বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শাপলা কথা

শওকত এয়াকুব
  ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
শাপলা কথা

বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় জন্মভূমি। দেশ সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। এ দেশের জাতীয় ফুল-ফল, পশু-পাখি ও নদ-নদী সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে আমাদের। আমরা সবাই ফুল ভালোবাসি। আমরা সবাই জানি শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। আজ আলোচনা করব জাতীয় ফুল শাপলা নিয়ে। তোমরা কি জানো শাপলা কেন বাংলাদেশের জাতীয় ফুল? আমরা তাই জানার চেষ্টা করব। শাপলা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম ঘুসঢ়যধবধ হড়ঁপযধষর। শাপলা সপুষ্পক উদ্ভিদ পরিবারের এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ। এ পরিবারভুক্ত সব উদ্ভিদই শাপলা নামে পরিচিত। ইংরেজিতে শাপলাকে বলা হয় 'ডধঃবৎ খরষু', ডযরঃব ডধঃবৎ খরষু, ডযরঃব খড়ঃঁং. সংস্কৃতে বলা হয় কুমুদ। বাংলায় নীল শাপলা ফুলকে শালুক বা নীলকমল, লাল শাপলা ফুলকে রক্তকমল বলা হয়। চট্টগ্রামে এই ফুলকে অঁলাফুল বলা হয়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের কিছু জেলায় একে নাইল বা নাল বলা হয়।

শাপলা ফুল ফুটে ভোরে এবং দিনের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঁপড়ি বুজে যায়। সরাসরি কান্ড ও মূলের সঙ্গে যুক্ত থাকে। শাপলার পাতা আর ফুলের কান্ড বা ডাটি বা পুষ্পদন্ড পানির নিচে মূলের সঙ্গে যুক্ত থাকে। আর এই মূল যুক্ত থাকে মাটির সঙ্গে এবং পাতা পানির উপর ভেসে থাকে। মূল থেকেই নতুন পাতার জন্ম নেয়। পাতাগুলো গোল এবং সবুজ রঙের হয়। কিন্তু নিচের দিকে হয় কালো রং। ভাসমান পাতাগুলোর চারদিক ধারালো হয়। পাতার দৈর্ঘ্য ২০-২৩ সেন্টিমিটার এবং এদের ব্যাপ্তি প্রায় ০.৯-১.৮ মিটার। শাপলা ফুল নানা রঙের দেখা যায়। যেমন গোলাপি, সাদা, নীল, বেগুনি ইত্যাদি। এই ফুলে ৪-৫টি বৃতি থাকে ও ১৩-১৫টি পাপড়ি থাকে। ফুলগুলো দেখতে তারার মত মনে হয়। কাপের সমান বৃতিগুলো ১১-১৪ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ফুলগুলো প্রায় পাঁচ থেকে সাত দিন পানির উপর ভেসে থাকে। প্রায় বছরের সব সময় শাপলা ফুটতে দেখা যায় তবে বর্ষা ও শরৎ এই উদ্ভিদ জন্মানোর শ্রেষ্ঠ সময়। এই উদ্ভিদ প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে এই ফুল পুকুর ও বাগান সাজাতে খুব জনপ্রিয়। সাদা শাপলা বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশে ফুটতে দেখা যায়। যেমন ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, ইয়েমেন, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার প্রভৃতি দেশের পুকুর ও হ্রদে দেখা যায়। এই ফুল পাপুয়া নিউগিনি এবং অস্ট্রেলিয়ার কিছু এলাকায়ও দেখা যায়। এই ফুল যেমন দেখা যায় চাষের জমিতে, তেমনই হয় বন্য এলাকায়। কাটা ধান খেতের জমে থাকা অল্প পানিতে এই ফুল ফুটে থাকতে দেখা যায়। বিশ্বে ৫০ প্রজাতির শাপলা আছে। কিন্তু বাংলাদেশে মাত্র ২ প্রজাতির শাপলা জন্মে। সাদা ও লাল রঙের শাপলা। একটা রক্তকমল প্রজাতির আর অন্যটা হলো শালুক প্রজাতির।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তাই সব জলাশয়ে শাপলা দেখা যায়। সবুজ পাতায় সাদা শাপলা দেখতে ভালো লাগে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে শাপলা ফুটে বলেই কি শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল? নাকি দেশের আনাচকানাচে নদী, খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড় ও পুকুর-ডোবা সব জায়গায় দেখি শুধু শাপলা আর শাপলা। অন্য ফুল তো এত হতে দেখি না। এর জন্যই মনে হয় সাদা শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল? এমন অনেক প্রশ্ন নিশ্চয় মনে উঁকি দেয়। শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল হওয়ার আসল কারণ জেনে নিন। সাদা শাপলা হলো বাংলাদেশের জনগণের প্রতীক। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, শাপলার সাদা রং আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে আর পাপড়িগুলোর মতো দেশের মানুষকে একত্রিত করে। তাই শাপলা ফুল অনেক রঙের হলেও কেবল সাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশের পয়সা, টাকা ও দলিলপত্রে জাতীয় ফুল শাপলা বা এর জলছাপ আঁকা থাকে। শাপলা কিন্তু ফুল শ্রীলংকারও জাতীয় ফুল। শ্রীলংকায় এই ফুল ঘরষ গধহবষ নীল মাহানেল নামে পরিচিত।

শাপলা ফুলের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক মানুষের ধারণা নেই। মানব জীবনে শাপলা ফুলের গুরুত্ব অপরিসীম। সাধারণত শাপলা ফুলের ডাটা অনেক মানুষ রান্না করে খেয়ে থাকে। শাপলা ফুলের ডাটায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। এই ফুলের ডাটায় অনেক পুষ্টিগুণ থাকার কারণে, মানুষের শরীরের জন্য এই ফুলের ডাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। বিভিন্ন রোগের ঔষধি হিসেবে শাপলা ফুল বর্তমান সময়ে ব্যবহার করতে দেখা গেছে অনেক মানুষকে। সাধারণত শাপলা ফুল খেলে মানুষের রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ হয় এবং আমাশয় রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বর্তমান সময়ে এই ফুল বিলুপ্তির মুখে আমাদের উচিত এই ফুল সংরক্ষণ করা। দৈনন্দিন মানবজীবনে শাপলা ফুলের অবদান রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে