বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
লোককথা

কাক ও পেঁচার গল্প

আশরাফ আলী চারু
  ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
কাক ও পেঁচার গল্প
কাক ও পেঁচার গল্প

অনেক অনেক দিন আগের কথা। তখনকার দিনে কাক ও পেঁচাগুলো দেখতে ধবধবে সাদা রঙের ছিল। সাদা রং হওয়ার কারণে তাদের একে অপরকে চিনতে খুব কষ্ট হতো। তারা মনে মনে চাইত যদি তাদের গায়ের গঠন অন্য রঙের হতো! কিন্তু তা কখনোই আপনা-আপনি হতো না বা এটা যে হওয়ার কথা নয়, এটাও তারা জানত।

সেই সময় এক সাদা কাক এবং এক সাদা পেঁচার মধ্যে বেশ বন্ধুত্ব ছিল। তারা একসঙ্গে বসে কথা বলত। একসঙ্গে উড়ে বেড়াত। খাইত, হাঁটত এবং ঘুমাত। বলতে গেলে তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল।

একদিন বন্ধু কাক পেঁচাকে বলল, সে তার গায়ের রং পছন্দ করে না। খাবার সংগ্রহ করতে গেলে কাঁদা পানিতে পালকগুলো সহজেই ময়লা হয়ে যায়। দেখতে ভীষণ মন্দ দেখায়। কাকের কথা শুনে বন্ধু পেঁচা বলল, মনের কথা বলেছ ভাই, আমার পিঠে যদি কিছু সুন্দর দাগ থাকত। পাখা দুটোতে যদি অন্য রঙে কিছু আঁকা থাকত, আহ্‌ কী যে ভালো লাগত!

এরপর কাক আর বন্ধু পেঁচা মিলে তাদের শরীরে নতুন কোন রং করার ব্যাপারে কিছু সিদ্ধান্ত নিল।

কাক বলল, আমরা একে অপরকে অন্য কোনো রং দিয়ে আঁকিয়ে দৃষ্টি নন্দন করে তুলতে পারি। এক্ষেত্রে আমরা প্রদীপের কালো তেল দিয়ে আঁকতে পারি। সুন্দর করে তুলতে পারি নিজেদের। চল, তাই করি।

পেঁচা বলল, টু-হুইট, টু-হু। এটা অনেক মজা হবে! চলো আমরা নিজেদের প্রতি যত্নশীল হই। পৃথিবীকে দেখিয়ে দিই আমরা নিজেদের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে কতটা সচেতন।

পরামর্শের পর তারা একটি পুরনো মাটির প্রদীপ খোঁজে বের করল। প্রদীপের ভেতর অনেক ঘন কালো তেল ছিল। প্রদীপ সংগ্রহ করে তারা মহাখুশি! কাক পেঁচার একটি পালক তুলে নিল। সেই পালক দিয়ে তুলি বানাল। সেই তুলি তেলে ডুবিয়ে পেঁচার সারা শরীরে গোল গোল দাগ দিতে লাগল। এক সময় সুন্দর কালো দাগে পেঁচার পাখায় নতুন সৌন্দর্য ফুটে উঠল। কাক কাজটি এত ভালোভাবে করল যে সামান্যত, ত্রম্নটি রইল না। তার হাতের ছোঁয়ায় চমৎকার কারুকার্যে পেঁচাটি সত্যিই অনেক সুন্দর হয়ে উঠল। পেঁচা জলের ধারে গিয়ে নিজেকে একবার দেখে নিল। সত্যিই অপূর্ব! সে ফিরে এসে কাককে ধন্যবাদ জানাল।

তারপর পেঁচার কাজের সময় এলো। সে পালকের তুলি হাতে নিল। সাদা কাককে সে রং করতে আরম্ভ করল। ময়ূরের পাখা যেমন ঠিক তেমন করে সাজাতে শুরু করল। প্রথম দিকে পেঁচা এই কাজটি খুব ভালো ভাবেই করছিল। মনোযোগের সঙ্গে কাকের গায়ে সে অতি সুন্দর গোল গোল দাগ তৈরি করছিল। ঘাড় বাঁকিয়ে যা দেখে কাকটি সত্যিই খুব গর্বিত বোধ করতে লাগল। কিন্তু আর্টের এ কাজ অর্ধেক হওয়ার আগেই পেঁচাটি ক্লান্ত হয়ে পড়ল। সে ক্লান্তি সইতে না পেরে প্রদীপটা উলটে দিল, প্রদীপের সমস্ত কালো তেল পড়ল কাকের গায়ে। কাকের সারা শরীর প্রদীপের কালো তেলে ভিজে গেল।

ঘন কালো তেলে নিজেকে ঢেকে দিতে দেখে কাক পেঁচার ওপর রেগে গেল! এটি বন্ধ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেও কোনো লাভ হলো না। কালো রঙে ঢেকে গেল কাকের গা। তখন থেকে কালো হয়ে গেল কাকের পালক। কাক হয়ে গেল কালো।

কাক রাগান্বিত হয়ে ভেজা পাখা দিয়ে পেঁচাকে দু'টি থাপ্পড় দিল। পেঁচার দুই চোখ ভেতরে ঢুকে গেল। সেই থেকে পেঁচার চোখ মাথার ভেতরে। নিজেকে বাঁচাতে কোনোমতো লোকালো গাছের খোঁড়লে।

শোনা যায়, তারপর হতেই কাকদের গায়ের রং কালো। আর পেঁচারা কাকের ভয়ে ভয়ার্ত ও লাজুক। কাকের ভয়ে দিনের আলোয় কম দেখার কারণে পেঁচারা রাতে বের হয়।

(রূপান্তর: একটি ইনুইট লোককথা থেকে রূপান্তরিত, পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত)।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে