মায়ের মুখের বুলি

এই ফেব্রম্নয়ারিতে সবাই তাদের বাচ্চাদের বাংলা ভাষা অর্জনের ইতিহাস বলবে। সবাই মিলে এক সঙ্গে শহীদ মিনারে যাবে। শুধু তাই নয়, এবারে সবাই এক সঙ্গে বইমেলায়ও যাবে। মন ভরে বাংলা বই কিনবে। রনি ও তার দুই বোন অনেক খুশি হলো। তারা এই প্রথম বইমেলায় যাবে। তারা অনেক বাংলা গল্প ও কবিতার বই কিনবে

প্রকাশ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

ফারজানা ইয়াসমিন
রনিরা লন্ডন থেকে এসেছে কিছু দিন হয়। থাকবে কিছু দিন। তাই তার বাবা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করছেন। রনি, তার বাবা, মা ও ছোট দুই বোনও এসেছে বাংলাদেশে। রনির বাবা বাসায় ওনার সব বন্ধুদের দাওয়াত দিয়েছেন তাদের পরিবারসহ। তাই অনেকেই এসেছেন পরিবারসহ। রনির বাবা রাকিব লক্ষ্য করল বন্ধুদের বাচ্চারা সবাই ইংরেজিতে কথা বলছে। বাংলা কেউ বললে সেটা ইংরেজদের মতোই উচ্চারণ করছে। রাকিব খুব অবাক হলো। অথচ তার মেয়ে দুটো সুন্দর করে বাংলাতে কথা বলছে। সত্যি বলতে, দেশের বাহিরে থেকে রাকিব অনেক বেশি মনে করেছে দেশকে। দূরে গেলেই মনে হয় নিজের দেশ, মা, মাটির কথা বেশি মনে পড়ে। দেশের মানুষ ও ভাষার জন্য টান বেড়ে যায়। রাকিবের বাচ্চাদের শুদ্ধভাবে বাংলায় কথা বলাতে খুব অবাক হয়ে, সেলিম রাকিবকে জিজ্ঞেস করে, তোর বাচ্চারা লন্ডনে থেকে এত শুদ্ধ করে কীভাবে বাংলায় কথা বলে? আমাদের বাচ্চারা তো বাংলাদেশে থেকেও বাংলায় কথা বলতে পারে না। মনে হয়, ইংরেজের বাচ্চা। বলে হাসতে থাকল। রাকিব হেসে বলল, হুম। দেখতে পারছি সেটা। আসলে দেশের বাহিরে থেকে দেশকে, দেশের মানুষ আর আমার মাতৃভাষাকে খুব মনে পড়েছে। আর বাংলাই একমাত্র ভাষা- যা রক্ত দিয়ে অর্জন করতে হয়েছে। নিজের ভাষা সব ভাষার থেকে সুন্দর। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে। তারা নিজেদের ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় কথা বলে না। আমি বলছি না ইংরেজি বলা খারাপ। তবে, তা শুধু প্রয়োজনে। আমি চাই দেশের মানুষ ও ভাষার প্রতি আমার বাচ্চাদের শ্রদ্ধা থাকুক। রাকিব বলল, বাচ্চারা ওখানে বড় হলেও বাংলা ভাষা তাদের জানতে হবে। আমরা সব সময়ই বাসায় বাংলায় কথা বলেছি। দেশে থেকে বাবা-মা বা কেউ যখন ফোন করে বাচ্চারাসহ আমরা বাংলায় কথা বলি। এমন কী স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, একুশে ফেব্রম্নয়ারি আমরা সবাই মিলে পালন করি। আমরা তো এবার এখানে। একুশে ফেব্রম্নয়ারিতে এবার আমরা শহীদ মিনারে যাব সবাই। এটা যেন স্মরণীয় হয়ে থাকে আমাদের কাছে। সেলিমসহ সব বন্ধুরা বুঝতে পারল সত্যি তারা নিজেদের ভাষাকে অবমূল্যায়ন করছে। বাচ্চাদের বাংলায় কথা বলার অভ্যাস করতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলায় কথা বলতে ভুলে যাবে তারা। রাকিবের বন্ধু হাসান বলল, গ্রামের বাড়ি থেকে বাবা, মা ফোন করলে ওনারা আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। বাচ্চারা তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারে না। একমন কী শুদ্ধ বাংলায় কথা বললেও বাচ্চারা বেশি কথা বলে না। রাকিবের সব বন্ধুরা মিলে ঠিক করল এই ফেব্রম্নয়ারিতে সবাই তাদের বাচ্চাদের বাংলা ভাষা অর্জনের ইতিহাস বলবে। সবাই মিলে এক সঙ্গে শহীদ মিনারে যাবে। শুধু তাই নয়, এবারে সবাই এক সঙ্গে বইমেলায়ও যাবে। মন ভরে বাংলা বই কিনবে। রনি ও তার দুই বোন অনেক খুশি হলো। তারা এই প্রথম বইমেলায় যাবে। তারা অনেক বাংলা গল্প ও কবিতার বই কিনবে। শুধু তাদের নিজেদের জন্যই নয়। তারা তাদের লন্ডনের বাঙালি বন্ধুদের জন্যও অনেক বই কিনবে তাদের উপহার হিসেবে দেওয়ার জন্য। রাকিব বলল, এটা বাচ্চাদের দোষ নয়। আমাদের উচিত ওদেরকে পথ দেখানো। নিজেদের দেশের ইতিহাস ওদেরকে জানানো। নিজের সংস্কৃতি ধরে রাখা। তোরা ওদের সঙ্গে যেভাবে কথা বলিস ওরা সেটাই শিখে। তোরা বাংলায় কথা বললে ওরাও বলতে পারত। আর ইংলিশ ভার্সন বা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া মানে তো বাংলা বাদ দিয়ে ইংরেজিতে কথা বলা নয়। বাংলা আমাদের মায়ের মুখের বুলি। এর চেয়ে মধুর ভাষা আর নেই। আমরা ইংরেজি ভাষা শিখি শুধু প্রয়োজনে। আমাদের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে বাংলা ভাষা। শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই মাতৃভাষা।