সৌরজগতের কথা
প্রকাশ | ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
আলমগীর খোরশেদ
অ থৈদের বিজ্ঞান বইয়ে সৌরজগৎ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। ক্লাসে লুৎফা মিস তা-ই নিয়ে পড়াচ্ছিলেন। মেয়েরা, তোমরা রাতের আকাশ দেখেছ কখনো? অসংখ্য তারার মেলা।
'জ্বি মিস।-ছাত্রীরা সমবেতভাবে বলে উঠল।'
'মিস তারা কি? -অথৈয়ের জিজ্ঞাসা।
'তারা শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ 'স্টার'। স্টার শব্দটি গ্রিক 'অ্যাস্টার' থেকে এসেছে। যা আবার হিত্তীয় ভাষার শব্দ 'শিত্তার' থেকে। তারা উচ্চতাপে 'নিউক্লিয় সংযোজন' বিক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রমাগত নিজের জ্বালানি উৎপন্ন করে। এই জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে তারার মৃতু্য হয়, তখন এটির নাম হয়, 'শ্বেত বামন' যা 'কৃষ্ণব্বিরের' সৃষ্টি হয়। বস্ন্যাকহোল মহাকাশের সবচেয়ে ভারি বস্তু। এটা এমন একটি বিশেষ স্থান যেখান থেকে কোনো কিছু এমনকি আলোও ফিরে আসতে পারে না। সূর্যের গ্র্যাভিরির চেয়েও বেশি গ্র্যাভিটি বস্ন্যাকহোলের। মহাকর্ষীয় চাপ এতই বেশি, ফলে সেখান থেকে আলোও ফিরে আসতে পারে না। এর ভর কেন্দ্রে কেন্দ্রীভূত হয় বলে এটাকে সিংগুলারিটিও বলা হয়।'
তোমরা কি জান, পৃথিবী থেকে সবচেয়ে কাছের তারা কোনটি?
সবাই চুপ। ক্লাসে নীরবতা। মিস বলেস্নন,
'পৃথিবী থেকে সবচেয়ে কাছের তারা হলো- সূর্য।'
'মিস সূর্য কত বড়? সূর্য নিয়ে কিছু বলুন- অথৈ জিজ্ঞেস করে।'
\হ'সৌরজগতের একটি মাত্র তারা আছে, যার নাম সূর্য। আমাদের ছায়াপথ, মিল্কিওয়ের একশ' থেকে চারশ' বিলিয়ন নক্ষত্রের মধ্যে সূর্য একটি। আর পৃথিবী থেকে সূর্য তিন লাখ গুণ বড়। জেনে রাখ, মহাকাশের সবগুলো গ্রহ একসঙ্গে করলে যে আকার হবে, সূর্য তার চেয়েও সাতশ পঞ্চাশ গুণ বড়। সূর্য হলো সৌরজগতের প্রধান উপাদান- যা সৌরজগতের মাতৃতারা। সূর্যের ভর এত বেশি যে, এই ভরের কারণে অভ্যন্তর ভাগে যে বিপুল ঘনত্বের সৃষ্টি হয়, তা নিউক্লিয় সংযোজন বিক্রিয়ায় চলমান থাকে। সূর্যে আছে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম।'
'মিস, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি কি? -অথৈ প্রশ্ন করে।'
'আগেও বলেছি তোমাদের, অনেক নক্ষত্রের সমাহার হলো গ্যালাক্সি। গ্রীকপুরাণের মতে নাম হতো গ্যালাক্সির। রাজা যিউস ও এরার কাহিনী। আদেশ হয় হারকিউলিসকে দুধপান করানোর জন্য। লুকিয়ে দুধ খাওয়ার সময় চেতন হয়। বিচ্ছিন্ন করে দুধপান বন্ধ করা হয়। কিন্তু দুধের নহর চলছিল তখনো। তাই এর নামকরণ হয় মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি। কৃষ্ণ গহবর শব্দের অর্থ কালোগর্ত। নিজের দিকে আসা সব আলোক রশ্মিকে শুষে নেয় বলে এর নাম কৃষ্ণ গহবর।'
'মিস ছায়াপথ কি? -সুমাইয়া জিজ্ঞেস করে।'
'ছায়াপথ মহাকর্ষীয় শক্তি দ্বারা আবদ্ধ একটি অতি বৃহৎ সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা- যা তারা আন্তনাক্ষত্রিক গ্যাস ও ধূলিকণা, পস্নাসমা, প্রচুর পরিমাণ অদৃশ্য বস্তু দ্বারা গঠিত। একটি আদর্শ ছায়াপথে ১০ মিলিয়ন থেকে এক ট্রিলিয়ন পর্যন্ত তারা থাকে- যারা একটি সাধারণ মহাকর্ষীয় কেন্দ্রের চারিদিকে ঘূর্ণয়মান। বিভিন্ন তারা ছাড়াও ছায়াপথে বিভিন্ন ধরনের নিহারিকা থাকে।'
'মিস নিহারিকা কি? -অথৈ জিজ্ঞেস করে।'
'নিহারিকা হলো, ধূলিকণা, হাইড্রোজেন গ্যাস, পস্নাসমা দ্বারা গঠিত এক ধরনের আন্তঃনাক্ষত্রিক মেঘ। ১৬১০ সালের ২৬ নভেম্বর নিকোলাস ক্লদ ফাবরি নামক এক ফরাসি ব্যক্তি টেলিস্কোপ দ্বারা কালপুরুষ নিহারিকা আবিষ্কার করেন। ১৬৫৯ সাল পর্যন্ত লেগে যায় কালপুরুষ নিহারিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে।'
'মিস, সূর্য যদি না থাকে, তাহলে কি হবে? -ক্লাস ক্যাপ্টেন অথৈ মিসকে জিজ্ঞেস করল।'
'দারুণ প্রশ্ন করেছ। সূর্য না থাকলে সব গ্রহ আকর্ষণের অভাবে তাদের কক্ষপথ হারিয়ে এদিক ওদিক ছড়িয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। সূর্য সৌরমন্ডলের প্রতিটি গ্রহকে তাপ আলো সরবরাহ করে। সূর্য না থাকলে মহাকর্ষ বিলীন হয়ে যাবে। গ্রহ উপগ্রহগুলো ছিটকে পড়বে। তাপমাত্রা কমে যাবে, সমুদ্রের উপরিভাগ বরফ হয়ে যাবে উদ্ভিদ ও প্রাণীরা মরে যাবে।'
'মিস চাঁদের কথা তো বলেস্নন না? -সুহা জিজ্ঞেস করে।'
'চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ ও সৌরজগতের পঞ্চম বৃহত্তম উপগ্রহ। চাঁদ, সূর্য, তারা, পৃথিবী মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে অবস্থিত। চাঁদের আয়তন পৃথিবীর আয়তনের পঞ্চাশ ভাগের এক ভাগ। পৃথিবীতে কারোর ওজন একশত বিশ পাউন্ড হলে চাঁদের পৃষ্ঠে তার ওজন হবে মাত্র বিশ পাউন্ড। চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় সাতাশ দিন। সূর্য ও পৃথিবীর কক্ষপথের সঙ্গে চাঁদ ও পৃথিবীর কক্ষপথ প্রায় পাঁচ ডিগ্রি হেলে থাকে, ফলে রাতের বেলায়ও সূর্যের আলো চাঁদে প্রতিফলত হয়- যা প্রতি ফলিত হয়ে পৃথিবীতে আসে।
'মিস গ্যালাক্সি কি? -ডরিস জিজ্ঞেস করল।'
'অনেক নক্ষত্র মিলে যে বিশাল সমাবেশ তৈরি হয়, তাকেই বলে গ্যালাক্সি। অসংখ্য নক্ষত্র রাজি নিয়ে গ্যালাক্সির সৃষ্টি, সূর্য একটি নক্ষত্র এবং সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণয়মান গ্রহগুলোকে নিয়ে সৌরজগতের সৃষ্টি। আমাদের গ্যালাক্সির নাম মিল্কিওয়ে। আজ থেকে প্রায় এক হাজার তিনশ আশি কোটি বছর আগে এই বিশ্বব্রহ্মান্ড একটি বিন্দুতে ছিল। একটি বিস্ফোরণের পর সেই বিন্দুটি প্রসারিত হয়ে বর্তমান বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি। সেই বিস্ফোরণের নাম হলো বিগব্যাং। ইলেকট্রন প্রোটন ও নিউট্রন তৈরি হয়েছিল ঠিকই কিন্তু এক সেকেন্ডে পরমাণু তৈরি হতে পারছিল না। তাপমাত্রা বেশি থাকায়। তিন লাখ আশি হাজার বছর পর তাপমাত্রা কমলে পরমাণু তৈরি হতে শুরু করল। প্রথম তৈরি হয়েছিল যে পরমাণু সেটি হচ্ছে হাইড্রোজেন। জেনে রেখো, প্রথমে এই বিশ্বব্রহ্মান্ড ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার।'