গল্প

ভূতের দেশে বৃষ্টি

ভূত রাজার মৃতু্যর পরে তার ছেলে ভূত রাজা হবে। এই নিয়মটা হঠাৎ পাল্টে যায়। বর্তমান ভূত রাজার শুধু একটি মেয়ে। ছেলে নেই। নিয়ম হিসেবে ওই মেয়ে ভূতের রাণী হবে ঘোষণা করে রাজা। ভূতের গাঁয়ে তাই নিয়ে বড্ড আলোচনা শুরু হয়। এই কথা ভূত রাজার কানে আসায় ভূত রাজার বাড়িতে সবাইকে ডাকা হয়।

প্রকাশ | ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

দীপক বড়ুয়া
এটা শ্যাওলাপুর রাজ্য। ভূতের বসবাস। অত বড় নয়। তবে ভীষণ সুন্দর। সারিসারি সব ভূতের বাড়ি। ভূতের হাটবাজার আছে। মাঠ, পাহাড়ে ঘেরা, ভারি চমৎকার। দোকানের মালিক সবাই ভূত। ক্রেতারাও ভূত। একটা বড় সমস্যা, এই গাঁয়ে আলো নেই। ভূতেরা আলো পছন্দ করে না। দিনেই ওদের কাজ। ভূতের একজন রাজা আছে। এটা তাদের বংশধর নিয়মে চলে আসছে। ভূত রাজার মৃতু্যর পরে তার ছেলে ভূত রাজা হবে। এই নিয়মটা হঠাৎ পাল্টে যায়। বর্তমান ভূত রাজার শুধু একটি মেয়ে। ছেলে নেই। নিয়ম হিসেবে ওই মেয়ে ভূতের রাণী হবে ঘোষণা করে রাজা। ভূতের গাঁয়ে তাই নিয়ে বড্ড আলোচনা শুরু হয়। এই কথা ভূত রাজার কানে আসায় ভূত রাজার বাড়িতে সবাইকে ডাকা হয়। সবাই হাজির। সবার মনে ভয় খেলা করে। কারণ ভূতের রাজার মেজাজ বেশি গরম। মনটা নরম। অন্যায় কথা শুনতে পছন্দ করে না। সবাই যখন ভূতের মেয়ে রাণী হবে কথা নিয়ে দিব্যি আলোচনা চলছে, তখনই সবাইকে এইবার ডাকা। ভূত রাজা কথা বলার জন্য উঁচু স্টেজ তৈরি করা হয়। খুব শক্ত করে। ভূতরা সাধারণ মানুষ থেকে অনেক বড়সড় হয়। গায়ে লম্বা লোম, দীর্ঘ হাত, বাঁশপাতার মত নখ, কচু পাতার সমান কান, ইয়া বড় চোখ। যেন অদ্ভুত একটা শরীর। ভূত রাজা স্টেজে উঠতেই সবাই দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানায়। ভূত রাজা চেয়ারে বসে কথা শুরু করে। -তোমরা সবাই কেমন আছো? সবাই একই সুরে বলে, ভালো আছি। -আমার কানে অন্যায় একটা কথা আসছে। তাতে আমি ভীষণ রেগে আছি। সবাই জানো, আমার চৌদ্দ পুরুষের নিয়মে এই রাজ্য চলছে। আমার ছেলে নেই, তাতে আপত্তি কার আছে দাঁড়িয়ে বল। আমার এক মাত্র মেয়ে। সেই-ই ভবিষ্যতের রাণী হবে। এটাই রাজ্যের নিয়ম। আর এই সবেতো আমার হাত নেই। সব সৃষ্টিকর্তার কাছে। সবাই চুপ। ছোট একটি ভূত ছেলে দাঁড়িয়ে বলে, -ভূতরাজা, আমার প্রণাম। আমার একটা প্রস্তাব আছে। -কি প্রস্তাব তোর। এত ছোট তুই! সাহস আছে তোর। বল্‌ কি প্রস্তাব? -ভূত রাজা, মেয়ে কীভাবে রাণী হবে। সেকি পারবে রাজ্য চালাতে। সে এখনো অনেক ছোট। -সে কী বড় হবে না? চিরকাল ছোট থাকবে। আমি সব শিখিয়ে দেব দেখবি আমার চেয়ে খুব ভালো করে রাজ্য চালাবে সে। ছেলেটা একটু চুপ থেকে আবারও বলে, -রাজ মশাই, আরেকটি কথা, অনেক দিন ধরে আমাদের রাজ্যে বৃষ্টি নেই। আমরা স্নান করেছি কখন মনে নেই। গায়ে বিশ্রী গন্ধ। সারাদিন চুলকায়। তার একটা সমাধান চাই। -ধু্যত পাগল, এটা কি বলছিস? এটা বৃষ্টির দিন নয়। আষাঢ় শ্রাবণ আসুক, মেঘ ডাকবে, বৃষ্টি পড়বে। তক্ষুনি ভূতরাজার মেয়ে বাবার পাশে দাঁড়িয়ে বলে, বাবা আমি একটি কথা বলতে চাই। -কি কথা বলবি মা; অবাক হয়ে বাবা প্রশ্ন করে। -বাবা, সৃষ্টিকর্তা মানুষের কথা শোনলে, ভূতের কথাও শোনবে। আমরাও তো সৃষ্টিকর্তার তৈরি। -ঠিক বলেছিস তো। কথাটা মন্দ নয়। কি করতে হবে বল। -আমরা সবাই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করলে সৃষ্টিকর্তা বৃষ্টি দেবে। সবার আশা পূর্ণ হবে। তবে কায়মনে একাগ্রতায় প্রার্থনা করতে হবে। -তো প্রার্থনাটা কখন করতে হবে। ভূত রাজার প্রশ্ন। -এই ভূত সভায় করা হউক। ভূতরাজা বলল, সবাই রাজি। -হঁ্যা, রাজি। সবাই উঁচু গলায় বলে। -তবে, একটা কথা। সবার প্রার্থনায় যদি বৃষ্টি হয়, তোমাদের আমার মেয়েকে রাণী হিসেবে মানতে হবে, ওর কথা শোনে চলতে হবে। এক আধ বয়েসি ভূত বলে, ভূত রাজা ওই ছেলেটি আমার। আপনি ওকে ক্ষমা করে দিন। ছোট হয়ে বড় কথা বলল, সেটা ভারি অন্যায় করেছে সে। -ছিঃ ছিঃ ছিঃ, একি বলছো। তোমার ছেলেটা বুদ্ধিমান। সবার ভালোর জন্য বলেছে। সত্যি কি জানো, আমার শরীরটা ও স্নান করতে চায়। চলো আমরা প্রার্থনা শুরু করি। সবাই প্রার্থনা শুরু করে। প্রার্থনার পর পর আকাশে মেঘ ডাকে। কি আশ্চর্য! ঝম ঝম ঝম বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। সবাই বৃষ্টিতে ভিজে, স্নান করে, নাচে, গান গায়। ভূতের রাজ্যে অসময়ে বৃষ্টি পড়া দেখে সবার আনন্দের বাঁধ ভেঙে যায়। সবাই আবারও উচ্চ স্বরে বলতে শুরু করে, ভূতের রাজার মেয়ে, আমাদের রাণী মা'ই কি জয়! রাণী মা'ই কি জয়! তখনো বৃষ্টি পড়ছে। এই বৃষ্টি যেন থামবার নয়, এই বৃষ্টি আনন্দের।