মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

বর্ণমালার গল্প

শব্দটি বানানোর পর পাঠশালার পরিবেশ একদম বদলে গেল। সবাই একে অপরকে সম্মান করতে শুরু করল। তাদের মধ্যে আর কোনো ঝগড়া বা বিভেদ রইল না। 'অ' তাদের উদ্দেশে বলল, 'এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা শিখলাম, আমাদের প্রত্যেকের গুরুত্ব আছে। একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে থাকলেই আমরা বড় কিছু করতে পারি'
পলস্নব শাহরিয়ার
  ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বর্ণমালার গল্প
বর্ণমালার গল্প

একটি গ্রামে ছিল এক অদ্ভুত পাঠশালা, যেখানে বাংলা বর্ণমালার সব অক্ষর জীবন্ত হয়ে ক্লাস করত। এই বর্ণমালাগুলো নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখলেও মাঝে মাঝে ছোটখাটো ঝগড়া লেগে থাকত।

একদিন পাঠশালার প্রধান, স্বরবর্ণ 'অ', ক্লাসের সবাইকে ডেকে বলল, 'আমাদের একটি বড় সমস্যা হয়েছে। আমাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করে তারা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, আর কেউ কেউ মনে করে তারা কম মূল্যবান। এভাবে চললে আমাদের ভাষার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে। আমাদের কিছু করতে হবে।'

বর্ণমালার সবাই চুপ হয়ে গেল। তারা বুঝতে পারছিল, নিজেদের মধ্যে ঝগড়ার কারণে সত্যিই তাদের শক্তি কমে যাচ্ছে।

'অ' প্রস্তাব দিল, 'আমাদের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা হবে। যার মাধ্যমে আমরা শিখতে পারব, সবাই মিলে কাজ করলেই ভাষা সুন্দর হয়।'

প্রতিযোগিতার নিয়ম ছিল সহজ। সবাইকে মিলে এমন একটি শব্দ বানাতে হবে- যা ভালোবাসা ও ঐক্যের প্রতীক হবে। কিন্তু একটি শর্ত ছিল- প্রতিটি অক্ষরকে অন্তত একবার সেই শব্দে ব্যবহার করতে হবে।

প্রথমে ব্যঞ্জনবর্ণ 'ক' বলল, 'আমি শব্দের শুরুতে থাকব। কারণ আমি ছাড়া অনেক শব্দই অসম্পূর্ণ।'

'স' সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করল, 'তুমি সব সময় প্রথম হতে চাও কেন? আমি শব্দের শেষে থাকতে চাই।'

'ম' ধমক দিয়ে বলল, 'আমার মতো মধুর অক্ষরকে মাঝখানে রাখলে শব্দটা আরও সুন্দর হবে।'

এভাবে সবাই নিজেদের জায়গা ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কেউই কারও কথা শুনতে চায় না। 'অ' তাদের থামিয়ে বলল, 'তোমরা যদি নিজেদের মধ্যে সমঝোতা না করো, তাহলে শব্দ কখনোই তৈরি হবে না।'

তখন স্বরবর্ণ 'আ' কথা বলল, 'আমরা কেন একে অপরের সঙ্গে ঝগড়া করছি? আমাদের তো একসঙ্গে কাজ করার কথা। চল, সবাই মিলে পরিকল্পনা করি।'

'অ', 'আ', 'ই', এবং 'উ' স্বরবর্ণগুলোর নেতৃত্বে সবাই মিলে বসে শব্দ বানানোর চেষ্টা শুরু করল। তারা ধীরে ধীরে বুঝতে পারল, প্রতিটি অক্ষরই বিশেষ এবং তাদের একসঙ্গে কাজ করলেই শব্দ তৈরি হয়।

অনেক চেষ্টার পর তারা একটি সুন্দর শব্দ বানাল- 'সম্প্রীতি'। শব্দটি বানিয়ে তারা খুব খুশি হলো। সবাই বুঝল, এই শব্দ তাদের বন্ধুত্ব এবং ঐক্যের প্রতীক।

শব্দটি বানানোর পর পাঠশালার পরিবেশ একদম বদলে গেল। সবাই একে অপরকে সম্মান করতে শুরু করল। তাদের মধ্যে আর কোনো ঝগড়া বা বিভেদ রইল না।

'অ' তাদের উদ্দেশে বলল, 'এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা শিখলাম, আমাদের প্রত্যেকের গুরুত্ব আছে। একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে থাকলেই আমরা বড় কিছু করতে পারি।'

সেদিন থেকে বাংলা বর্ণমালার প্রতিটি অক্ষর একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে লাগল। তাদের ঐক্যের ফলে বাংলা ভাষা আরও সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী হয়ে উঠল। পাঠশালার চারদিকে আনন্দ আর উৎসবের পরিবেশ তৈরি হলো।

গ্রামের শিশুরা সেই গল্প শুনে শিখল, ঐক্য এবং সহযোগিতাই সাফল্যের চাবিকাঠি। আর বর্ণমালাগুলো নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক অটুট রেখে বাংলা ভাষার সৌন্দর্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে