ছোটবেলায় তিনি খুব লাজুক স্বভাবের ছিলেন। ডাকনাম ছিল মিলু। ঘুরে বেড়ানোর অভ্যাস ছিল প্রচুর। খেলাধুলা, বাগান করা ও সাঁতার কাটা পছন্দ করতেন।
ছোটবেলায় মামার সঙ্গে ঘুরেছেন অনেক জায়গায়। তিনি ছোট-বড় সবার প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ। জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ফেব্রম্নয়ারি বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্বপুরুষগণ বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের অধিবাসী ছিলেন।
জীবনানন্দের পিতা সত্যানন্দ দাশগুপ্ত ছিলেন শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও সমাজসেবক।
জীবনানন্দের মাতা কুসুমকুমারী দাশ গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার প্রচন্ড ঝোঁক ছিল। তার লেখা শিশুতোষ কবিতা 'আদর্শ ছেলে' সবার কাছে সুপরিচিত।
বাড়িতে মায়ের কাছে জীবনানন্দের হাতেখড়ি শুরু হয়। কেননা পিতা কম বয়সে স্কুলে ভর্তি হওয়ার বিরোধী ছিলেন। ছোটবেলায় ভোরে ঘুম থেকে ওঠেই পিতার কণ্ঠে উপনিষদ আবৃত্তি আর মায়ের কণ্ঠে গান শোনা ছিল তার প্রতিদিনকার অভ্যাস।
জন্মসূত্রে তার পদবি দাশগুপ্ত হলেও তিরিশের দশকে তিনি 'গুপ্ত' বর্জন করে 'দাশ' ব্যবহার শুরু করেন।
১৯০৮ সালে জীবনানন্দের বয়স যখন ৮ তখন তাকে ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। কিশোর জীবনানন্দ ছবি আঁকায় বেশ পটু ছিলেন।
বিদ্যালয়েই বাংলা ও ইংরেজি ভাষার দক্ষতা লাভ করেন। ছাত্র হিসেবে তিনি খারাপ ছিলেন না। ১৯১৫ সালে ব্রজমোহন বিদ্যালয় থেকে তিনি প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ঠিক দু'বছর পর ব্রজমোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সাফল্যের ধারা বজায় রাখেন। এবারও তিনি প্রথম বিভাগ অর্জন করেন। অতঃপর তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য বরিশাল ত্যাগ করেন। পরিবারের ইচ্ছায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন। ১৯১৯ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। এ কলেজেই তিনি ইংরেজি বিষয়ে অনার্স সম্পন্ন করেন। জানা যায়, ওই সময় ব্রহ্মবাদী পত্রিকায় কবির একটি কবিতা ছাপা হয়। কবিতাটির নাম- বর্ষা আবাহন'। ছোটবেলায় মায়ের লেখালেখির সূত্রপাত ধরেই লেখালেখির প্রতি তার আগ্রহ তৈরি হয়। যদিও লেখালেখির প্রতি ঝোঁক কবির সেই ছোটবেলা থেকেই। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস মৃতু্যবরণ করলে তাকে নিয়ে 'দেশবন্ধু প্রয়াণে' শিরোনামে একটি কবিতা রচনা করেন।
সালটি তখন ১৯৩৫। মজার ব্যাপার হলো, জীবনানন্দ দাশ যে কলেজে পড়ালেখা করেছেন, লেখাপড়া শেষ করে পরবর্তীতে সেই ব্রজমোহন কলেজে ইংরেজির শিক্ষক হয়ে ফিরে আসেন। ব্রজমোহন কলেজ তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল।
কর্মজীবনে অর্থকষ্টের সমস্যা তাকে পীড়িত করত। জীবদ্দশায় জীবনানন্দ দাশ কবি হিসেবে খ্যাতি পাননি। তিনি কিছুটা প্রচারবিমুখ মানুষ ছিলেন। মৃতু্যর পর কবি হিসেবে তার খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে!
জীবনানন্দ দাশকে আখ্যায়িত করা হয় বিংশ শতাব্দীর প্রধান আধুনিক কবি ও প্রাবন্ধিক হিসেবে। গ্রাম-বাংলার নিসর্গের রূপায়ণে কবিতাকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তাকে বলা হয় 'রূপসী বাংলার কবি'। বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দ দাসকে 'নির্জনতার কবি' বলে অ্যাখ্যায়িত করেছেন। তার কবিতায় পরাবাস্তবের সন্ধান মেলে। ১৪ অক্টোবর, ১৯৫৪ তিনি কলকাতার বালিগঞ্জে ট্রাম দুর্ঘটনার শিকার হন। ২২ অক্টোবর সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।