অনেক দিন যাবত শিয়ালের মাথায় একটা জিনিস ঘোরপাক খাচ্ছে। বনের সব প্রাণী সারাদিন ঘুরেফিরে। ছোট্ট ছানাগুলো সারাদিন খেলাধুলা আর দুষ্টমি করে দিন পার করে দেয়। শেয়াল ভাবে এভাবে দিন চললে এই ছানাগুলো নীতিনৈতিকতা শিখবে কি করে! মানুষ হোক বা প্রাণীই হোক সবার বেলায় প্রত্যেকের সঙ্গে ভালো আচরণ করা উচিত। নীতিনৈতিকতা শিক্ষা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এছাড়াও চলতে, বলতে সবারই নূ্যনতম জ্ঞান থাকা প্রয়োজন; হোক সেটা বনের প্রাণী কিংবা লোকালয়ের মানুষ। কিন্তু বর্তমানে শিয়াল বনের যে অবস্থা দেখছে তাতে বনের এই ছোট্ট ছানাগুলো বড় হয়ে অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়বে। অন্যায়ভাবে শিকার করবে কিংবা অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়ে পড়বে। তাই শিয়াল ভাবল, বনের মাঝে একটা স্কুল দেবে। এই স্কুলেই সে শিক্ষা দেবে কীভাবে ন্যায়-নীতিনৈতিকতা বজায় রেখে চলতে হয়। কীভাবে সবার সঙ্গে ভালোভাবে চলা যায়। অন্যায়কে বর্জন করে ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করতে হয়।
কিন্তু এই কাজটা যতটা বলা সহজ করা কিন্তু ঠিক ততটাই কঠিন। কেননা, শিক্ষা শব্দটাই যাদের কাছে চির অচেনা সেখানে স্কুল প্রতিষ্ঠা তো অনেক পরের কথা। কিন্তু শিয়াল দমবার প্রাণী নয়। মনে মনে ভাবল এই কাজ করার জন্য বনের উচ্চপদস্থ কারো সাহায্য দরকার। কিন্তু কাকে বলবে! কে-ই বা সাহায্য করবে এই কাজে। অনেক ভেবেচিন্তে শিয়াল ঠিক করল বাঘকে বললে কেমন হয়। বাঘ নিশ্চয়ই শিয়ালের কথা বুঝতে পারবে। যে-ই ভাবা সেই কাজ।
শিয়াল কালবিলম্ব না করে বাঘের বাড়ি হাজির হলো। সালাম দিয়ে বাঘকে বলল, মহাশয় কেমন আছেন? সালামের উত্তর দিয়ে বাঘ বলল, এইতো আছি রে... কোনোরকম; ইদানীং শরীরটা বেশি ভালো যাচ্ছে না। তা তোর কি অবস্থা? তোকে তো আজকাল দেখাই যায় না। শিয়াল বলল, ভালো আছি। আজকাল বাসা থেকে বেশি বের হই না। বাঘ বলল, তা হঠাৎ কি মনে করে আমার কাছে এলি? শিয়াল বললো মহাশয় আসলে আপনার কাছে আসছিলাম একটা আর্জি নিয়ে। আমি অনেক আশা নিয়ে আপনার কাছে এসেছি, আমার আর্জিটা আপনার রাখতে হবে।
বাঘ বলল, আচ্ছা বল দেখি তুই কী আর্জি নিয়ে এসেছিস। তারপর শিয়াল বাঘকে সব কথা খুলে বলল। বাঘ মহাশয় একটু ভেবেচিন্তে বলল, তুই ঠিকই বলেছিস রে... শিয়াল আজকাল বনের প্রাণীগুলোর নীতিনৈতিকতা নেই। বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা নেই। ছোটদের প্রতি স্নেহ নেই। সবাই কেমন যেন হয়ে গেছে। তবে তুই যা ভাবছিস তা যদি করা যায় তাহলে বনের মাঝে আর কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। সবাই ছোটোদের প্রতি স্নেহ করবে বড়দের শ্রদ্ধা করবে। বনের প্রাণীগুলো আর অশিক্ষিত থাকবে না। সবার মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়বে। বাঘ বলল, সত্যই শিয়াল তোকে সবাই শুধু শুধু বুদ্ধিমান বলে না- তুই সত্যিই সত্যিই অনেক বুদ্ধিমান।
তারপর বাঘ বলল, তুই যা স্কুল তৈরির সব ব্যবস্থা কর, আমি বনের সবাইকে রাজি করাব।এছাড়াও তোর যা যা সাহায্য প্রয়োজন তা সব আমি করব। বাঘের কথায় শিয়াল অনেক খুশি হলো।
কিছুদিনের মধ্যেই বনের মাঝে তৈরি হয়ে গেল একটা সুন্দর স্কুল। প্রথম প্রথম একটা দুটো বাঘ ও শিয়ালের ছানা এলেও আস্তে আস্তে হাতি, বানর, হরিণসহ সব প্রাণীর ছানা আসতে লাগল। কয়েকদিন পর দেখা গেল বনের সব প্রাণীর ছানারা স্কুলে পড়তে আসছে। আস্তে আস্তে এই স্কুল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে গেল যে, আশপাশের বন থেকেও অনেক ছানা পড়তে আসে বাঘ-শিয়ালের স্কুলে। এসব দেখে শিয়াল আনন্দে কেঁদে ফেলে; কারণ তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।