এক ছিল কাকন নামের একটি মিষ্টি ছেলে। সে দশম শ্রেণির ছাত্র। খেয়ালি ও সৃজনশীল চিন্তা তার মাথায় সব সময় ঘুরপাক খায়। স্কুলে পড়াশুনা করার পাশাপাশি সে অনেক বই পড়ে এবং নানা ধরনের গল্পের বই তার বিশেষ পছন্দ। কিন্তু তার সবচেয়ে বড় চিন্তা ছিল বাংলা ভাষা নিয়ে।
একদিন কাকন তার মায়ের কাছে শুনল, 'বাঙালিরা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে।' কথাটি তার মনে গভীরভাবে দাগ কাটল। সে ভাবতে লাগল, 'কীভাবে আমি আমার ভাষাকে রক্ষা করতে পারি?' ভাষার জন্য এত আত্মত্যাগ, এটা একদিকে যেমন গর্বের, অন্যদিকে, তেমনই ভাবনার।
এক সকালে, কাকন তার বন্ধুদের নিয়ে একটি বৈঠক ডাকল। তার বন্ধুরা ছিল বাপ্পি, রাহুল, সুমি এবং লাবণ্য। তারা সবাই কাকনের চিন্তায় আগ্রহী ছিল। কাকন বলল, 'আমাদের ভাষাকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের বাংলা ভাষা যেন বিকৃত না হয়, সে জন্য কিছু করতে হবে।'
রাহুল বলল, 'কীভাবে শুরু করবো?' কাকন একটু ভেবে বলল, 'আমরা আমাদের স্কুলের বন্ধুদের মধ্যে একটি ভাষা সুরক্ষা অভিযান শুরু করতে পারি।
সবাই একমত হলো। তারা ঠিক করল যে প্রথমে স্কুলে একটি ভাষা সচেনতা কর্মশালা আয়োজন করবে। তারা প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। কাকন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলার জন্য গেল। প্রধান শিক্ষক তার উদ্যোগকে স্বাগত জানালেন এবং কর্মশালার আয়োজনের জন্য সব ধরনের সাহায্য করার আশ্বাস দিলেন।
কাকন, বাপ্পি, রাহুল, সুমি এবং লাবণ্য মিলে কর্মশালার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করতে থাকল। তারা বাংলা ভাষার ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন এবং ভাষার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করবে। তারা ভাষায় ব্যবহৃত কিছু ভুল এবং সঠিক ব্যবহার নিয়েও আলোচনা করবে।
অবশেষে দিনটি এলো। স্কুল মাঠে বড় আকারে কর্মশালা শুরু হলো। কাকন বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলল, 'ভাষা আমাদের পরিচয়ের অংশ। এটি আমাদের ইতিহাস, আমাদের সংস্কৃতি। ভাষা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।' তার কথা শুনে সবাই উজ্জীবিত হলো।
কর্মশালায় তারা বিভিন্ন ধরনের খেলা এবং প্রতিযোগিতাও আয়োজন করল। যেমন, 'শব্দ খেলা', যেখানে সবাই বাংলা শব্দের বানান ও অর্থ নিয়ে প্রতিযোগিতা করছিল। সুমি বলল, 'আমরা যদি বাংলা ভাষায় ভুল বানান ব্যবহার করি, তাহলে তা আমাদের ভাষার ক্ষতি করবে।'
লাবণ্য একটি নাটক পরিবেশন করল, যেখানে ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছিল। নাটকটি দেখে সবাই মুগ্ধ হলো। কাকন এবং তার বন্ধুরা একটি গানও গাইল, যেখানে তারা বলেছিল, 'বাংলা ভাষায় কথা বলব, ভাষা রক্ষা করবো।' বাপ্পি কবিতা আবৃত্তি করলো। 'মাদের গরব মোদের আশা আমরি বাংলাভাষা'।
কর্মশালার শেষে সবাই হাততালি দিয়ে তাদের উৎসাহ প্রকাশ করল। কাকন মনে মনে চিন্তা করল, 'এটাই শুরু। আমাদের আরো অনেক কিছু করতে হবে।'
পরের দিন থেকেই স্কুলে সবাই বাংলা ভাষার ব্যবহার নিয়ে আরও সচেতন হতে শুরু করল। তারা ভুল বানান এবং ভাষার বিকৃতি নিয়ে আলোচনা করতে লাগল।
কাকনের উদ্যোগ শুধু তার স্কুলেই নয়, বরং আশপাশের গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ল। সবাই বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করল। কাকন অনুভব করল, তার একটি ছোট্ট প্রয়াস বড় পরিবর্তন আনতে পারে।