বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

বন্দে আলী মিয়া শিশুসাহিত্যের অনন্য প্রতিভা

শওকত এয়াকুব
  ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বন্দে আলী মিয়া শিশুসাহিত্যের অনন্য প্রতিভা
বন্দে আলী মিয়া শিশুসাহিত্যের অনন্য প্রতিভা

বন্দে আলী মিয়া একজন প্রতিভাবান শিশুসাহিত্যিক। তার লেখা ছোটদের বইয়ের সংখ্যা একশত পাঁচটি। ছোটদের জন্য লেখা তার ছড়া-কবিতাগুলো বেশ জনপ্রিয়। যদিও বর্তমানে শিশু-কিশোররা তার কবিতা পড়ার সুযোগ হচ্ছে না। কারণ আগে পাঠ্য বইয়ে একটি ছড়া থাকলেও বর্তমানে সেটিও নেই হয়ে গেছে কোনো এক আজানা কারণে। এবং শিশু একাডেমিও তার বইগুলো নতুন মুদ্রণ প্রকাশ করছে না। যার দরুন শিশু-কিশোররা আলী মিয়ার বইপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কবি বন্দে আলী মিয়া ১৯০৬ সালের ১৭ জানুয়ারি পাবনা জেলার রাধানগর গ্রামে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব এবং কৈশোর কেঁটেছে পাবনায়। অতি অল্প বয়সে পিতা তাকে বাড়ির নিকটবর্তী মজুমদার একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন। লেখাপড়ার দিকে যত খেয়াল, তার চেয়ে বেশি ঝোঁক ছবি আঁকার দিকে।পরবর্তী সময়ে ছবি আঁকার কাজে যতটা না তিনি পরিচিত হয়েছেন, তার চেয়ে বেশি খ্যাতি লাভ করেছেন কবি হিসেবে। বেশি সুনামের অধিকারী হয়েছেন শিশুসাহিত্য রচনা করে। কবি বন্দে আলী মিয়া পাবনার রাধানগর মজুমদার একাডেমি হতে ১৯২৩ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।পাবনা মজুমদার একাডেমি থেকে ১৯২৩ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে কলকাতা আর্ট একাডেমিতে ভর্তি হন এবং ১৯২৭ সালে তিনি ইন্ডিয়ান আর্ট একাডেমি থেকে চিত্রকলায় ১ম বিভাগে ডিগ্রি অর্জন করেন।

বন্দে আলী মিয়ার পরিচিতি মূলত শিশুসাহিত্যিক হিসেবে। আরো স্পষ্ট করে বললে ছোটদের 'গল্পদাদু' হিসেবে। কবি যখন বেতারে কাজ করতেন, তখন ছোটদের জন্য একটা অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। নাম ছিল 'সবুজ মেলা'। বেতারে ছোটদের জন্য আরো একটা অনুষ্ঠান হতো তখন, নাম 'ছেলে ঘুমাল'। সে অনুষ্ঠানের জন্য প্রায়ই নিত্যনতুন গল্প লিখে দিতেন তিনি। আর এসব করতে করতেই এক সময় 'গল্পদাদু' হয়ে গেলেন কবি বন্দে আলী মিয়া। শিশুতোষ রচনার মাধ্যমে কবি বন্দে আলী মিয়া কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। বাংলা শিশুসাহিত্যের ইতিহাসে কবি বন্দে আলী মিয়ারই বইয়ের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। শ্রম, নিষ্ঠা, অধ্যবসায়,সাধনা ও নিরলস চর্চার জন্য তিনি বাংলা শিশুসাহিত্যে এক বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন। কঠিন জিনিসকে সহজ ও সরলভাবে প্রকাশ ও পরিবেশনের জন্যও তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। কবি বন্দে আলী মিয়ার শিশুসাহিত্যে সবচেয়ে বড় অবদান হলো ছোটদের উপযোগী জীবনীগ্রন্'। মহত লোকদের জীবনী যে মানুষের চরিত্র ও মনুষ্যত্ব অর্জনে বড় অবলম্বন তা হয়তো বন্দে আলী মিয়া বিশেষভাবে অনুধাবন করেছিলেন। তাই তিনি ইতিহাস থেকে বিখ্যাত মনীষী, মহামানব, কবি-সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক, সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ প্রভৃতির জীবনতথ্য অবলম্বনে প্রচুর শিশুতোষ জীবনী লিখেছেন। কবি বন্দে আলী মিয়া ইতিহাসের বিষয় উপাদান ও ঘটনাকে কেন্দ্র করেও রচনা করেছেন অনেক গ্রন্থ'। তার মধ্যে 'কোহিনূর', 'ছোটদের বিষাদ সিন্ধু', 'ছোটদের মীর কাসিম', 'তাজহমহল', 'কারবালার কাহিনী'সহ প্রভৃতি গ্রন্থে' শিক্ষণীয় দিক তুলে ধরেছেন। তিনি কোরআনের গল্প, হাদিসের গল্প ও গুলিস্তাঁর গল্প লিখেছেন। আরো লিখেছেন 'ইরান-তুরানের গল্প', 'ঈশপের গল্প', 'দেশ বিদেশের গল্প', 'শাহনামার গল্প'। তিনি লোককাহিনী, রোমাঞ্চকর ও রূপকথার কাহিনী অবলম্বনে গন্থ' রচনা করেছেন। তেমনি বাস্তব সংসার সমস্যা নিয়েও শিশু উপযোগী বহু গ্রন্থ্থ' রচনা করেছেন। তার রচিত শিশুতোষ গ্রন্থ্থ আজও অমর হয়ে আছে। তার রচিত বিখ্যাত কয়েকটি শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- 'চোর জামাই'(১৯২৭), 'মেঘকুমারী' (১৯৩২), 'বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা' (১৯৩২), 'কুঁচবরণ কন্যা'(১৯৬১), 'মৃগপরী'(১৯৩৭), 'বোকা জামাই' (১৯৩৭), 'সোনার হরিণ'(১৯৩৯), 'শিয়াল পন্ডিতের পাঠশালা' (১৯৫৬), 'ডাইনি বউ' (১৯৫৯), 'রূপকথা' (১৯৬০), 'সাত রাজ্যের গল্প' (১৯৭৭) 'হাদিসের গল্প' প্রভৃতি।

বর্তমানে বন্দে আলী মিয়ার শিশুতোষ গ্রন্থগুলো পুনর্মুদ্রিত হলে শিশু-কিশোরদের মোবাইল আসক্তির মতো মারাত্মক জিনিস থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতো। আশা করি, শিশু একাডেমি এই বিষয়টি তাদের বিবেচনায় আনবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে