায়ু পরিবর্তন, ১০. বংশ গতির প্রভাব, ১১. ট্রমা: শৈশবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, ১২. বাইপোলার ডিজঅর্ডার থেকে কো-মরবিডিটি হিসেবে হতে পারে ও ১৩. অতিরিক্ত পরিশ্রম।

ফাইব্রোমায়ালজিয়ার লক্ষণ :

১. মাংসপেশিতে যন্ত্রণা, জ্বালাভাব ও টান দেওয়ার মতো অনুভূতি, খিচুনি অনুভব করা, ২. অস্থিসন্ধির চারপাশে আঙুল দিয়ে চাপ ফাইল ব্যথা অনুভব করা, ৩. অস্বাভাবিক ক্লান্তি, ৪. ঘুম না আসা, ৫. সব সময় চিন্তিত, অবসন্ন থাকা, ৬. পেট ব্যথা, পেট ফুলে থাকা, ৭. কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়া, ৮. মুখ, চোখ ও নাক শুষ্ক হয়ে থাকা, ৯. মাথাযন্ত্রণা, মাইগ্রেইনের উপসর্গ দেখা দেয়, ১০. ঠান্ডা, গরম, আলো ও শব্দে অনুভূতি বেশি হওয়া, ১১. হাত, পা, মুখের নানা জায়গা অসাড় হয়ে থাকা ও ঝিঁঝিভাব, ১২. মনে রাখা বা চিন্তা করায় সমস্যা তৈরি হওয়া, ১৩. কথা বলতে অসুবিধা হওয়া, ১৪. বিপাকে ও রেচনে সমস্যা দেখা দেওয়া, ১৫. প্রচন্ড মাসিকের ব্যথা, ১৬. পেটের চামড়ায় ব্যথা হওয়া, ১৭. ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া, ১৮. ব্যথার জন্য কাজে বা কথায় মনোযোগ দিতে না পারা, ১৯. চামড়াতে জ্বালাপোড়া করা, ২০. হাতের তালু ও পায়ের তালু ঘেমে যাওয়া, শরীরে ঘাম হওয়া, ২১. বুকে ব্যথা হওয়া, ২২. শরীর ফুলে যাওয়া।

ফাইব্রোমায়ালজিয়ার ট্রিগারপয়েন্ট (যে সব জায়গায় চাপ দিলে ব্যথা লাগে) :

মাথার পেছনের দিক, কাঁধের উপর দিক, বুকের উপরি ভাগ, নিতম্ভ, হাঁটু ও কনুইয়ের বাইরের দিক।

চিকিৎসা :

১. ওষুধ : নন-স্টেরয়েডাল প্রদাহনাশক, এন্টিডিপ্রেসেন্ট, এন্টি-সিজারড্রাগ, প্রবায়োটিকস, ভিটামিন ও মিনারেলস ইত্যাদি। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করতে হবে।

২. ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসনচিকিৎসা (ইলেক্ট্রোথেরাপি, স্ট্রেচিংব্যায়াম, ট্রিগার পয়েন্ট মেনুপুলেশন, বায়ো ফিডব্যাক)

৩. উত্তপ্ত পুল চিকিৎসা, গরম পানিতে প্রশিক্ষণ, ৪. বেদনাদায়ক এলাকায় তাপ প্রয়োজন।

বাতব্যথা, প্যারালাইসিস ও রিহেব- ফিজিও বিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক (আইআইএইচএস) ও কনসালটেন্ট,

ডিপিআরসি, ১২/১ রিং রোড, শ্যামলী, ঢাকা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে