জায়গাটির নাম শিমুলতলা; কিছুদিন হলো এখানে তামান্নার আব্বু নতুন বাড়ি করেছেন। পুরাতন বাড়ি ভেঙে এখানে এসেছে ওরা। বাড়িটি হাফ বিল্ডিং। দেয়ালে চমৎকার রং। বাড়ির চারপাশে আছে অনেক গাছগাছালি। সারাদিনই মৃদুমন্দ বাতাসে গাছের পাতারা দোল খায়। শুনা যায় পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। পাখিদের কলকাকলীতে সারাক্ষণ মুখরিত থাকে বাড়িটি।
একদিন তামান্না বাড়ির সামনে খেলতে গিয়ে হঠাৎ চিঁচিঁ শব্দ শুনতে পেল। কিন্তু কোথায় থেকে আসছে এই শব্দটি ঠিক বুঝতে পারছিল না। কৌতূহল জন্মালো তামান্নার ছোট্ট মনে। প্রতিটি ডালে চোখ বোলাচ্ছে ও। একটু সামনে যেতেই বুঝতে পারল ওই নিমগাছ থেকেই আসছে চিঁচিঁ শব্দ। তামান্নার কৌতূহল আরও ঘনীভূত হলো। গাছটিতে উঠার চেষ্টা করল ছোট্ট তামান্না। কিন্তু গাছটি কিছুটা বড় এবং মোটা। ফলে সে উঠতে পারল না।
তামান্নার বড় ভাই ইরফান। বারান্দার রুমে বসে বই পড়ছিল। তামান্না এক দৌড়ে চলে গেল তার ভাইয়ার কাছে। গিয়ে কোনো কথা না বলে তার ভাইয়াকে টেনে নিমগাছ তলায় নিয়ে এলো। বলল, ভাইয়া নিমগাছে পাখির বাসা আছে। আমাকে একটা পাখির ছানা পেড়ে দাও না- পিস্নইজ। ইরফান বলল, ছানাদের আমরা নিয়ে এলে ছানাগুলো মরে যেতে পারে। আর তা ছাড়া মা পাখিটি খুবই কষ্ট পাবে। কিন্তু এসব কোনো কথায় শুনতে চায় না তামান্না। পাখির ছানাগুলো চায়-ই চাই তার জন্য। অনেকটা বাধ্য হয়েই গাছে উঠল ইরফান। যেখানে পাখির বাসা তার কাছাকাছি যেতেই ফুড়ুৎ করে মা পাখিটি বেরিয়ে গেল। তামান্না নিচে দাঁড়িয়ে দেখছিল এই দৃশ্য। খুব সহজেই পাখির বাসাটি আবিষ্কার করল ইরফান। দেখল এটি ময়নাপাখির বাসা। দু'টি ছানা বাসায় বসে চিঁচিঁ ডাকছে। দুটোই নিয়ে এলে মা পাখিটি বড্ড কষ্ট পাবে। তাই খুব সাবধানতার সঙ্গে একটি ছানা নিয়ে নিচে নেমে এলো ইরফান।
ছানাটিকে পেয়ে তামান্না খুশিতে মাতোয়ারা। ছানাটিকে একটা ছোট্ট খাঁচার ভেতরে রাখল ও। নিচে কিছু নরম পাতা বিছিয়ে দিল যেন ছানাটির কষ্ট না হয়। খাঁচাটি বারান্দায় এক কোণে ঝুলিয়ে তামান্না চলে গেল আধার সংগ্রহ করতে।
এর পর থেকে প্রতিদিনই সকাল-বিকাল আধার এনে ছানাটিকে পেট ভরে খাওয়ায় ও। তামান্না খুব আদর করে ছানাটিকে খাঁচায় পোষতে লাগল। ছানাটি বড় হতে থাকল।
অল্পদিনেই ছানাটি বড় হয়ে গেল। কথাও শিখে গেল পাখিটি। তামান্নাকে যখন নাম ধরে ডাকে তখন ওর খুব ভলো লাগে। এভাবে ময়না পাখিটির প্রতি তামান্নার বড্ড মায়া জন্মাল। তামান্না এখন আর পাখিটিকে খাঁচায় আঁটকে রাখে না। তবুও পাখিটি এখন ওকে ছেড়ে কোথাও যায় না।
সেদিন বিকালে পাখির সঙ্গে উঠোনে খেলা করছিল তামান্না। আচমকা কোথা থেকে যেন একটা শিয়াল এসে তামান্নার সামনে থেকেই ময়নাপাখিটিকে ধরে নিয়ে গেল। তামান্না একটি লাঠি নিয়ে শেয়ালের পিছু নিল। ততক্ষণে ওর সখের পাখিটিকে নিয়ে জঙ্গলে ঢুকে পড়ল শেয়ালটি। তামান্না কান্নায় ভেঙে পড়ল। এরপর থেকে সব সময় মন খারাপ থাকে তামান্নার।